ইউজিসি বাতিল করে হায়ার এডুকেশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া গঠন করার জন্য কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী খসড়া আইন রচনা করে সকলের মতামত চেয়েছেন৷ তার ভিত্তিতে এসইউসিআই(সি) সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ তাঁর সুচিন্তিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন৷
কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেছেন, সংসদীয় আইনের বলে ১৯৫৬ সালে স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে গঠিত হয়েছিল ইউজিসি৷ দেশের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মান নির্ধারণ, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, আর্থিক অনুদান প্রদান প্রভৃতি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তার উপর৷ সুদীর্ঘ ৫২ বছরের ঐতিহ্যসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ইউজিসি–কে অবলুপ্ত করে হায়ার এডুকেশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া গঠন করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমগ্র উচ্চ শিক্ষার উপর আরও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে৷ শিক্ষার সংকোচন, বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে শিক্ষার গৈরিকীকরণের উদ্দেশ্যে ক্রমাগত সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইউজিসি–কে বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরে পরিণত করা হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু তার পরিবর্তে নতুন আইনের মাধ্যমে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত করার ব্যবস্থা চলছে সেই কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করার কোনও অধিকার থাকবে না৷ কারণ এই নতুন আইনের বলে কেন্দ্রীয় সরকার কমিশনের সদস্য মনোনয়ন করবে শিক্ষাবিদদের পরিবর্তে মূলত ব্যুরোক্র্যাটদের মধ্য থেকে৷ তার উপর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ সকল সদস্যকে পদচ্যূত করারও অধিকার থাকবে সরকারের হাতে যদি তাঁদের কাজ সরকারের অপছন্দ হয়৷ অথচ চলতি আইন কেন্দ্রীয় সরকারকে তেমন ক্ষমতা দেয়নি৷
উপরন্তু, এই আইনের ধারা অনুযায়ী কমিশনের একটি ‘উপদেষ্টা সংস্থা’ থাকবে, যা বর্তমান ইউজিসিতে নেই এবং যার চেয়ারম্যান হবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নিজে৷ অর্থাৎ সমস্ত দিক দিয়ে এই কমিশন হবে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রাধীন৷
এই কমিশনের হাতে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া, শিক্ষা ও গবেষণার মান যাচাই করা প্রভৃতি থাকলেও আর্থিক অনুদান প্রদানের কোনও ক্ষমতা থাকবে না– যা বর্তাবে সরকারের উপর৷ ফলে আর্থিক অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার তথা শাসক দলের ইচ্ছা–নিচ্ছাই প্রাধান্য পাবে৷ উপরন্তু, এই নতুন আইনের বলে সরকার মানের নিম্নতার অজুহাতে যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে পারবে৷ ফলে এই আইনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সরকারের নাক গলানোর অফুরন্ত সুযোগ থাকবে৷ এর ফলে এই কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষানীতি যা বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের পরিপন্থী তাকেই কার্যকরী করবে৷
এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি– ইউ জি সি বাতিলের খসড়া আইন অবিলম্বে প্রত্যাহৃত হোক এবং শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষাবিদ সহ অন্যান্যদের মতামত নিয়ে এমন একটা আবহ সৃষ্টি করা হোক যাতে ইউজিসি সমাজের পিছিয়ে পড়া ও আর্থিকভাবে দুর্বল সকল পরিবারের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ, বৈজ্ঞানিক ও গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রসারে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে৷
(৭০ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা ২০ জুলাই, ২০১৮)