কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা ও শিক্ষার ভিত্তিতে বাংলাদেশে একটি যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার সংগ্রামে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ওই দেশের সমাজের কত গভীরে পৌঁছেছেন এবং বিভিন্ন স্তরের কত মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছেন, তার কিছু পরিচয় এবার তাঁর মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তারই কিছু অংশ আমরা এখানে প্রকাশ করলাম।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীঃ
মেরুদণ্ড সবারই থাকে, থাকতে হয়; কিন্তু শক্ত মেরুদণ্ড বেশ বিরল। আমাদের এই কমরেডের মেরুদণ্ড ছিল বিস্ময়কর রকমের দৃঢ়। কোনও অবস্থাতেই তিনি নড়তেন না। সঙ্কটে থাকতেন ধীর ও স্থির। … বস্তুত সংস্কৃতিতে ছিল তাঁর বিশেষ অবস্থান। তাঁর নিজের সংস্কৃতিতে ছিল পরিচ্ছন্ন রুচি ও বৈজ্ঞানিকতা। সংস্কৃতিকে উন্নত করতে না পারলে যে সামাজিক বিপ্লব ঘটবে না, এটা তাঁর দল জানত, হায়দার ভাইও জানতেন বিশেষভাবে। আর ছিল নৈতিকতার বোধ। রাজনৈতিক নীতির প্রশ্নে যেমন অবিচল ছিলেন, তেমনি ব্যক্তিগত নৈতিকতার ব্যাপারেও ছিলেন অত্যন্ত শক্ত। শক্ত হতে তিনি অন্যদেরও বলতেন। নৈতিক মেরুদণ্ড যে দৈহিক মেরুদণ্ডের চাইতেও অধিক কার্যকর এটা তাঁকে দেখে নতুন করে বুঝতাম। মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর ভেতর আত্মপ্রকাশের কোনও আগ্রহ ছিল না। নিজেকে তিনি প্রচ্ছন্ন রাখতে চাইতেন। সেটাও ছিল তাঁর সংস্কৃতি ও নৈতিকতার অংশ। ভাবতেন তিনি জীবিত ও জীবন্ত থাকবেন তাঁর কাজের মধ্যে। কাজই হবে তাঁর পরিচয়। কাজে তাঁর বিরাম ছিল না। কিন্তু আবার অস্থিরতাও দেখিনি। রাজনীতিকদের মধ্যে তাঁর মতো অঙ্গীকারবদ্ধ অথচ মৃদুভাষী মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। যুক্তি ছাড়া কথা বলতেন না, অথচ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ছিলেন অনড়।
মহিউদ্দিন আহমেদঃ সবচেয়ে আর্টিকুলেট, সজ্জন, সত্যবাদী ও নির্লোভ মানুষ। তাঁকে ধারণ করার ক্ষমতা ছিল না এই দলগুলোর।
মাহমুদুর রহমান মান্নাঃ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাজনীতি করে যান। ব্যক্তিজীবনে প্রতিষ্ঠা পাননি। রাজনৈতিক জীবনে পরিচিতি, জনপ্রিয়তা, প্রতিষ্ঠাও পাননি। তার চেয়ে বড় কথা, এ সবের কোনও কিছুই তাকে কখনও স্পর্শ করেনি। একেবারে নির্মোহ, নির্লোভ ছিলেন তিনি, বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা বিরল। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
খান আক্তার আলিমঃ তাঁর ব্যক্তিত্ব, পাণ্ডিত্য, স্টাইল, বাচনভঙ্গি আর পৌরুষ ছিল মুক্ত করার মতো। … ধ্রুপদী মার্কসীয় সাহিত্য ছাড়াও ক্রীড়া বা রাগসঙ্গীত, প্রসঙ্গ হতে প্রসঙ্গান্তরে তাঁর বিচরণকে মনে হত যেন জীবন্ত এক রূপকথার ভ্রমণ। বলতে দ্বিধা নেই, ধ্রুপদী মার্কসীয় সাহিত্যের বাইরে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারে হায়দার ভাইয়ের বিচরণ ছিল অতি সহজ, সাবলীল, প্রাণবন্ত আর আনন্দময়। … এই যে লোভকে জয় করার, ত্যাগ করতে শেখার, ভালোকে আঁকড়ে ধরার, বৈষম্যহীনতাকে ভালবাসার শক্তি আর সাহস, এতে কি আপনার অবদান নেই? এখানেই আপনার নীরব উপস্থিতি। … আমরা যারা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছি, তারা বিরল ভাগ্যবানদের একজন মনে করি। হায়দার ভাই, আপনাকে সমালোচনার সাহস করি, কিন্তু ভালবাসি তার চাইতে অনেক অনেক বেশি। আপনি যা দিয়েছেন তার ঋণ তো শোধবার নয়। আপনি আমাদের হৃদয়ে উজ্জ্বল থাকবেন হায়দার ভাই।
নাসিরুদ্দিন প্রিন্সঃ হায়দার ভাই অনেকটা ধ্রুপদী সঙ্গীতের মতো। আলাপের সময়টাতে তার তেজ বোঝা যায় না। কিন্তু রাগের পর্যায়ে তা থেকে আর বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় না। আচ্ছন্ন করে ফেলে শরীর মন। সেই থেকে প্রেমে পড়ে যাই হায়দার ভাইয়ের। … বিপ্লবই যে জীবন এবং এই বিপ্লবী জীবনই যে মর্যাদার জীবন, অন্য সব কিছু দাসত্ব, তা সেই সময়ের তরুণ মনে প্রগাঢ়ভাবে গেঁথে দিয়েছিলেন হায়দার ভাই।
আসরাফুল হক মুকুলঃ হায়দার ভাই আমাদের জীবনবোধকে পাল্টে দিয়েছেন, এমনভাবে পাল্টে দেওয়ার মানুষ আজ নেই বললেই চলে।
বেলাল চৌধুরীঃ হায়দার ভাই আমাদের চিন্তাজগতকে প্রচণ্ড শক্তিতে নাড়া দিয়েছিলেন, ভীষণ আলোড়িত, আন্দোলিত করেছিলেন। পাল্টে দিয়েছিলেন আমাদের প্রচলিত জীবনবোধ।
মশিউর রহমানঃ আমি তাঁর মতো এমন প্রবল তাড়না আর বেদনা নিয়ে এত স্পষ্টভাবে আর কাউকে পুঁজির শৃঙ্খল উৎখাতের স্বপ্ন প্রচার করতে দেখিনি। আমার সময়ে তত্ত্বের শরীরে এতটা জীবন হায়দার ভাই ছাড়া আর কেউ সঞ্চার করতে পারতেন বলে আমি জানি না। … তিনি বলেছেন। অনেক মহৎ কথা বলেছেন। … যাকে যতটুকু বলেছেন, আমি দেখেছি সে সেই ততটুকুকেই কী প্রবল ভালবাসা দিয়ে হৃদয়ে নিবিড়তম জায়গায় স্থান দেয়। মণিমুক্তার মতো আগলে রাখে। অন্ধকারে জ্বেলে রাখে।
অজয় কুমারঃ যিনি শেখান না, শেখার আকাঙ্খা তৈরি করে পথ দেখিয়ে যান।
সত্যজিৎ বিশ্বাসঃ রাজনীতি যে শুধু মিটিং-মিছিল, সভাসমাবেশ নয়, সামগ্রিক এক জীবনবোধ তা বুঝতে শিখেছিলাম কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর সান্নিধ্যে এসে।
জহিরুল ইসলামঃ হায়দার ভাই প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন। হয়তো বলতেন, আমি আর এমন কী করেছি। শিবদাস ঘোষের উপর ছবি বানাও। … নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য জান বাজি রেখে লড়েছেন। জাসদ, বাসদের মতো দুটো বড় পার্টির রাজনৈতিক থিসিস, রণনীতি, রণকৌশল নির্ধারণে তার বড় ভূমিকা ছিল।
মাহমুদুল হক আরিফঃ মস্কো বা পিকিংপন্থী না হয়েও যে বাম আন্দোলনের গতিপথ নির্দেশিত করা যায় বা দ্বন্দ্বতত্ত্বের ভিত্তিতে যে নির্মোহ বিচারধারা গড়ে তোলা সম্ভব সেই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিলেন কমরেড হায়দার চৌধুরী। কমরেড শিবদাস ঘোষ এই বিচারধারাটি দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁকে, এটাই তাঁর বড় হাতিয়ার। চিন্তাপদ্ধতির হাতিয়ার। বাম আন্দোলনে চিন্তার জায়গাটি তিনি তাই বারবার পরিষ্কার করেছেন। জটিল মনস্তাত্ত্বিক আলোচনা হোক, আর সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির তাত্ত্বিক আলোচনাই হোক, আলোচনা শেষে তিনি যাঁকে পুরো কৃতিত্ব দিতেন তিনি হলেন কমরেড শিবদাস ঘোষ। বারবার তিনি শিবদাস ঘোষের নামটি নিতেন। মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আপনার ঋণ কি শোধ হয়েছে, এই চিন্তায় উদ্ভাসিত কিছু তরুণ এখনও এই কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনার গড়া পার্টি যেদিন এই দেশের নিপীড়িত মানুষকে বৈষম্যমুক্তির দিশা দেবে, হয়তো সেই দিন আপনার ঋণ শোধ হবে। কিছু কিছু সঙ্গীত থাকে ধ্রুপদী, সে সুর যুগের পর যুগ হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। কিছু কিছু নদী থাকে প্রধান নদী, জলকে বয়ে নিয়ে যায় সমুদ্রের মোহনায়। কিছু কিছু কবিতা থাকে কণ্ঠে কণ্ঠে বিদ্রোহ করে, বিদ্রোহী কবিতায়। কিছু কিছু মানুষও কি থাকে যিনি ধ্রুপদী মানুষ বা প্রধান নদী? থাকে বৈকি। সফেদ পোশাকে টানটান শিরদাড়া উঁচু করে হেঁটে যাওয়া মানুষ কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী নিমেষে পাল্টে দিতে পারেন প্রচলিত ধ্যানধ্যারণা, তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারেন পুরাতন জীবনবোধ।
সুজয় সাম্যঃ হায়দার ভাই আমার দেখা বামপন্থা রাজনীতির সবচেয়ে দৃঢ়চেতা মানুষদের একজন। ওনার আর একটা বিষয় সিগনিফিক্যান্ট। প্রবল মেল ডমিনেটিং সমাজে অনেক পুরুষকে উনি মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছেন। অনেক পুরুষ আপ্রাণ চেষ্টা করেছে ডমিনেটিং পুরুষ হওয়ার বদলে মানবিক একজন মানুষ হয়ে ওঠার জন্য। ফলে ওনার সংগঠনে নারীরা অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করে। যেটা আমি সমাজের আর কোনও অংশে দেখিনি। নৈতিকতার ও মূল্যবোধের প্রশ্নটাকে উনি অসম্ভব গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনতে পেরেছিলেন।
প্রেমানন্দ দাসঃ হায়দার ভাই বলতেন উন্নত চরিত্র ও মূল্যবোধ অর্জন করতে না পারলে বিপ্লবী আন্দোলন কোনও দিন সফল হবে না। শিবদাস ঘোষের সেই শিক্ষার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে হায়দার ভাই আমাদের উন্নত মূল্যবোধ অর্জনে অনুপ্রাণিত করতেন। আজ যতটুকু নৈতিকবোধ অন্তরে ধারণ করি, তার শিক্ষাটুকু এই মানুষটার কাছ থেকে পেয়েছি। উন্নত চরিত্র-মূল্যবোধ কোনওটাই আজও অর্জন করতে পারিনি। তবু মানুষ যতটুকু আজ হতে পেরেছি, তা এই মানুষটার সংস্পর্শ পেয়েছি বলে। আমার জীবনে এর চেয়েও উন্নত মানুষ আমি আর দেখিনি।
অনীক ধরঃ হায়দার ভাই, আপনাকে একদিন কথা দিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত লড়ব। রাখিনি। হায়দার ভাই আপনার কাছে ক্ষমা চাই। যেটুকু গড়ে দিয়েছিলেন ভেতরে, মননে সেটা এখনও মানুষ করে রেখেছে আমাকে।
ফেসবুক ছদ্মনাম আনসার্টেনটি প্রিন্সিপলঃ একবার প্রশ্ন করলাম বিপ্লবী মানুষের জীবনে প্রেম ভালবাসার ভূমিকা কী? তিনি স্বভাবসুলভ ভাবে বলেছিলেন, এই ছেলে বলে কী গো? ভালবাসা হল বিপ্লবের এনার্জি। বিপ্লব করতে এনার্জি লাগবে না? মানুষের প্রতি ভালবাসা না থাকলে তুমি কেন বিপ্লব করবে? কেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে? … ভালবাসা ব্যাপারটাকে ব্যক্তির আবেগ অনুভূতি হিসাবে বুঝতাম আগে, কিন্তু হায়দার ভাইয়ের আলোচনার পর থেকে টের পেলাম ভালবাসা অনেক বড় একটা শক্তি, ভালবাসাকে মানুষের কল্যাণের অনুকূলে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম আমি। ভালবাসা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গিটাই আমূল পাল্টে দিল হায়দার ভাই। … একদিন সঙ্গীত নিয়েই শুধু আলোচনা হল। সঙ্গীত নিয়ে এত কথা থাকতে পারে, সঙ্গীতের সুর আর লিরিক্স নিয়ে এত যৌক্তিক আলোচনা হতে পারে আমার ধারণা ছিল না।
নীল আরিফ মাহমুদঃ কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন, তাঁর আলোয় আলোকিত সকল মানুষের মনে। তাঁর নীতি, আদর্শ, সত্য প্রতিষ্ঠার এই লড়াইয়ে তিনি আছেন, তিনি থাকবেন।
কল্লোল দাশ বনিঃ কিউবাতে ছিলেন চে গুয়েভারা, আমাদের ছিলেন হায়দার ভাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তাঁর নেতার নির্দেশে বাংলাদেশে বৈষম্যহীন শোষণমুক্তির সমাজবিপ্লব করতে তিনি এসেছিলেন ভারত থেকে এক কাপড়ে খালি হাতে। … ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কখনওই কিছু করেননি, মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের জন্য আজীবন বিপ্লবী অকৃতদার এই ব্যক্তি তার সমগ্র জীবন বিলীন করে দিয়ে গেছেন। বাংলার জমিনে এমন জ্ঞানী, বিদগ্ধ, সর্বস্বত্যাগী অগ্নিপুরুষ আর একজন জন্মাবে কি না সন্দেহ হয়।
কাজি শফিকুল ইসলাম রাব্বিঃ হায়দার ভাই দেহত্যাগ করেছে, আমি সহ হাজার হাজার ছেলেমেয়ে যারা গর্বের সাথে হায়দার ভাইয়ের গল্প করেছি একবার হলেও, তাদের মাঝেই হায়দার ভাই বেঁচে থাকবে। যে দালান তৈরি করতে আমরা ইট রেখেছি, রাখছি, সেই দালান নির্মাণের পর আমি সহ অনেক শ্রমিকের নাম থাকবে না। কিন্তু দালানের কিছুটা অংশ জুড়ে হায়দার ভাই-এর নাম থাকবে।
রহিমা আক্তারঃ বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ইতিহাস তো হায়দার ভাইয়ের জীবন সংগ্রাম ছাড়া লেখা হবে না। পরিবর্তিত সমাজ সযতনে লিখবে হায়দার ভাইয়ের জীবনগাথা। আমি যখন বুড়ো হব, তখনও পিছন ফিরে তাকিয়ে বলব কী অসম্ভব কাজ! কী দুর্ধর্ষ সাহস! কী অমিয় তেজ! নিজ ভাবনায় অনড়। নিজ পথে অবিচল। প্রচলিত চিন্তাকে তছনছ করে দেওয়ার ভীষণ রকমের অভিযান।
মাসুদা আক্তারঃ পৃথিবীর বুকে মানুষের সবচেয়ে বড় জিনিস হল মানুষের বিবেক মনুষ্যত্ব জাগানো, সেটা আপনি হাজার হাজার মানুষের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন, মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে শিখিয়েছেন, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আপনার আদর্শে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, তাদের মাঝে আপনি আশার আলো দেখিয়েছেন, সমাজে কীভাবে মানুষ হিসাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয় তা আপনি শিখিয়েছেন।
লিপন আহমেদঃ হায়দার ভাই, আপনাকে একদিন কথা দিয়েছিলাম, শেষ পর্যন্ত লড়ব। রাখিনি। হায়দার ভাই, আপনার কাছে ক্ষমা চাই। যেটুকু গড়ে দিয়েছিলেন ভেতরে মননে সেটা এখনও মানুষ করে রেখেছে আমাকে।
অপু কুমার দাশঃ পৃথিবীতে আর কোনও অর্জন না থাক এমন বটবৃক্ষের ছায়া পেয়েছিলাম। কোনও একদিন হয়ত গল্পে বলতে পারব এত বড় মানুষের এত মহৎ হাত ধরে হেঁটেছিলাম কিছুদিন।
জহিরুল ইসলামঃ বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলনের প্রকৃত নক্ষত্র কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আর নেই। যার শিক্ষায় আজীবন বিপ্লবী, সৎ মানুষ হতে চেয়েছিলাম। আজীবন বিপ্লবী হওয়ার সংগ্রাম করতে পারিনি। কিন্তু আপনার সংগ্রাম, জীবনবোধ ও ইস্পাত-কঠোর ব্যক্তিত্ব এখনও সৎ থাকার অনুপ্রেরণা জোগায়।
আলমগীর কবিরঃ তাঁর সমগ্র জীবন কাটিয়ে দিলেন নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে, শিল্প-সাহিত্য-দর্শন-সঙ্গীত-চিত্রকলা-খেলাধূলা এমনকি বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে তাঁর সাথে আলাপচারিতায় যে কাউকে মগ্ন করে রাখার মতো মানুষ ছিলেন তিনি। অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও যে জীবনবোধের কতটা গভীরে মানুষ পৌঁছাতে পারে, মুবিনুল হায়দার চৌধুরীকে যারা নিকট থেকে দেখেছেন, তারা বুঝতে পারবেন। ব্যক্তিগত কোনও সম্পদই তিনি রেখে যাননি, সমাজতান্ত্রিক আদর্শে দীক্ষিত হয়ে তিনি তাঁর সমগ্র জীবনকে ব্যাপ্ত করে এক নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এ দেশের খেটে-খাওয়া মানুষের চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে একটি সঠিক আদর্শবান বিপ্লবী দল গড়ে তোলার জন্য।
সুব্রত দেবনাথঃ রাজনৈতিক জীবনে যে মানুষটির সংস্পর্শ চিন্তার জগতকে নাড়া দিয়েছিল, যার দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান অভিভূত করেছিল, বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক ও এই দেশের ইতিহাসের বামপন্থী আন্দোলনের পুরোধা কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আজ রাত ১০-৫০ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতিতে এক বিচক্ষণ, প্রজ্ঞাবান নেতার মহাপ্রয়াণ হল। বাম রাজনীতিতে তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি হিসাবেই বিবেচিত হবে।