সংবাদে প্রকাশ, ২০ ডিসেম্বর বণিকসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ‘হাততালি কম কেন’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ তবে ক্ষোভের কারণ এনআরসি ও সিএএ চালুর জন্য নয়, যা সারা দেশের নাগরিকরা দেখাচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের কারণ তাঁর বক্তৃতা শোনার পর জোরে জোরে হাততালি দেননি ভারতের অন্যতম বৃহৎ বণিকসভা অ্যাসোচেমের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিরা৷ অবশ্য কেন শিল্পপতিদের বেশি হাততালি দেওয়া উচিত, তাও তিনি প্রাঞ্জল ভাবে বুঝিয়েছেন৷ সাবাস, এই না হলে প্রধানমন্ত্রী! একমাত্র তাঁদের শাসন কালেই কর্পোরেট ট্যাক্স সর্বনিম্ন, এই সরকার সর্বক্ষেত্রেই সফল এবং আরও বলেছেন, তাঁরা কর্পোরেটের বন্ধু আবার ব্যবসায়ীদেরও সাহায্যকারী৷ যাদের জন্য এত কিছু করছেন তারাই তাঁকে বুঝছেন না?
সরকার সর্বক্ষেত্রে কতটা সফল সেই বিষয়ে আসা যাক৷ ক্ষমতায় আসার আগে যে সব প্রতিশ্রুতি জনগণকে প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন সেগুলি স্মরণ করি৷ বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছভারত, মূল্যবৃদ্ধি হবে না, জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে৷ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় বসেই ডিমানিটাইজেশন করে বলেছিলেন, কালো টাকা উদ্ধার হবে, জাল নোট ছাপা বন্ধ হবে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ হবে৷ জনধন যোজনা অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে৷ এর কোনওটিই হয়নি৷ নতুন ভারত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়া, আচ্ছে দিন স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত৷ ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাস বিনামূল্যে, বিনামূল্যে চিকিৎসার হেলথ কার্ড বাস্তবে সবই টাকা দিয়েই নিতে হচ্ছে, ভরতুকি তলানিতে গেছে৷ গ্যাসের দাম প্রচুর বেড়েছে৷ সাধারণ মানুষ যাঁরা ভোটের আগে প্রচুর হাততালি দিয়েছিলেন তাঁরা দেখছেন, এগুলি সবই ‘জুমলা’৷
২০১৯–এ ক্ষমতায় বসেই তাদের ঝুলি থেকে বেড়াল বের হচ্ছে৷ একদিকে তীব্র আর্থিক আক্রমণ, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, দারিদ্র অন্যদিকে ৩৭০ ধারা বাতিল, রামমন্দির নির্মাণ, এনআরসি–সিএএ চালু, বিমান–রেল–ডাক–তার সবকিছু বেসরকারিকরণের ছক যেগুলি পর্দার আড়ালে ছিল, এখন দাঁত ও নখ বের করছে৷ শ্রমিক কৃষকের স্বার্থের কথা বলতে বলতেই তাদের সর্বস্বান্ত করছে৷ জিএসটি থেকে আদায়ীকৃত অর্থ লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেটদের ছাড় দিচ্ছে৷ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বিজয় মাল্য–ললিত মোদি–নীরব মোদি–মেহুল চোক্সীদের দেশের বাইরে যেতে সাহায্য করেছে৷ ব্যাঙ্কের ঘাটতি মেটাতে সরকারিভাবে আদায়ীকৃত টাকা জনগণের ঘাড় মটকে উপঢৌকন দিচ্ছে৷ এমনকী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারেও হাত দিয়েছে৷ শিল্পপতিদের ঋণ মকুব করছে৷ ফলে ভোট মিটতে মোদি সাহেব এখন জনগণকে ছেড়ে শিল্পপতিদের হাততালিরই প্রত্যাশী৷ কম পড়লে রাগ তো করবেনই!
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া