
১৬তম ও ১৭তম লোকসভাতে পাঁচবার বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ (সংশোধনী) বিল উত্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু পাশ করাতে পারেনি সরকার। এটা বিদ্যুৎগ্রাহক আন্দোলনের একটা বিরাট জয়। ৫ মার্চ দিল্লির শাহ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় বিদ্যুৎ গ্রাহক কনভেনশনে এ কথা বলেন, উত্তরপ্রদেশ পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশনের চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র দুবে। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে কম দামে বিদ্যুৎ কিনে অত্যন্ত বেশি এনার্জি চার্জ, লোডভিত্তিক পাওয়ার পারচেজ অ্যাডজাস্টমেন্ট সারচার্জ, পেনশন সারচার্জ, কোথাও অন্যান্য নানা চার্জ বা সারচার্জ বসিয়ে দিল্লিতে টাটা পাওয়ার ও রিলায়েন্স পাওয়ার গ্রাহকদের বিক্রি করছে প্রতি ইউনিট গড়ে ১০ টাকায়, যদিও তারা কিনছে ৩.৭০ টাকা প্রতি ইউনিট দরে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ এখন রাজনীতির বিষয় হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের আগে কোন দল কত ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে কোন গ্রাহককে দেবে, তার প্রতিযোগিতা চলছে। বিদ্যুৎ শিল্পের বেসরকারিকরণ, প্রি-পেড স্মার্ট মিটার ও জনবিরোধী নয়া বিদ্যুৎ বিল প্রতিরোধের দাবিতে ৪ মার্চ অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সহস্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহকের পার্লামেন্ট অভিযান সংগঠিত হয়েছে। দিল্লির যন্তর-মন্তরে বিক্ষোভ অবস্থানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি স্বপন ঘোষ।
দেশের ২৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আসা গ্রাহকদের সামনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কে ভেনুগোপাল ভাট, কার্যকরী সভাপতি সমর সিনহা, আসামের গ্রাহক-আন্দোলনের নেতা অজয় আচার্য, পশ্চিমবঙ্গের সুব্রত বিশ্বাস, ওড়িশার জয়সেন মেহের, বিহারের ললিত ঘোষ, দিল্লির রমেশ পরাশর ও ভাস্করানন্দ, হরিয়ানার মেহের বানজের, কর্নাটকের সোমশেখর, তামিলনাড়ুর অনাভরথন, পুদুচেরির শিবকুমার, মধ্যপ্রদেশের রচনা আগরওয়াল, ত্রিপুরার সঞ্জয় চৌধুরী প্রমুখ গ্রাহক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। কনভেনশন থেকে আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল সারা ভারত প্রতিবাদ সপ্তাহ এবং ১ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন গ্রাহকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।
স্মার্ট মিটার ও বিদ্যুতের বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে গ্রাহকদের পাশাপাশি বিদ্যুৎ শিল্পের কর্মচারীরাও লড়ছেন। এই কনভেনশন ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর কমিটি অফ ইলেকট্রিসিটি এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স-এর আগামী ২৬ জুনের প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার এবং পাওয়ার সেক্টরের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘটে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের প্রাক্তন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশনের পেট্রন কে অশোক রাও দুই ভারতের কথা বলেন। একটি ভারত যারা বিদ্যুতের দাম দিতে পারে, আর একটা ভারত যারা বিদ্যুতের দাম দিতে পারে না। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সার্ভে রিপোর্ট তুলে ধরে স্মার্ট মিটারের অকার্যকরিতার দিকগুলো ব্যাখ্যা করে দেখান তিনি।
অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অন্যতম উপদেষ্টা ও আসাম বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডের প্রাক্তন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিমল দাস বলেন, স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা পাওয়ার জন্য আজ মানুষকে আন্দোলন করতে হচ্ছে এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
তামিলনাড়ু ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার ও তামিলনাড়ু পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার সোসাইটির সভাপতি এস গান্ধী বলেন, স্মার্ট মিটার সার্ভার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। এর ফলে কর্মচারীদের কাজ চলে যাবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ কয়লা, গ্যাস, তেল, জল, সূর্যালোক থেকে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয় তা নিয়ে ব্যবসা করে মুনাফা করার জন্য বিদ্যুতের আইন করা হচ্ছে। শিল্পপতিরা শুধুমাত্র শহর এলাকাতেই বিদ্যুৎ বণ্টন করতে চায়, গ্রামীণ এলাকাতে নয়। স্মার্ট মিটার খারাপ হয়ে গেলে বা বহু টাকা কেটে নিলে কোনও ডিভিশনাল ম্যানেজার বা রিজিওনাল ম্যানেজার কেউ হস্তক্ষেপ করবেন না, কারণ এই মিটার ভীষণভাবে ‘স্মার্ট’। ভুল হচ্ছে বুঝলেও গ্রাহকদের কিছু করার থাকবে না। কারণ এটা প্রিপেড। অর্থাৎ এর টাকা আগেই জমা দিতে হয়। এই মিটার সরকারি বণ্টন কোম্পানি, সাধারণ গ্রাহক, কারও স্বার্থরক্ষা করবে না। এটা একমাত্র একচেটিয়া ব্যবসাদারদের বিপুল মুনাফা দেবে। আর তার মাশুল গুণতে সাধারণ হবে মানুষকে। ডিভিসি-র প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ কে জৈন তাঁর চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গ্রাহক ও কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনি লড়াইও দরকার। কনভেনশনের সভাপতি স্বপন ঘোষ আঞ্চলিক স্তরে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলে আন্দোলন তীব্র করার আহ্বান জানান।