১৫ আগস্ট দিনটি ভারতবাসীর আবেগের তন্ত্রীতে আজও ঢেউ তোলে। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টের স্বপ্ন আজ কোথায় হারিয়ে গেছে! তবু আজও নানা অনুষ্ঠান হয়, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ মিশে থাকে তার সাথে। ক্ষমতার মসনদের চারপাশে ঘোরাফেরা করা নেতারাও সমারোহে মাতেন, ভাষণ দেন। জনগণ শোনে, আর ভাবে এ কেমন স্বাধীন ভারত– যেখানে ৭৫ বছর পরেও স্বাধীনতা দিবস পালনের অছিলায় কেউ কাঙালি ভোজনের ডাক দিলে হামলে পড়ে শত শত ক্ষুধার্ত মানুষ! এই বছর ৭৫তম পালনের জন্য জনমনের আবেগকে পুঁজি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নেমে পড়েছেন দেশপ্রেমের ডালি নিয়ে।
৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সাম্প্রতিক ভারতকে একটু দেখা যাক– দৃশ্য একঃ হাজার হাজার মানুষ হেঁটে চলেছে, শত শত মাইল। কোনও মা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই ক্ষণিক বিরতি নিয়ে জন্ম দেন এ দেশের ভাবী এক ‘নাগরিক’কে। তারপর আবার হেঁটে চলেন তিনি। এদেরই কেউ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তিতে রেল লাইনের উপরই ঘুমে ঢলে পড়ে, দেহগুলো পিষে দিয়ে যায় উন্নয়নের শকট। রেল স্টেশনেই চিরঘুমে নিথর হয়ে যাওয়া মায়ের আঁচল টেনে জাগাবার চেষ্টা করে চলে অবোধ শিশু সন্তান। রাস্তাতেই প্রাণ হারান হাজারের বেশি।
দৃশ্য দুইঃ করোনা মহামারিতে একটা হাসপাতালের বেড আর সামান্য অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে করতে শেষ হয়ে যায় কয়েক হাজার প্রাণ। প্রাণ বাঁচানোর বদলে প্রাণহানির খবর চাপা দিতেই সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেশের প্রধান নদী গঙ্গা বয়ে নিয়ে চলে হাজার হাজার মানুষের লাশ। রাজধানী দিল্লির আকাশ বাতাস কালো হয়ে থাকে দিনের পর দিন অবিরাম জ্বলতে থাকা সহস্র চিতার ধোঁয়ায়। আর তারই মাঝে প্রবল অহঙ্কারে মাথা তোলে দেশের ৭৫ বছরের স্বাধীনতার সমারোহের প্রতীক বিলাসবহুলপ্রাসাদ সারি সেন্ট্রাল ভিস্টা।
দৃশ্য তিনঃ দেশের মানুষের করের টাকায় গড়ে ওঠা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলিকে একচেটিয়া মালিকদের কাছে বেচে দেয় সরকার। বেকারত্বের হার পৌঁছে যায় ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডকে ছাপিয়ে আরও অনেক দূর। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়ে, রোজগারের সামান্য সুযোগটুকুও হারিয়ে নতুন করে যোগ দেয় পথের ভিখারির দলে। প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে সামান্য চাল-গম-ছোলার ছাড়পত্র একটা রেশন কার্ডের আশায় কেন্দ্র-রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের পায়ে হুমড়ি খেয়ে আবেদন জানায় ‘স্বাধীন’ নাগরিক!
দৃশ্য চার, অলিম্পিকে জাতীয় মহিলা হকি দলের খেলোয়াড়ের হরিদ্বারের বাড়িতে চড়াও হয় তথাকথিত উচ্চবর্ণের প্রতিভূরা। দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা উগরে দিয়ে তারা অনুসরণ করে আজকের ভারতের শাসক দলের হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডাকে। রাজ্যে রাজ্যে গো-রক্ষার অজুহাতে অথবা কোনও অজুহাত ছাড়াই সংখ্যালঘু এবং দলিত সম্প্রদায়ের উপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হিন্দুত্ববাদের স্বঘোষিত অভিভাবকরা মানুষকে হেনস্থা করে চলে, খুন করে। শাস্তি দূরে থাক, খুনিদের সম্বর্ধনা দেয় কেন্দ্রীয় শাসকদল ও সংঘ পরিবারের নেতারা। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আচ্ছন্ন হয়ে যায় ভারতের সমাজ পরিবেশ।
দৃশ্য পাঁচঃ আজকের ভারতে প্রতিদিন ৮৮ জন নারীধর্ষণের শিকার হন। আরএসএস-বিজেপির অনুসৃত দর্শনের ফরমুলায় নারী আজও পুরুষের অধীন। তাই উত্তরপ্রদেশে পুলিশ রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দিতে পারে ক্ষমতাশালীদের দ্বারা ধর্ষিতা এবং খুন হওয়া দলিত সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারের কিশোরী কন্যার দেহ। শাসকদলের মন্ত্রী এমএলএ জম্মুতে ধর্ষক-খুনির সমর্থনে মিছিল করে।
দৃশ্যপটের উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই, ৭৫ বছরের স্বাধীন ভারতে এ ছবি খুব একটা অপরিচিত নয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে স্বাধীন ভারতের সংসদের প্রথম ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, ‘ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি’– নিয়তির অভিসারে এগিয়ে চলেছে ভারত! আজ ৭৫ বছর পরে যে ভারতের চেহারা দেখছি আমরা, তা কোন ‘নিয়তি’ দ্বারা নির্ধারিত? নাকি ব্রিটিশের বদলে ক্ষমতার মসনদ দখল করা ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণির কৃতকর্মের দ্বারা নির্ধারিত? যত দিন যাচ্ছে স্বাধীন ভারতে তত ভরে উঠছে মুষ্টিমেয় একচেটিয়া পুঁজি মালিকের সিন্দুক, আর নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশের আপামর জনসাধারণ। এ দেশের ১৩০ কোটি মানুষের পরিশ্রমে উৎপাদিত ৭৩ শতাংশ সম্পদ গিয়ে জমা হয় মাত্র ১ শতাংশ পুঁজিমালিকের সিন্দুকে। এই একচেটিয়া মুষ্টিমেয় মালিক ভোগ করে দেশের ৭৭ শতাংশ সম্পদ। আর দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের হাতে আছে ২ শতাংশের কম। কোন ‘ললাট লিখন’ ভারতবর্ষকে এই সীমাহীন বৈষম্যের নিদান দিয়েছে?
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আপসহীন ধারার নেতৃত্ব স্বপ্ন দেখেছিলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্ত স্বাধীন ভারতে সাধারণ মানুষই হবে দেশের প্রকৃত মালিক। ভগৎ সিং, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো বিপ্লবী নেতারা বুঝেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ফল আত্মসাৎ করতে চলেছে ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণি। তাঁরা দেখেছিলেন কংগ্রেসের আপসমুখী গান্ধীবাদী নেতৃত্বকে ঘিরে আছে দেশীয় একচেটিয়া পুঁজিমালিকরা। তাই তাঁদের বলতে হয়েছিল ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর শোষণমুক্ত ভারতের লক্ষ্যে আবার একটা সমাজ বিপ্লবের সংগ্রাম করতে হবে। দেখা গেল তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি হল, ব্রিটিশের বদলে ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণি ক্ষমতা দখল করল। দেশের মানুষের উপর চেপে বসল বুর্জোয়া শাসন-শোষণের জগদ্দল পাথর। স্বাধীনতার পর বিপ্লবী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছিলেন, বুর্জোয়া শ্রেণির স্বাধীনতা আকাঙক্ষা সাধারণ মানুষের সাথে এক ছিল না। বুর্জোয়া শেণি চেয়েছিল, ‘‘দেশ স্বাধীন হবে, তারা সেই রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হবে। ফলে তেতাল্লিশ কোটি লোকের বাজারে তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ভারতবর্ষে পুঁজিবাদকে আরও সংহত করবে এবং মানুষের বুকে জগদ্দল পাথরের মত পুঁজিবাদী শাসন ও শোষণ প্রতিষ্ঠিত করবে স্বাধীনতার জয়ডঙ্কা বাজিয়ে দেশোন্নয়নের নামে, দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনার নামে– এই ছিল বুর্জোয়াদের শয়তানি এবং রাজনীতি এবং জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে এই চিন্তা, এই আদর্শ (!) চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই টাকাপয়সা দিয়ে তারা আন্দোলনে সাহায্য করেছিল।”(১৫ আগস্টের স্বাধীনতা ও গণমুক্তির সমস্যা, শিবদাস ঘোষ নির্বাচিত রচনাবলী, তৃতীয় খণ্ড) তিনি দেখিয়েছিলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সমস্ত স্বপ্নকে দু’পায়ে মাড়িয়ে দেশের মানুষকে সীমাহীন লুঠ করার ব্যবস্থা কায়েম করেছে ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণি। আরও দেখিয়েছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে, আসেনি সাধারণ মানুষের কাঙিক্ষত গণমুক্তি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র রিপোর্ট দেখাচ্ছে ২০১৪ সালে ভারতে সংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক তার শক্তি নিংড়ে ১০০ একক নতুন মূল্য উৎপাদন করলে তার মজুরির ভাগে থাকে মাত্র ৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে তা আরও কমে গেছে। উৎপাদিত মূল্যের প্রায় পুরোটাই ঢোকে গিয়ে মালিকের পকেটে। অবশ্য অসংগঠিত ক্ষেত্রে এটুকুও জোটে না। (আইএলও এশিয়া প্যাসিফিক পেপার সিরিজ ২০১৭, অর্জুন জয়দেব ও অময় নারায়ণের গবেষণাপত্র ২০১৮, আজিম প্রেমজি ইউনিভার্সিটি) এই হল পুঁজিবাদী শোষণের আসল রূপ। এই পথেই ফুলে ফেঁপে ওঠে পুঁজিপতি শ্রেণি, আর জনগণ ক্রমাগত দারিদ্রের অতল খাদে তলিয়ে যায়। এই ৭৫ বছরের স্বাধীনতা উৎসব করবেন যখন প্রধানমন্ত্রী, ঠিক সেই সময় দিল্লি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দেশের কৃষকরা। একচেটিয়া কর্পোরেটদের হাতে কৃষি ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে মাসের পর মাস তাঁরা অবস্থান করে চলেছেন। কংগ্রেস থেকে বিজেপি পুঁজিপতি শ্রেণির সেবাদাস যে দলই ক্ষমতায় বসেছে, ভারতকে ৭৫ বছর ধরে তারা এই পুঁজি নির্ধারিত পথেই নিয়ে গেছে। ওদের কাছে স্বাধীনতা মানে, শোষণের স্বাধীনতা।
এর বিরুদ্ধে যাতে প্রতিবাদ না ওঠে, তার জন্য স্বাধীন ভারতের শাসক শ্রেণি দেশের মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত চালিয়ে গেছে শুরু থেকেই। সরকারগুলি এনেছে একের পর এক কালা আইন, যার সাহায্যে বাকস্বাধীনতা, সরকারের বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদের অধিকারটাও হরণ করা হয়েছে। আর এখন দেশের মানুষের ফোন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে আড়িপেতে সরকার আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিচ্ছে এ দেশে স্বাধীনতা আছে শুধু পুঁজির শোষণের। দেশের খেটেখাওয়া মানুষের জন্য স্বাধীনতার সব অর্থ ওরা মুছে দিতে চায়।
৭৫ বছরের স্বাধীন ভারতে সব নাগরিক দাঁড়িয়ে এক অনিশ্চয়তার সামনে। এত বছর পরে তাদের সকলকে দিতে হবে নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ! শুধু নিজের জন্মের প্রমাণ দিলে হবে না, বাপমায়ের জন্ম ঠিকুজি থেকে শুরু করে পূর্ব পুরুষের সব ইতিহাস খুঁজে বার করতে না পারলে ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্প নামক নির্যাতন শিবিরে। এনআরসি-র নামে লক্ষ লক্ষ প্রকৃত নাগরিকের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলার ষড়যন্ত্র চলছে।
৭৫ বছরের স্বাধীনতায় ভারতের জনগণের জন্য নেই সকলের শিক্ষা-স্বাস্থে্যর অধিকার। ফেলো কড়ি মাখো তেল এই নীতিতেই আজ চলছে ভারতের শিক্ষা। কংগ্রেস থেকে বিজেপি যে সরকারই ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ এনেছে তারাই চেষ্টা করেছে সাধারণের কাছ থেকে প্রকৃত শিক্ষা কেড়ে নিতে। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ কর্পোরেট পুঁজির মুনাফার ক্ষেত্র। ভারতীয়ত্বের নামে কুসংস্কারাচ্ছন্ন কূপমণ্ডুক চিন্তায় আচ্ছন্ন করতে চাইছে শিক্ষার পরিমণ্ডল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ সৃষ্টি করেছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। সাম্প্রতিক মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে এর ফল কী মারাত্মক হতে পারে। দেশের মানুষের জীবনের প্রতি শাসক শ্রেণির এতটুকু দায়বদ্ধতা থাকলে অন্তত মানুষের জীবন নিয়ে এই ব্যবসা তারা চলতে দিতে পারত কি!
আজকের ভারতে শাসনক্ষমতায় আসীন আরএসএস-বিজেপি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সব আলো নিজেদের মুখে ফেলতে ব্যগ্র। অথচ এই স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে তাঁদের ভূমিকা কী? যে সময় সারা দেশ লড়ছিল ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তখন বিজেপির পূর্বসূরি হিন্দু মহাসভা এবং আরএসএস ছিল কার্যত ব্রিটিশের পক্ষে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে বলতে হয়েছিল, ‘আজকে হিন্দু মহাসভা মোসলেম বিদ্বেষের দ্বারা প্রণোদিত হয়ে অবলীলাক্রমে ইংরাজের সঙ্গে মিলতে পারে…। এর জন্য ইংরাজের শরণাপন্ন হতে হলেও তাদের কোনও আপত্তি নেই। … মনে রাখতে হবে আমাদের শত্রু হল বিদেশি সাম্রাজ্যবাদ এবং যে সমস্ত ভারতবাসী এবং ভারতীয় প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্য করে তারাও।’ (১৯৪০ সালের ১৫ মে, ২৪ পরগণার যুব সম্মেলনে ভাষণ) মনে রাখতে হবে আরএসএসের গুরু গোলওয়ালকর সহ সকলেই বারবার ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছেন। ওদের পূজ্য সাভারকর ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে বলেছিলেন, চিরকাল অনুগত হয়ে থাকবেন। সে প্রতিশ্রুতি তিনি কখনও ভাঙেননি। হিন্দু মহাসভা-মুসলিম লিগের মতো শক্তিকে এ জন্যই নেতাজি সুভাষচন্দ্র দেশের শত্রু বলছেন। আজ তাদের ঐতিহ্যবাহী বিজেপি পালন করবে স্বাধীনতার ৭৫ বছর? অগণিত শহিদের আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এ অপমান দেশবাসী মানতে পারে?
একই সাথে বলা দরকার শুধু বিজেপি নয়, যে দলগুলি এ দেশের বুর্জোয়া শাসক শ্রেণির সেবাদাস হিসাবে কাজ করে চলেছে তাদের কারও আজ স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবের কথা বলার কোনও অধিকার নেই। কংগ্রেসের যে নেতারা স্বাধীন ভারতে বুর্জোয়া শ্রেণির বকলমে ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের উত্তরাধিকারীরাই কায়েম করেছে গণতন্তে্রর বদলে স্বৈরাচার। এনেছে ফ্যাসিবাদের রূপরেখা। কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে মদত দিয়েছে সাম্প্রদায়িকতার শক্তিকে, যার সুযোগ নিয়েছে আজকের বিজেপি। এমনকি বৃহৎ বামপন্থী বলে পরিচিত যে দলগুলি স্বাধীন ভারতে নানা সময় রাজ্যে রাজ্যে শাসকের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের ইতিহাসও বলে, দেশের মানুষের গণমুক্তির অকাঙক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে স্বাধীনতা আন্দোলনে যে ভূমিকা প্রয়োজন ছিল তারা এর ধারে কাছে যায়নি। এর ফল ভুগছে দেশের সাধারণ মানুষ।
যে সত্যটা বুঝতে হবে– বুর্জোয়া শাসন আজ আর কোনওভাবেই প্রকৃত গণতন্ত্র, স্বাধীনতা দিতে পারে না। মহান নেতা লেনিন দেখিয়েছিলেন, বুর্জোয়ারা এ যুগে গণতান্ত্রিক বিপ্লবটাও পুরোপুরি সফল করতে অক্ষম। আজকের দিনে তারা আরও প্রতিক্রিয়াশীল। ফলে সে দিন গণতন্ত্রের যে ছিটে-ফোঁটা তারা মানত, আজ তাও করে না। আজ দুনিয়া জুড়েই বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে জবরদস্তির উপর। তাদের লক্ষ্য চরম শোষণ, আর তার জন্যই শাসন। এই জবরদস্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকা বুর্জোয়া সমাজকে ভাঙতে না পারলে আজ আর সাধারণ মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেতে পারে না। এই সমাজকে ভেঙে শোষণহীন সমাজ কায়েম করতে না পারলে স্বাধীনতা অধরাই থেকে যাবে। আজকের দিনে তাই স্বাধীনতা দিবসে শত শত শহিদের আত্মদানের প্রেরণায় নিতে হবে গণমুক্তির শপথ। যে শপথ নিতে গেলে আজ চিনে নিতে হবে যথার্থ বিপ্লবী শক্তিকে, দাঁড়াতে হবে তার পাশে।