পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট ঘোষণা হতেই বিজেপি জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ৭৫ বর্ষ উদযাপন করার কথা ঘোষণা করেছে। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ উপলক্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের কী প্রত্যাশা ছিল, কী প্রাপ্তি ঘটল ইত্যাদি বিষয় আজ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার বিষয়। সেগুলি এস ইউ সি আই (সি) অবশ্যই আলোচনায় আনবে। কিন্তু যে প্রশ্নটি গুরুত্ব দিয়ে আজ ভাবার তা হল বিজেপি যে সংগঠনের আদর্শ মেনে চলে, সেই আরএসএস স্বাধীনতা আন্দোলনে কী ভূমিকা নিয়েছিল। যখন ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনী, আসফাকউল্লার মতো তরুণেরা মুক্তির মন্দির সোপান তলে আত্মবলিদান দিয়েছেন, আরএসএস কর্মী-নেতারাও কি তা করেছেন?
স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে আর এস এস-এর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে তাদের গুরু এম এস গোলওয়ালকর বলেছিলেন, ‘‘ব্রিটিশ বিরোধিতাকে ভাবা হচ্ছে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সমার্থক। এই প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমগ্র স্বাধীনতা আন্দোলন, তার নেতৃবর্গ ও সাধারণ মানুষের উপর বিনাশকারী প্রভাব ফেলেছিল” (চিন্তাচয়ন, ১ম খণ্ড, পৃঃ ১২৫)। লক্ষ করুন আর এস এস-এর কাছে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল একটি ‘প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন’। তা হলে, আর এস এস সদস্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ কোনও বিজেপি নেতা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের অধিকারী হতে পারেন কি?
আর এস এস ভারতীয় জাতীয়তাবাদকেই স্বীকার করে না। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-জৈন-শিখ-পারসিক-খ্রিস্টান ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শত-সহস্র বছরের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এবং পরিশেষে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের অধীনে একই শোষণ-যন্ত্রণা, একই অত্যাচার-বঞ্চনার শিকার হওয়ার কারণে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে ভারতের গড়ে ওঠাকেই তারা স্বীকার করে না। তাদের মতে, ‘‘আমাদের দেশের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এই কথাই বলে যে, সব কিছু করেছে একমাত্র হিন্দুরা। এর অর্থ কেবল হিন্দুরাই এই মাটির সন্তান হিসেবে এখানে বসবাস করেছে” (গোলওয়ালকর, চিন্তাচয়ন, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১২৩-২৪)। আর এস এস-এর এই বক্তব্য বিবেকানন্দের চিন্তার, রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সম্পূর্ণ বিরোধী। বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘কোনও সভ্যতা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে গড়িয়া উঠিয়াছে, এরূপ দৃষ্টান্ত একটিও পাওয়া যায় না। একটি সুসভ্য জাতি আসিয়া কোনও জাতির সহিত মিশিয়া যাওয়া ছাড়াই যে জাতি সভ্য হইয়া উঠিয়াছে–এরূপ একটি জাতিও জগতে নাই।” (বিবেকানন্দ রচনাবলি, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৪২)। রবীন্দ্রনাথও বলেছেন, ‘‘ভারতবর্ষের কেবল হিন্দু চিত্তকে স্বীকার করলে চলবে না। ভারতবর্ষের সাহিত্য, শিল্পকলা, স্থপতিবিজ্ঞান প্রভৃতিতেও হিন্দু-মুসলমানের সংমিশ্রণে বিচিত্র সৃষ্টি জেগে উঠেছে। তারই পরিচয়ে ভারতবর্ষীয়ের পূর্ণ পরিচয়” (রবীন্দ্র রচনাবলি, ১৪ শ খণ্ড, পৃঃ ২৫৯, বিশ্বভারতী সংস্করণ)। ৭৫ বর্ষ উদাযাপনের সমারোহে দেশকে মাতানোর আগে নরেন্দ্র মোদি সাহেব বলুন– কে ঠিক, রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ না আরএসএস?
বিজেপি দেশভাগের জন্য একতরফা ভাবে মুসলিম লিগ ও মুসলিম মৌলবাদী শক্তিগুলিকেই দায়ী করে। কিন্তু দেশভাগের জন্য মুসলিম লিগের সাথে হিন্দু মহাসভাও দায়ী। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পর ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুসলিম লিগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে মুসলিম লিগ মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশের দাবি তোলে। কিন্তু তার ১৭ বছর আগে ১৯২৩ সালেই হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকার ধর্মভিত্তিক পৃথক জাতির ধারণা উপস্থিত করেছিলেন। তিনি ‘হিন্দুত্ব’ নামক গ্রন্থে ভারতবর্ষে হিন্দু এবং মুসলিম দুটি পৃথক জাতির তত্ত্ব পেশ করেন। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার দেখিয়েছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক পথে ভারত বিভাগের ধারণাটির উদ্ভাবনের জন্য বিপুল পরিমাণে দায়ী হল হিন্দু মহাসভা”। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘মুসলিম লিগ সাভারকারের ওই বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে হৃদয়ঙ্গম করেছিল”। ফলে ভারতভাগের জন্য এবং উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি ও নাগরিকত্বের সংকট সৃষ্টির জন্য হিন্দু মৌলবাদ ও মুসলিম মৌলবাদ উভয়ই দায়ী।
আর এস এস-এর মতে অসহযোগ আন্দোলন অশুভশক্তির জাগরণ
ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন গোটা দেশে ১৯২১-২২ সালে তীব্র রূপে ফেটে পড়েছিল। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়গত পার্থক্য গৌণ করে হাজার হাজার মানুষ এক হয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বাসন্তী দেবী, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতা সহ হাজার হাজার সত্যাগ্রহীকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এই গণসংগ্রামের মধ্যে আর এস এস প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ হেডগেওয়ার দেখতে পেলেন ‘অশুভ শক্তির জাগরণ’। হেডগেওয়ারের ভাষায়, …অসহযোগের দুগ্ধ পান করে বেড়ে ওঠা যবন-সর্প তার বিষাক্ত নিঃশ্বাস নিয়ে দেশে দাঙ্গার প্ররোচনা দিচ্ছিল” (ভিশিকার-১৯৭৯, পৃঃ ৭)। এই ছিল অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে হেডগেওয়ার-এর অত্যন্ত অশ্রদ্ধা এবং ঘৃণার দৃষ্টিভঙ্গি।
১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন, ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের অফিসারদের বিচারের নামে প্রহসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৪৬ সালে নৌ-বিদ্রোহ, ওই বছরের ২৯ জুলাই দেশব্যাপী ধর্মঘট – আর এস এস এই সমস্ত আন্দোলনের সক্রিয় বিরোধিতা করেছে অথবা নিষ্ক্রিয় থেকে ব্রিটিশকে সাহায্য করেছে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে গোলওয়ালকর এও পর্যন্ত বলেছিলেন– ‘‘এই সংগ্রামের খারাপ ফল হতে বাধ্য।” এহেন আর এস এস-এর চিন্তাকে পরাধীন ভারতের জনগণ গ্রহণ করলে দেশের স্বাধীনতা অর্জন পিছিয়ে যেত।
১৯৩০ সালে গান্ধীজির লবণ সত্যাগ্রহের সময় আরএসএসের ভূমিকা কী ছিল? আরএসএস প্রকাশিত এক জীবনী গ্রন্থে বলা হয়েছে– ‘‘১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধী আইন অমান্যের ডাক দিয়েছিলেন। … ডাঃ হেডগেওয়ার সব জায়গায় খবর পাঠালেন সংঘ এই সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করবে না। সে যাই হোক ব্যক্তিগত ভাবে যারা অংশগ্রহণ করতে চাইবে তাদের বাধা দেওয়া হবে না। এর অর্থ হল সংঘের কোনও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না” (সিপি ভিশিকর, সংঘবিকাশ কে বীজ, ডাঃ কেশব রাও হেডগেওয়ার, নিউ দিল্লি, পৃঃ ২০)।
তাহলে ডাঃ হেডগেওয়ার নিজে ব্রিটিশ কারাগারে গিয়েছিলেন কী উদ্দেশ্যে? হেডগেওয়ার জেলে গিয়েছিলেন হীন উদ্দেশ্য নিয়ে। তাঁর জীবনীগ্রন্থ বলছে, ‘‘ডাক্তার সাহেবের এই প্রত্যয় ছিল জেলের ভিতর তিনি একদল স্বদেশপ্রেমী, অগ্রগামী, নামজাদা লোক পাবেন। তাঁদের সাথে তিনি সংঘ নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন এবং সংঘের কাজে তাঁদের টেনে আনতে পারবেন” (ঐ)।
অর্থাৎ, স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থনে হেডগেওয়ার জেলে যাননি, তিনি জেলে গিয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সরিয়ে দিতে। এর পরেও বিজেপি কোন লজ্জায় স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পালন করে?
স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দু মহাসভার ভূমিকা কী ছিল? যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের প্রতি দেশবাসীর দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে সেই প্রসঙ্গে বিনায়ক দামোদর সাভারকর ১৯৪১ সালে ভাগলপুরে হিন্দু মহাসভার ২৩তম অধিবেশনে বলেন, ‘‘ভারতের প্রতিরক্ষার কথা বলতে গেলে, ভারত সরকারের অর্থাৎ ইংরেজ সরকারের সমস্ত যুদ্ধ প্রস্তুতিকে হিন্দুদের অবশ্যই দ্বিধাহীন চিত্তে সমর্থন করতে হবে। …হিন্দুদের বৃহৎ সংখ্যায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে হবে” (সাভারকর সমগ্র, খণ্ড-৬, মহারাষ্ট্র প্রান্তিক হিন্দু সভা, পুণা, ১৯৬৩, পৃঃ ৪৬০)। অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশের পক্ষ নিয়ে ভারতবাসীকে লড়তে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার তার সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণের জন্য যখন নতুন সশস্ত্র ব্যাটেলিয়ান তৈরির সিদ্ধান্ত নিল তখন সাভারকরের নেতৃত্বে হিন্দু মহাসভা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে একটা বড় সংখ্যক হিন্দু যুবকের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। সেদিন হিন্দু মহাসভা ব্রিটিশের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সাহায্য করার জন্য দেশের নানা প্রান্তে সহায়ক কেন্দ্র খুলেছিল যাতে হিন্দু যুবকেরা সহজেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারে। এই বাহিনীকেই ব্রিটিশ পাঠিয়েছিল নেতাজি সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাদের হত্যা করতে। এরপরেও আরএসএস সদস্য নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে ভাষণ দেবেন, আর তা দেশবাসীকে শুনতে হবে?
মনে রাখা ভাল, এই ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদনে হিন্দু মহাসভার নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর লিখেছিলেন, ‘‘ …সরকার যদি তাদের বহুমুখী দয়ার দানে আমাকে একটু মুক্ত করে দেন তবে আমি আর কিছু পারি বা না পারি চিরদিন সাংবিধানিক প্রগতি এবং ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্যের অবিচলিত প্রচারক হয়ে থাকব। …সরকার আমাকে যত কাজ করতে বলবে, সেই মতো প্রায় সব কাজ আমি করতে প্রস্তুত।” (পেনাল সেটলমেন্টস ইন আন্দামানস, আর সি মজুমদার, পৃঃ ২১১-১৩)।
বিজেপি নেতাদের চোখে ইনিই নাকি স্বাধীনতা সংগ্রামের আইকন!
হিন্দুত্ববাদী এই সব সংগঠনের যেমন ব্রিটিশপ্রীতি ছিল অগাধ, তেমনি ছিল মুসলিম লিগেরও। হিন্দু মহাসভা মুসলিম লিগের সাথে বাংলা, সিন্ধু ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা পরিচালনা করছিল। এর পিছনে যে ব্রিটিশ সরকারের মদত ছিল তাতে সন্দেহ নেই। ওই সময় সম্পর্কে হিন্দু মহাসভার কানপুর অধিবেশনে (১৯৪২) সাভারকর বলেছিলেন, ‘‘বাস্তব রাজনীতির ক্ষেত্রে হিন্দু মহাসভা জানে যুক্তিসঙ্গত আপসের দ্বারাই আমাদের এগোতে হবে। এই যুক্তিসঙ্গত আপসের প্রমাণ হল সম্প্রতি সিন্ধু প্রদেশে একত্রে সরকার চালানোর জন্য হিন্দু মহাসভা মুসলিম লিগের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। … ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রীত্বে এবং আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর পরিচালনায় কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা সাফল্যের সাথেই চলছে” (সাভারকর সমগ্র– খণ্ড ৬, পৃঃ ৭৯-৮০)।
এই কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা ব্রিটিশ বিরোধিতার জন্য তৈরি হয়নি। সাভারকরের ‘পরম শ্রদ্ধেয়’ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বলেছিলেন, ‘‘এখন যুদ্ধকালীন অবস্থায় জাতীয় গভর্নমেন্ট এমনভাবে গঠিত হবে যাতে মিত্রপক্ষের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতায় যুদ্ধ করা সম্ভব হয়” (রাষ্ট্র সংগ্রামের এক অধ্যায়, শ্যামাপ্রসাদ, পৃঃ ১১৬)।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ‘৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেরও বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি না, গত তিন মাসের মধ্যে যেসব অর্থহীন উচ্ছৃঙ্খলতা ও নাশকতামূলক কাজ করা হয়েছে, তার দ্বারা আমাদের দেশের স্বাধীনতা লাভের সহায়তা হবে” (রাষ্ট্র সংগ্রামের এক অধ্যায়; শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, পৃঃ ৬১)। ভারত ছাড়ো আন্দোলন শ্যামাপ্রসাদের কাছে ‘অর্থহীন উচ্ছৃঙ্খলতা’ ও ‘নাশকতামূলক’ কাজকর্ম।
এখানেই শেষ নয়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে যখন আজাদ হিন্দ ফৌজ বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল, সেই সময় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে সহায়তা করার জন্য ঘোষণা করলেন, ‘‘বঙ্গদেশকে রক্ষা করিবার জন্য একটা গৃহবাহিনী গঠনের অধিকার আমাদের দেওয়া হউক” (রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখিত ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লিখিত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর পত্র থেকে উদ্ধৃত)। এই হল শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ভূমিকা! হিন্দু মহাসভা থেকে ‘জনসংঘ’ গড়ে তুলেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, আর সেই ‘জনসংঘ’ থেকেই জন্ম ‘বিজেপি’-র। সেই বিজেপিই আজ দেশপ্রেমের ধ্বনি তুলছে। যে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে হিন্দুদের আহ্বান জানিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, তাদেরই উত্তরসূরি বিজেপি আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্যাপন করছে। এটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কী?
শুধু পরাধীন ভারতেই নয়, বর্তমানে শাসক বিজেপির ভূমিকা চূড়ান্ত জনবিরোধী। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে যেভাবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী তৎপরতা চলছে, ধর্মনিরপেক্ষতার উপর, সংখ্যালঘু জনগণের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে তা খুবই বিপজ্জনক। একই সাথে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে জনগণের উপর নানা অন্যায় জুলুম চলছে। হরণ করা হচ্ছে শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার। এই অপশক্তিকে নির্বাচনে পরাস্ত করাই নয়, এদের চিন্তাধারার বিরুদ্ধে আদর্শগত সংগ্রাম তীব্র করা জরুরি।