স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা – সিপিডিআরএস

৬ জুলাই রাজ্যপালকে ডেপুটেশন

মানবাধিকার কর্মী স্ট্যান স্বামীর জেলবন্দি অবস্থায় মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা

প্রতিবাদ মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআরএস-এর

৮৪ বছরের জেসুইট পাদ্রী স্ট্যান স্বামীর মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল ৫ জুলাই। অশীতিপর এই বৃদ্ধের জামিন রুখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে এনআইএ একেবারে উঠেপড়ে লেগেছিল। ফলে বারবার তাঁর জামিনের আবেদন আদালতে নাকচ হয়ে যায়। আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে অগ্রণী এই ব্যক্তিত্বকে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ইউএপিএ আইনে জেলে ভরেছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ভীমা-কোরেগাঁও তথা এলগার পরিষদের মামলাতেও তাঁকে আসামি করা হয়। পার্কিনসন ছাড়াও বয়ঃজনিত স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত স্ট্যানের সাধারণ মানবিক প্রাপ্যটুকুও অস্বীকার করে এনআইএ আদালতে জানায়, স্ট্যানের চিকিৎসার কোনও প্রয়োজন নেই। চশমা ছাড়া স্ট্যান দেখতে পেতেন না। কাপ এবং স্ট্র দিয়ে তরল খাবার ছাড়া তিনি খেতে পারতেন না। অথচ তাঁকে চশমা কিংবা স্ট্র কিছুই দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার জন্য জেল হাসপাতাল ছাড়া অন্য হাসপাতালে যেতেও বাধা দিয়েছে এনআইএ। বাস্তবিক চিকিৎসার বিষয়ে রাষ্ট্র তাঁর সম্পর্কে যে নির্মম উদাসীনতা দেখাল তা ভয়াবহ। বাস্তবে এ মৃত্যু নয়, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে পরিকল্পিত হত্যা।

স্ট্যান স্বামী দানবীয় আইন ইউএপিএ-র বিধানকে মুম্বই হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জামিনের আবেদন করে দাবি করেছিলেন, এই আইন সমস্ত মুক্তিকামী মানুষের সামনে এক দুর্ভেদ্য বাধা তৈরি করেছে। তিনি আবেদনে বলেন, ইউএপিএর ধারা ৪৩ ডি (৫) অভিযুক্ত ব্যক্তির সংবিধান প্রদত্ত জীবন ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। তিনি নির্দিষ্ট ভাবে দেখান, ন্যায় বিচারের মৌলিক তত্ত্ব হল, যতক্ষণ না অভিযোগ প্রমাণিত হয়, ততক্ষণ বিচারকের চোখে অভিযক্ত ব্যক্তি নির্দোষ। কিন্তু ইউএপিএ-র মতো আইনে অভিযুক্তকে দোষী ধরে নিয়েই বিচার শুরু হয়। ফলে সরকারি পক্ষ যা বলে সেটাই আদালতে শিরোধার্য হয়ে ওঠে। নানা কঠোর শর্ত আরোপ করে কার্যত জামিনের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকেই খর্ব করে এই আইন।

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সংগঠন সিপিডিআরএস স্ট্যান স্বামীর প্রতি এই রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, বিচারের নামে প্রহসন এবং চিকিৎসাহীন অবস্থায় ফেলে রেখে হত্যার তীব্র নিন্দা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত সবার শাস্তির দাবি জানিয়ে এবং সমস্ত রাজনৈতিক বন্দির নিশর্ত মুক্তি ও ইউএপিএ আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা। সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬ জুলাই রাজ্যপালকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা