সংবাদটি বহু মানুষের নজর কেড়েছে। উদ্বিগ্নও করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বহু স্কুলে এখন চক, ডাস্টার কেনার মতো টাকা নেই। বিজ্ঞান পড়াতে বিভিন্ন ধরনের চার্ট লাগে। সেগুলো কেনারও নাকি টাকা নেই। গ্লোব কেনার টাকা নেই। বিদ্যুতের বিল দেওয়া, টেলিফোনের বিল দেওয়া, প্রশ্নপত্র ছাপানোর টাকা নেই। এ ছাড়া রয়েছে চেয়ার টেবিল বেঞ্চ ভেঙে গেলে তা মেরামতির প্রশ্ন। সে টাকাই বা আসবে কোথা থেকে?
কেন স্কুলের এই আর্থিক দৈন্যদশা? কোথায় গলদ? কী বলছেন শিক্ষকরা? শিক্ষকরা বলছেন, এই টাকা আসত কেন্দ্র ও রাজ্যের কম্পোজিট গ্রান্ট থেকে। এখানে কেন্দ্র দেয় ৪০ শতাংশ, রাজ্য দেয় ৬০ শতাংশ টাকা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই টাকা না দেওয়াতেই সমস্যা তীব্র আকার নিয়েছে।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, দ্রুত কম্পোজিট গ্রান্ট দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছি। কিন্তু বছর শেষ হতে চলল, এখনও টাকা আসেনি। কেন রাজ্য টাকা দিচ্ছে না? রাজ্যের শিক্ষা দফতরের বক্তব্য, কেন্দ্র কম্পোজিট গ্রান্ট বাবদ তাদের অংশের টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু তাতে রাজ্যের অংশের টাকা দিতে অসুবিধা কোথায়? কেন্দ্রের অপরাধকে ঢাল করে রাজ্য অনুরূপ অপরাধ করে যাবে কেন? রাজ্যই বা কেন্দ্রের এই বঞ্চনা নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে না কেন?
শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিই অত্যন্ত নেতিবাচক। যে গুরুত্ব দিয়ে এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয়বরাদ্দ করা দরকার, তা কোনও সরকারই করছে না। কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাখাতে জিডিপির মাত্র ২.৯ শতাংশ বরাদ্দ করেছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রস্তাব ছিল জিডিপি-র ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করার। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তার অর্ধেকও বরাদ্দ করছে না। রাজ্য সরকারও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ করছে না। সরকারের টাকার অভাব হয় না পুজোর অনুদানে, ক্লাবে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। যত বাহানা শিক্ষা নিয়ে। এর সরাসরি কুফল বর্তাবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। সরকারের অবহেলায় শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার বাজার আরও বাড়বে। শিক্ষা হবে মহার্ঘ পণ্য, যা কেনার ক্ষমতা নেই দেশের সিংহভাগ মানুষের।
সরকার অবৈতনিক শিক্ষার কথা বললেও স্কুলের পড়ুয়াদের থেকে বছরে মাথাপিছু নেওয়া হয় ২৪০ টাকা। ছাত্ররা ভর্তির সময় এই টাকা দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের চরম উদাসীনতায় শিক্ষা আজ সঙ্কটে। এর দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কেউই অস্বীকার করতে পারেন না। তাদের এই নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে দরকার ব্যাপক নাগরিক প্রতিরোধ। তা গড়ে তুলতে না পারলে সরকারের উদাসীনতা দায়িত্বহীনতা চলতেই থাকবে।