সুন্দরবনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
প্রধানমন্ত্রী বলুন, মৎস্যজীবীরা বাঁচবে কী করে
এ দেশে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই গরিব, খেটে–খাওয়া সাধারণ মানুষের সমস্যা, তাঁদের স্বার্থ নিয়ে যে আদৌ ভাবে না, তা নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বারে বারে দেখা গেছে৷ ১৯৮২ সালে কংগ্রেস সরকারের একটি সিদ্ধান্ত সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের জীবন–জীবিকার উপর যে মারাত্মক আঘাত হেনেছে, তা প্রতিকারের দাবি জানিয়ে তাঁরা দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন করলেও সেই সমস্যা সমাধানে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল কোনও সরকারই তৎপর হল না৷
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে কংগ্রেস সরকার ১৯৮২ সালে সুন্দরবনকে দু’ভাগে বিভক্ত করে এক অংশকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে৷ অপর অংশকে ঘোষণা করে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্ট হিসাবে৷ মৎস্যজীবীদের বক্তব্য, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বঙ্গোপসাগর লাগোয়া যে সমস্ত এলাকায় বেশি মাছ–কাঁকড়া পাওয়া যায় সেই সমস্ত এলাকাগুলিতে মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ একইভাবে রিজার্ভ ফরেস্ট সংলগ্ন বেশ কিছু নদী, খাঁড়ি এলাকাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এর ফলে লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবীর জীবন–জীবিকা গভীর সংকটে পড়েছে৷
কেন মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হল? যন্ত্রচালিত নৌকা নিয়ে জেলেরা প্রবেশ করলে যদি বন্যপ্রাণীদের অসুবিধা হয় তা হলে বনদপ্তরের অফিসার বা স্টাফদের ডিউটি বোট নিয়ে প্রবেশে অনুরূপ অসুবিধা হওয়ার কথা৷ একইভাবে অসুবিধা হওয়ার কথা টুরিস্ট লঞ্চ ও ভুটভুটির প্রবেশে৷ এদের প্রবেশে কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি৷ এই অঞ্চলে বাংলাদেশ, মায়ানমার, তাইল্যান্ডের মেশিনচালিত ছোট ছোট জাহাজগুলি খাঁড়ি দিয়ে অবাধে চলছে৷ এদের দ্বারা কি প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশের ক্ষতি হয় না? বন্যপ্রাণীদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না? তা হলে শুধু গরিবদের পেটে লাথি মারা হল কেন?
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা জরুরি৷ কিন্তু তাকে অজুহাত হিসাবে খাড়া করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিপন্ন করা কেন? সুন্দরবনে বাঘ, কুমির, হিংস্র জন্তু, জলদস্যুর আক্রমণ, জোয়ার–জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও মৎস্যজীবীরা সেখানে যেতে বাধ্য হন বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা নেই বলেই৷ সরকার জনমুখী, গরিব দরদি হলে এই ঘোষণার আগে অন্তত এদের বিকল্প কাজের সংস্থান করার দরকার ছিল৷ কেন্দ্রের পূর্বতন কংগ্রেস সরকার যেমন তার সংস্থান করেনি, তেমনি করেনি বিজেপি সরকারও৷ রাজ্যের পূর্বতন সিপিএম সরকারের মতো বর্তমান তৃণমূল সরকারও হাজার হাজার মৎস্যজীবীর এই জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারকে তৎপর হওয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণের কোনও চেষ্টাই করেনি৷ মৎস্যজীবীদের সংগ্রামী সংগঠন সাউথ সুন্দরবন ফিসারম্যান অ্যান্ড ফিস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিসারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বহুবার বিভিন্ন মন্ত্রী ও সরকারি আধিকারিকের কাছে সমস্যা সমাধানের আর্জি জানানো হয়েছে৷ কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে সেই তিমিরে৷
এআইইউটিইউসি অনুমোদিত উক্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে৷ সেপ্টেম্বরে তাঁরা যে দাবি সনদ পেশ করেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে তার সুরাহা না হলে জানুয়ারি মাসে অনশন আন্দোলনে যেতে তাঁরা বাধ্য হবেন বলে জানান এবং ৮–৯ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানান৷