সুইগি, জোম্যাটো প্রভৃতি অনলাইন অ্যাপ–নির্ভর খাদ্য পরিবহণ সংস্থার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে চলেছে শহরাঞ্চলে৷ হাজার হাজার যুবক এই পেশার সঙ্গে যুক্ত৷ কিন্তু এই পেশা সংক্রান্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় এইসব অ্যাপভিত্তিক সংস্থার কর্মীরা চরম বঞ্চনার শিকার৷ এদের পরিষেবাকে ব্যবহার করে সংস্থার মালিকরা বিপুল মুনাফা করছে৷ কিন্তু শ্রমিকদের বেঁচে থাকার মতো ন্যূনতম মজুরিটুকুও দিচ্ছে না৷ ভারতের বিভিন্ন শহরে এদের দুঃখ–দুর্দশা, শোষণ–বঞ্চনা আন্দোলন রূপে ফেটেও পড়ছে৷ এই আন্দোলনের যতটুকু সংবাদ সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কেরালায় এই আন্দোলন অনেকটাই গতি পেয়েছে৷ অন্ধ্রপ্রদেশেও আন্দোলন চলছে৷
কেরালার কোচি শহরে সুইগি–কর্মীরা নভেম্বর মাসে ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন৷ দাবি, বেতন বৃদ্ধি৷ তাঁদের এক প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্তমানে আমরা চার কিলোমিটারের মধ্যে প্রতিটি ডেলিভারির জন্য ২০ টাকা পেয়ে থাকি৷ আমাদের দাবি, তা ৩৫ টাকা করতে হবে৷ বর্তমানে পেট্রলের যা দাম, তাতে এই টাকায় আমরা সংসার চালানোর খরচটুকুই রোজগার করতে পারছি না৷
তিরুবনন্তপুরমেও ধর্মঘট হয়েছে গত আগস্টে৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা কার্যকর করেনি, জানিয়েছেন শ্রমিকরা৷ এক শ্রমিক জন মিল্টন বলেন, ২০১৯–এ আমি কাজে যোগ দিয়েছি৷ তখনকার বেতনের সাপেক্ষে এখন বেতন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে৷ সারাদিনে ১৫, ১৬টা ট্রিপে ৩০০–৪০০ টাকা রোজগার হয়৷ অন্যান্য শহরে যতটুকু বা দেওয়া হত, কোচিতে তা অত্যন্ত কম৷ এই টাকায় সংসার চলে
কোচিতে সুইগির ৫০০ শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন৷ আন্দোলনের চাপে ডিস্ট্রিক্ট লেবার অফিসার হস্তক্ষেপ করলেও মালিকরা কোনও দাবিই মানছে না৷ কারণ এক্ষেত্রে এই শ্রমিকদের পক্ষে কোনও আইনি রক্ষাকবচ নেই৷ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে অ্যাপ–নির্ভর শ্রমিকদের নিরাপত্তা দাবি করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার এই মামলার অন্যতম পক্ষ হলেও আজও এ বিষয়ে তারা আদালতে কোনও হলফনামা পেশ করেনি৷ রাজ্যে ক্ষমতাসীন সিপিএম সরকারও এই শ্রমিকদের আইনি সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৎপর হচ্ছে না৷
কোচিতে ১২ নভেম্বর ধর্মঘট হয়৷ এক শ্রমিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ১৪ নভেম্বর কোচির মেরিন ড্রাইভে সুইগির চার অফিসার, লেবার অফিসার এবং ধর্মঘটী শ্রমিক নেতাদের মিটিং হয়৷ কিছু ছোটখাটো দাবি আদায় হলেও বেতন বৃদ্ধির মতো মূল দাবিগুলি অপূরিতই থাকে৷ লক্ষণীয় বিষয় হল, লেবার অফিসার ধর্মঘট তুলে নেওয়ার জন্য বারবার শ্রমিকদের বলতে থাকেন৷ লেবার অফিসার কী করে ধর্মঘট তোলার কথা বলতে পারে? এটা আমাদের বললেন বাসিল৷ লেবার অফিসার বেতন বাড়াতে সুইগিকে বলছে না কেন?
সুইগি, জোম্যাটো, উবের, ওলা প্রভৃতি অ্যাপভিত্তিক কোম্পানিগুলি শ্রমিক অধিকার লংঘন করার জন্য প্রবল ভাবে সমালোচিত৷ হায়দরাবাদে ২৭ দিন ধরে ধর্মঘট হয়েছে৷ কিন্তু সরকার কোনও আইন প্রণয়ন না করলে এই কোম্পানিগুলি শ্রমিকদের দাবিগুলির কোনও তোয়াক্কাই করছে না৷ ‘আনর্গানাইজড সোস্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট– ২০০৮’ অনুযায়ী এই অ্যাপভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি শ্রমিক হিসাবে ঘোষণা করতে হবে৷ এই দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশনও দাখিল হয়েছে৷ কিন্তু কি সরকার, কি ওই চার কোম্পানি– কারওর কোনও হেলদোল নেই৷ এখানেই প্রয়োজন শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধতা, সংগঠন এবং আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা, তৎপরতা৷ কেন্দ্রীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগঠনগুলির এ ব্যাপারে কোনও ভূমিকা কি নেই?