কলকাতা থেকে রওনা হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রতনপুর মোড় পেরিয়ে ছুটে চলা দ্রুতগতির গাড়ি থেকে আজও চোখ চলে যায় সেই একখণ্ড জমির দিকে৷ সেই জমি যাকে ঘিরে ২০০৬–০৭ সাল থেকে বারবার সারা ভারতের বিবেক উত্তাল হয়েছে৷
সিঙ্গুর সেদিন প্রশ্ন তুলেছে, এই ভারত নাকি জনকল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্র? তাহলে তার রক্ষক কেন্দ্র–রাজ্য সরকার কৃষক রমণীকে চুলের মুঠি ধরে পিটিয়ে, তার সন্তানদের খুন করে, ধর্ষণ করে, বৃহৎ পুঁজিমালিকের জন্য জমি কেড়ে নিতে পারে কি? প্রশ্ন তুলেছে, সরকার তুমি প্রায় ৬ হাজার পরিবারের কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষের আশ্রয়–রুটি রুজি কেড়ে নিয়ে কত লোকের কর্মসংস্থান করবে? উত্তরে সেদিনের রাজ্য সরকার বিদ্রূপ করেছে, লাঠি পিটিয়ে, অত্যাচার করে, ধর্ষণ করে, গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে রাজকুমার ভুল, তাপসী মালিকদের তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে৷ তাই সেদিন যে চাষিরা জীবনের তোয়াক্কা না করে রুখে দাঁড়িয়েছেন বন্দুকধারী পুলিশের সামনে, সেদিনের দর্পিত শাসক সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিতা হয়েও যে কৃষক রমণীরা লড়েছেন শেষ শক্তি থাকা পর্যন্ত, তাঁদের কাছে সিঙ্গুর এক মহাতীর্থ৷ সারা ভারতের জল–জঙ্গল–জমি রক্ষার আন্দোলনে সামিল নির্যাতিত কৃষক–শ্রমিকের কাছে সিঙ্গুর এক শক্তিদায়ী ইতিহাসের নাম৷ কর্পোরেট মালিকের স্বার্থে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার তথাকথিত উন্নয়ন যজ্ঞের নির্বাক বলি হওয়ার বদলে রুখে দাঁড়াতে শেখায় যে নাম, তাই হল সিঙ্গুর৷ আর নন্দীগ্রামে ১০ হাজার একর জমি দখল করে সালিমদের হাতে তুলে দিয়ে এসইজেড করতে চেয়েছিল সিপিএম সরকার৷ মানুষতা রুখেছে রক্ত দিয়ে৷ সিঙ্গুর–নন্দীগ্রামই কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করেছে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নতুন আইন করতে৷
আজ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার কিছু সিট পেয়েছে বলে সিঙ্গুরের এই ইতিহাস বদলে যেতে পারে না৷ বিজেপি নেতারা সিঙ্গুরের এই আত্মদানের খবরটুকুও রাখেন না৷ অথচ তাঁরাই এখন শিল্প শিল্প করে প্রবল দরদ দেখাতে ব্যস্ত৷ বিজেপি নেতারা সিঙ্গুরে টাটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রায় তাদের পায়ে পড়ার সংকল্প ঘোষণা করছেন৷ যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছে সিপিএম৷ শিল্পায়ন আর চাকরির দাবিতে নবান্ন অভিযান উপলক্ষে ১৩ সেপ্টেম্বরের গণশক্তি পত্রিকায় তারা সিঙ্গুরকে উল্লেখ করেছে ‘খণ্ডহর’ (পোড়ো বাড়ি) হিসাবে৷ লিখেছে, ভেঙে দেওয়া কারখানার জমিতে এখন শুধু কাশ ফুল৷ চাষিরা কাশফুল চায় না, চায় চাকরি৷ প্রচার হচ্ছে সিঙ্গুরে টাটার কারখানা হতে পারল না বলেই বাংলায় শিল্পায়ন স্তব্ধ৷ ওটি হলেই একেবারে হাজার হাজার কারখানায় বাংলা নাকি ভরে যেত! সমাধান হয়ে যেতে পারত ভয়াবহ বেকার সমস্যার!
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস আজ রাজ্যের মসনদে৷ সিঙ্গুরের সংগ্রামী মানুষের রক্ত–ঘাম, তাপসী আর রাজকুমারের জীবনদানকে ভোটের বাক্সে পুঁজি করে তারা রাজা–উজির বনেছে৷ তারা লড়াকু সিঙ্গুরকে ভয় পায়৷ তারা চায় সিঙ্গুর থাকুক দু’টাকা কেজি চালের উমেদার হয়ে, মাথা নিচু করে৷ এই সুযোগে চলছে লড়াইয়ের সেই ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র৷ মাত্র ১৩–১৪ বছর আগেও যে জমি সতেজ সবুজ হয়ে থাকত– ধান, আলু, সব্জি, পাটের খেত হাজার হাজার মানুষকে দিত নিশ্চিন্ততার আশ্বাস৷ তাকে খণ্ডহর বানালো কারা? সিঙ্গুরের কৃষকরা যে কৃষকরমণী পুলিশের বুটের তলায় পিষে যেতে যেতেও জমি ছাড়বো না বলেছিলেন– তিনি সিঙ্গুরের দাবি নিয়ে লড়াই করা এরাজ্যের লক্ষ লক্ষ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ নাকি আসলে এই জমিকে নষ্ট করেছে ‘টাটার কেশাগ্র স্পর্শ করতে দেব না’ বলে যারা মানুষের রক্তে টাটার লাভের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিল সেই সিপিএম পরিচালিত তৎকালীন রাজ্য সরকার তাকে সাহায্য করেছে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সরকার তার সাথে এর দায় বর্তায় তৃণমূল নেতৃত্বের উপরেও৷ কারণ তারাই অনশনের ধুয়ো তুলে ২০০৬–এর প্রতিরোধ আন্দোলনকে ৪ ডিসেম্বর থেকে সিঙ্গুরের বাইরে নিয়ে চলে গিয়েছিল৷ না হলে টাটাদের হয়ে সরকার জমি ঘিরতেই পারত না৷ সিঙ্গুরের মানুষকে নিয়ে প্রথম থেকেই কৃষিজমি রক্ষা কমিটি নামে গণকমিটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল এস ইউ সি আই (সি)৷ তাতে সাধারণ মানুষ যেমন ছিলেন, এস ইউ সি আই (সি) এবং তৃণমূলের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা, এমনকি সিপিএমের সাধারণ সমর্থকরাও ছিলেন৷ এস ইউ সি আই (সি)–এর বক্তব্য ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক নেতারা কমিটিকে সাহায্য করতে পরামর্শ দেবে, কিন্তু আন্দোলন পরিচালনা করবে কমিটিই৷ তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব প্রথমে এই আন্দোলনে আসতেই চায়নি৷ কিন্তু পরে আন্দোলনকে দখল করতে তারা তাদের প্রচার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল নেত্রীকেই সিঙ্গুরের মুখ করে তোলে৷ গণকমিটিকে ঠেলে দেয় পিছনে৷ তার পরিণামে যে চাষিরা জমি দখল রুখে দিয়েছিলেন, তাঁরা নেত্রীর অনশন দেখে থমকে গেলেন, উর্বর কৃষিজমি নষ্ট করতে পারল সরকার৷
তৃণমূল সরকারে বসার পরেই এস ইউ সি আই (সি) দাবি তুলেছিল আন্দোলনের মাধ্যমে সংগঠিত কৃষকরা তাঁদের জমি দখল করুন, সরকার তাদের আইনি সহায়তা দিক৷ কিন্তু সরকারে বসেই কর্পোরেট মালিকদের মন পাওয়ার আশায় তৃণমূল আন্দোলনকে ভয় পেতে শুরু করে৷ তারা সিঙ্গুরের জমির প্রশ্নটাকে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় ফাঁসিয়ে দেয়৷ আন্দোলনকে ভোটের বাক্সে টেনে নিয়ে গিয়েই তাদের মোক্ষলাভ সম্পূর্ণ৷ তাই সিঙ্গুরের লড়াইয়ের প্রধান শক্তি ছিলেন যাঁরা, সেই কৃষক রমণীদের, সেই কিশোর–যুবক–যুবতী নামগুলি ওরা ইতিহাস থেকে বাদ দিতে চায়৷
যে কথাটা কেউ উচ্চারণ পর্যন্ত করছে না, সিঙ্গুরের লড়াইটা আদৌ শিল্প বনাম কৃষি ছিল না৷ সিঙ্গুরের লড়াই ছিল এক বর্বর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যার কল্যাণে কর্পোরেট একচেটিয়া পুঁজির মালিকরা চাইলেই যে কোনও মানুষের জমি, ভিটেমাটি, বনজঙ্গল, প্রাকৃতিক যে কোনও সম্পদকে দখল করতে পারে, মানুষকে যথেচ্ছ উচ্ছেদ করতে পারে৷ শিল্পের বিরোধিতা সিঙ্গুর করেনি, তারা দাবি তুলেছিল, বহুফসলি উর্বর জমিকে শিল্পের নামে ধ্বংস না করে লক্ষ লক্ষ একর অনাবাদী, পতিত, অকৃষি জমিতে শিল্পের পরিকাঠামো গড়ে উঠুক৷ বন্ধ কলকারখানার হাজার হাজার একর জমিকে উদ্ধার করে সেখানে শিল্প গড়ুক সরকার৷ সরকারের কাছে সিঙ্গুরের দাবি ছিল শ্রমনিবিড় শিল্প পরিকাঠামোর৷ সিঙ্গুর চেয়েছিল শিল্প গড়ার নামে অতিরিক্ত জমি কেড়ে নিয়ে সেখানে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার ফন্দি বন্ধ হোক৷ সেদিন সিঙ্গুর আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে এনেছিল– অত্যন্ত উর্বর বহুফসলি জমি অফুরন্ত নয়৷ এমন জমি গড়তে লাগে শত বছর, নষ্ট করা যায় একদিনে৷ সিঙ্গুর আন্দোলন সেদিন সুনির্দিষ্টভাবে দেখিয়েছিল শিল্পায়নের ধুয়ো তুলে হাজার হাজার একর জমি একচেটিয়া দৈত্যাকার পুঁজির মালিকরা দখল করতে চাইছে একদিকে জমি–বাড়ি অর্থাৎ রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার জন্য, অন্যদিকে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি ফসলের বাজারে নিজেদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েমের ধূর্ত পরিকল্পনায়৷ আর তার জন্য সরকার এত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টাটাদের জমি দিয়েছিল ৪৫ বছরে ৮০০০ টাকা একর হিসাবে৷ শর্ত ছিল, জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা সহ সব পরিকাঠামো বিনা পয়সায় দেবে সরকার৷ টাটারা বিদ্যুৎ পাবে ৩ টাকা ইউনিট দরে এবং তা ৫ বছর বাড়বে না৷ যদিও তখন পশ্চিমবঙ্গে গৃহস্থরা বিদ্যুতের দাম দিতেন প্রায় ৬ টাকা প্রতি ইউনিট৷ টাটাদের ভ্যাট, কর্পোরেট সার্ভিস ট্যাক্স, কর্পোরেট ইনকাম ট্যাক্স সব মকুব হয়েছিল৷ ১ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা ছিল৷ কথা ছিল তাও তারা শোধ করা শুরু করবে ২১ বছর পর থেকে৷ অর্থাৎ জনগণের ঘাড় ভেঙে আদায় করা ট্যাক্সের টাকাতেই ব্যবসা করবে টাটারা৷ টাকা জনগণের, লাভ টাটাদের!
সিঙ্গুরের মানুষ সেদিনই দাবি তুলেছিলেন, ১৮৯৪ সালের সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের জমি অধিগ্রহণ আইন বদলাক সরকার৷ দাবি ছিল, জনস্বার্থে সরকারকে যদি কোনও জমি অধিগ্রহণ করতেই হয়, শুধু জমির মালিক নয়, বহু দশক ধরে যাঁরা জমির উপর নির্ভরশীল সেই ভাগচাষি ও খেতমজুরদের শুধু ক্ষতিপূরণ নয় তাদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং জীবিকার সঠিক ব্যবস্থা করেই একমাত্র তা করতে হবে৷ সিপিএম পরিচালিত রাজ্য সরকার বলেছিল, টাটার মতো একচেটিয়া মালিকের লাভের জন্য জমি কেড়ে নেওয়াটাই জনস্বার্থ৷ কারণ তাতে নাকি কর্মসংস্থান হবে৷ দেশের ছেলে–মেয়েরা চাকরি পাবে৷ যদিও পরে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই তথাকথিত জনস্বার্থের অজুহাত খারিজ হয়ে গেছে৷ আর নৈতিকতার দিক থেকে সিঙ্গুর প্রশ্ন তুলেছিল অত্যাধুনিক মোটর গাড়ি শিল্পে ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বড়জোর ৩০০ লোকের কাজ হতে পারে৷ তার জন্য এমন একটি জনবহুল এবং উর্বর কৃষি জমির এলাকাকে বেছে নেওয়া হবে কেন? প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করে কোন উপকারটি হবে? সরকার উত্তর দিয়েছিল টাটার বাবু সাহেবদের বাগানের মালি, বাসনমাজার লোক, রান্নার লোক, জুতো পালিশের লোক লাগবে৷ ওটাও কর্মসংস্থান! সম্পন্ন চাষি এবং জমিতে সোনা ফলিয়ে সচ্ছল খেতমজুর–ভাগচাষিদের জন্য এমন শিল্প–কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই সরকার করেছিল! সিঙ্গুর তা ঘৃণায় ফিরিয়ে দিয়েছে৷
সিঙ্গুর থেকে উঠে ন্যানো কারখানা যেখানে গিয়েছিল সেই গুজরাটের সানন্দ এলাকার কী হাল? সানন্দ কারখানায় ন্যানো উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ৷ সানন্দ মোটর হাব এখন বিদেশি গাড়ির যন্ত্রাংশ জোড়ার কাজই মূলত করে৷ এমনিতেই গাড়ি শিল্পে এখন প্রবল মন্দা, ফলে সেখানেও কাজ নেই৷ বিজেপি সরকার টাটাদের দিয়েছিল ০.১ শতাংশ সুদে ৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ, ২২ বছর বাদে তা শোধ করার কথা৷ টাটারা টাকা নিয়ে লাভ ঘরে তুলে ফেলেছে৷ কারখানা রুগ্ন ফলে সেটাও মকুবই হবে৷ কিন্তু জমিদাতা উত্তর কোটপুরা, ছিরোরি সহ সাতটি গ্রামের মানুষের কিছুই জোটেনি৷ প্রথম কিছুদিন ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় টাটার কারখানায় তাদের কাজ জুটেছিল৷ এখন টাটারা স্থানীয়দের আর নেয় না৷ বেশিরভাগ কর্মীই সেখানে কন্ট্রাকচুয়াল৷ তাদের গড় বেতন ১০ হাজার টাকার বেশি নয়৷ যে জমি দিয়ে গ্রামের মানুষ ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছে বলে বিজেপি প্রচার করে, সেই জমি এখন প্রোমোটাররা বেচছে ৫ কোটি টাকায়৷ গ্রামের মানুষের পানীয় জল, বিদ্যুৎ নেই৷ নর্মদা নদীর জল টাটার উপনগরীতে পৌঁছালেও গ্রামের বাসিন্দাদের সে জল পাওয়ার রাস্তা বন্ধ৷ কোটপুরার ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলও বন্ধের পথে৷ কারণ স্থানীয় বাসিন্দারা বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিকের দলে নাম লিখিয়েছেন (এনডি টিভি, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৭)৷
লাভ কি কারও হয়নি? টাটারা কারখানা না চালিয়েই টাকা পেয়ে গেছে, বিজেপির অফিস সাততলা হয়েছে, নেতাদের–প্রোমোটারদে একটার বদলে দু’তিনটি বিদেশি গাড়ি হয়েছে৷ আর মোটর কারখানার শ্রমিক? গ্রামের চাষি? সকলেই দিনে দিনে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হওয়ার পথে এগিয়েছে৷ সিঙ্গুর সে সত্যটা আগেই বুঝেছিল৷ এস ইউ সি আই (সি) তাদের কাছে সঠিক বক্তব্যটা তুলে ধরেছিল যে, আজকের যুগটাই পুঁজিবাদের সংকটের চরম অবস্থার যুগ৷ ফলে শিল্পায়ন, অর্থাৎ অবাধে কলকারখানা খোলা আজ একটা দিবাস্বপ্ন মাত্র৷ সারা দেশে লক্ষ লক্ষ কারখানা বন্ধ, শিল্পোৎপাদনের হার নেমেছে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি৷ বেকারি বেড়েছে ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে৷ কোথায় হবে শিল্পায়ন? সেদিন সিপিএম সরকার যেমন মিথ্যা শিল্পায়নের গল্প বলে সিঙ্গুর–নন্দীগ্রামকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিল, আজ কেন্দ্রে বিজেপি রাজ্যে তৃণমূল একই কাজ করছে৷
আজকের দিনে যেটুকু চাকরি আছে তাকে রক্ষা করতে কিংবা চাকরির দাবিতে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প গড়ার জন্য আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই৷ তার জন্য চাই সঠিক নেতৃত্বে গণআন্দোলনের জোয়ার৷ ভোটের দিকে নজর রেখে, কংগ্রেসের মতো একচেটিয়া মালিকবন্ধু শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যা সম্ভব নয়৷ রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে চাকরির প্রতিশ্রুতি আদায় করতে গেলেও সেই আন্দোলনই দরকার যা টাটাদের উমেদারি করে শিল্প আনার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেয় না৷ দেয়, খাদ্য আন্দোলনের শহিদ থেকে শুরু করে ৯০ এর শহিদ মাধাই হালদারদের যথার্থ উত্তরসাধক হওয়ার ডাক৷