১২ফেব্রুয়ারি জয়নগর ১নং ব্লকের বহড়ু স্কুল মাঠে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা স্তরের প্রায় ৮ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন সারা বাংলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটির সভাপতি রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চ্যাটার্জী, আসামের নাগরিকত্ব সুরক্ষা সংগ্রাম কমিটির তরফে সুরত জামান মণ্ডল, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, সারা বাংলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটির সম্পাদক গোপাল বিশ্বাস, কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক গোর্কি চক্রবর্তী, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য রইস আলি বৈদ্য, অধ্যাপক জাহান আলি পুরকাইত প্রমুখ ব্যক্তিরা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মনোজ গুহ।
বিমল চ্যাটার্জী বলেন, ‘আমরা ভারতের নাগরিকরা কবার নাগরিকত্বের প্রমাণ দেব? ১৯৫১ সালে একবার দিয়েছি, এখন বিজেপির সরকার এই প্রমাণ দিতে বলছে, আর একটা দলের সরকার আসবে, তারাও দিতে বলবে। আমরা বারবার এই কাজ করব না। এরা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন চাইছে, আমরা তা প্রতিহত করব। আজ পর্যন্ত ভারতের ১১টি রাজ্য এর বিরোধিতা করেছে। এই রাজ্যগুলির জনসংখ্যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। ক্রমাগত আরও বহু মানুষ প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন। আমাদের উদ্দেশ্য, ধর্ম বা অন্য যে কোনও প্রকারের বিভাজন বন্ধ করা’। সুরত জামান মণ্ডল বলেন, ‘আসামে ২০১৫ সাল থেকে এনআরসি-র কাজ শুরু হয়। একটি বামপন্থী দল ছাড়া বাকি সবাই তা সমর্থন করে’। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ জায়গা-জমি, ঘটি-বাটি, গরু-ছাগল বিক্রি করে নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য দপ্তরে দপ্তরে ছুটছেন। যাঁদের নাম বাদ গেল তাঁদের অবস্থা কী? আরএসএস-বিজেপি হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছিল, কোনও হিন্দুর ভয় নেই, অথচ ১২ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ গেল বিজেপির সরকার থাকা সত্ত্বেও। ওদের উদ্দেশ্য কি নাগরিকত্ব দেওয়া? ওদের উদ্দেশ্য লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নাগরিককে নাগরিকত্বহীন করে দেওয়া’। তিনি আরও বলেন, ‘আসামের অবস্থা ভয়ঙ্কর। ডিটেনশন ক্যাম্পে চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। কোনও মানবাধিকার সংগঠনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ২৯ জন ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। গরিব মানুষরাই এর শিকার হচ্ছেন। সুজাত ভদ্র বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙালি আসামে এসেছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে তা একেবারে সত্য নয়। তিনি বলেন, ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে একটি পরিবারের মহিলা-শিশুদের আলাদা করে রাখবে? এ তো নারকীয় ব্যাপার! এনআরসি-এনপিআর করতে এলে আপনারা কোনও কাগজ দেখাবেন না’। অধ্যাপক গোর্কি চক্রবর্তী বলেন, ‘এনপিআর হল এনআরসি-র মাসতুতো ভাই। আসামে বলার চেষ্টা হয়েছিল, এনআরসি হলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে। কী হয়েছে আমরা দেখছি। ভারতবর্ষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায়নেই’।
গোপাল বিশ্বাস সারা রাজ্যের সঙ্গে এই জেলার প্রান্তে প্রান্তে এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। কনভেনশনে অধ্যাপক মনোজ গুহকে সভাপতি এবং আনসার শেখ ও জ্ঞানতোষ প্রামাণিককে যুগ্ম সম্পাদক করে ১৯০ জনের একটি শক্তিশালী দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়।