আমেরিকার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল,মহান মানবতাবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদ ও সামরিক আগ্রাসন বিরোধী সংগ্রামের অক্লান্ত সৈনিক Ramsey Clark ৯ এপ্রিল নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
Ramsey Clark এর মৃত্যুতে অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি ইম্পিরিয়ালিস্ট ফোরাম গভীর শোক জ্ঞাপন করেছে। একটি শোকবার্তায় সংগঠনের সহ-সভাপতি মানিক মুখার্জী জানিয়েছেন,অ্যাটর্নি জেনারেল থাকাকালীন Ramsey Clark নাগরিক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন। পরে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন এবং হ্যানয়ে মার্কিন বোমাবর্ষণের প্রতিবাদ করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন,মার্কিন সাম্রাজ্যবাদই হল যুদ্ধের প্রধান হোতা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ-আগ্রাসন চালানোর মুখ্য অপরাধী। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে,মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামরিক আগ্রাসনের বিরোধিতায় তিনি সরব হয়েছেন এবং মার্কিন একাধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সকলকে সমর্থন করেছেন। ১৯৯১ সালে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের শুরু করা উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালে যুগোস্লাভিয়ায় ন্যাটোর বোমাবর্ষণের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ২০০৩-এ জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক যুদ্ধেরও তিনি বিরোধিতা করেছিলেন। ইরাকের বিশেষ ট্রাইবুনাল কর্তৃক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের বিচারকে তিনি বেআইনি ও মানবাধিকার লংঘনকারী হিসাবে অভিহিত করেন। এই ট্রাইবুনালে তিনি সাদ্দাম হুসেনের আইনজীবী হিসাবে ভূমিকা পালন করেন। এ ক্ষেত্রে বিচারের নামে কেমন প্রহসন হয়েছিল তা তিনি প্রকাশ্যে তুলে ধরেছিলেন। যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের বিচারটিকেও তিনি অন্যায় বলে সমালোচনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট মিলোসেভিচকে তিনি শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত সাহসী এক সেনাপতি হিসাবে বর্ণনা করেন। বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনগুলিকে সমর্থন করতে এবং অন্য দেশের ওপর যে কোনও দেশের সামরিক আগ্রাসনের ঘটনার বিরোধিতা করতে তিনি গড়ে তোলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন সেন্টার’নামক সংগঠন। যুদ্ধাপরাধ,শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং মার্কিন নাগরিক ও যে সব দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আগ্রাসন চালিয়েছে সেখানকার নাগরিকদের নাগরিক অধিকার খর্ব করার অপরাধে তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশকে অভিযুক্ত করার উদ্দেশ্যে তিনি স্বাক্ষর সংগ্রহের ব্যাপক উদ্যোগ নেন।
Ramsey Clark ২০০৭-এর নভেম্বরে ভারতে এসেছিলেন একটি আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সমাবেশে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। সেই সমাবেশ থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-ইম্পিরিয়ালিস্ট কোঅর্ডিনেটিং কমিটি’ নামক সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়, যার সভাপতি নির্বাচিত হন Ramsey Clark । সেই বছর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে তৎকালীন সিপিএম পরিচালিত সরকারের পুলিশ দলীয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে সরকার কর্তৃক জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত গ্রামবাসীর ওপর অমানবিক আক্রমণ চালায়। সরকারি হিসাবে সেই ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৪ জনের,শত শত মানুষ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, মহিলারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। নভেম্বর মাসেও সেখানে মারাত্মক আক্রমণ চালায় সিপিএম। কলকাতায় থাকার সময়ে Ramsey Clark নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন। সেখানকার ধ্বংসলীলা দেখে,এলাকার আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে,তাদের ওপরে ঘটনা অত্যাচারের বর্ণনা শুনে তিনি প্রবল ভাবে আলোড়িত হন। সিপিএম পরিচালিত সরকারের এই নির্মম পাশবিকতা,পুলিশি বর্বরতা এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদে র্যামসে ক্লার্ক সিপিএম পরিচালিত তৎকালীন সরকারের নিন্দায় ছিলেন দ্ব্যর্থহীন। বস্তুত,পৃথিবীর যেখানেই মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে,কোনও দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হেনেছে সাম্রাজ্যবাদীরা, সেখানেই ন্যায়বিচারের সংগ্রামে প্রতিবাদের সামনের সারিতে থেকেছেন Ramsey Clark।
তাঁর মৃত্যুতে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন এবং মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন একজন শক্তিশালী যোদ্ধা ও সুযোগ্য নেতাকে হারাল। অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি ইম্পিরিয়ালিস্ট ফোরাম স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে এই সংগ্রামী যোদ্ধার স্মৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে এবং তাঁর অপূরিত কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করছে।