কুমিল্লা সহ অন্যান্য পূজা মণ্ডপে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা-ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ১৪ অক্টোবর ঢাকার পল্টন মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল জিপিও, গুলিস্তান সহ রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কুমিল্লায় কথিত কোরানের অবমাননা করার অজুহাতে পূজা মণ্ডপে হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার জেরে চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে তৌহিদী জনতার নামে মিছিল করে মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, হাতিয়ায় এবং বাঁশখালী সহ সারা দেশেই এবং আজও বান্দরবান সহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে যা পূর্ব পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব ধর্মের ও জাতির মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে ছেদ ঘটিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার সহ স্বাধীনতা-উত্তর গত ৫০ বছরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন সকল সরকারই ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপস আঁতাত করে ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছে। মূলনীতিকে লঙ্ঘন করে সংবিধানের মাথায় বিসমিল্লাহ বসিয়েছে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছে, ৩২ অনুচ্ছেদ উপড়ে ফেলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করার সুযোগ করে দিয়েছে, হেফাজতের দাবি মেনে দাওয়ারে হাদিসকে মাস্টার্স-এর সমমর্যাদা প্রদান করেছে, পাঠ্যপুস্তকে প্রগতিশীল লেখকদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, কারখানা তৈরি না করে ৪৬০ উপজেলায় মডেল মসজিদ বানিয়েছে, ব্যাঙের ছাতার মতো মাদ্রাসা তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। এভাবে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ শাসন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক হানাহানির দেশে পরিণত করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে ও নানা মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় ও জাতিগত নিপীড়ন ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের দলীয় লোকজনই প্রধানত এসব সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ও নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানেও বিভিন্ন স্থানে আওয়ামি লিগের নেতৃবৃন্দ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে যার কোনওটিরই বিচার হয়নি। ফলে শাসকদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়েই দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের জান-মাল রক্ষা ও ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কুমিল্লা-হাজিগঞ্জের ঘটনা তার সর্বশেষ প্রমাণ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ উপমহাদেশে অতীতে ও বর্তমানে শাসকশ্রেণি তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে চলেছে। ভারতের ত্রিপুরা ও আসামে সামনে নির্বাচন, ফলে এখানে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিলে ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপিরও হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সুবিধা হবে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জামাত-হেফাজত গোষ্ঠী পরস্পর পরস্পরের সহযোগী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকার দেশ শাসনে চরম ব্যর্থ হয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাট মহামারী রূপ ধারণ করেছে। দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ না করে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। গণতন্ত্রহীনতাই দেশে সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রকে উর্বর করে তুলছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, গণতন্ত্রহীনতায় জনগণ যখন সরকারের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ তখন জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য শাসক গোষ্ঠীও সাম্প্রদায়িকতা সহ নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত অতীতে করেছে বর্তমানেও করছে বলে দেশবাসীর সন্দেহ রয়েছে।
নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা সহ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার-বিচারের দাবি জানান। একই সাথে ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও শাসকশ্রেণির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ ও গণতন্ত্র-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল-ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।