গণপিটুনিতে মহম্মদ আখলাকের মতো কেউ খুনই হোন আর অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে কেউ পুরস্কারই ফেরান, ক্ষমতায় আসবে বিজেপিই – রাজস্থানের জয়পুরে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে এক সভায় এ কথা বলেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ৷
রাজস্থানের আলওয়ারে স্বঘোষিত গো–রক্ষকদের হাতে এর আগে খুন হয়েছেন নিরীহ গ্রামবাসী পহেলু খান থেকে শুরু করে দুধ বিক্রেতা, গোরু কেনাবেচার সাথে যুক্ত অনেকেই৷ রাজস্থানের অন্যান্য বহু জায়গাতেও ঘটেছে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা৷ দুধ ব্যবসায়ী, গোরু কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের ব্যবসা লাটে উঠেছে, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁদের পরিবার–পরিজন৷
সরকারি নীতির পরিণামে একদিকে রোজগার নেই, ভয়ঙ্কর বেকারি, খরাকবলিত রাজ্যে চাষের কাজে মন্দা, ১০০ দিনের কাজ নেই বললেই চলে, মানুষের ক্ষোভ উঠেছে চরমে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির বসুন্ধরা রাজে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তীব্র আকার নিচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন৷ নির্বাচনে উন্নয়নের ধুয়ো আর কাজ দেবে না, এমন আশঙ্কা বিজেপি নেতাদের মধ্যে প্রবল৷ ফলে হিংসা, সাম্প্রদায়িক উগ্রতার পথটিই খোলা বিজেপির কাছে৷ বিজেপি সভাপতি সেই পথটিই বেছে নিয়েছেন৷
বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক জিগির ও যুক্তিবাদীদের খুনের প্রতিবাদে বহু সাহিত্যিক, কবি, প্রথিতযশা মানুষজন কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া খেতাব ত্যাগ করেছেন৷ শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষিত মানুষরা এতে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ এতে প্রমাদ গুণেই বিজেপি সভাপতির এই আস্ফালন!
উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে ‘বাড়ির ফ্রিজে গো–মাংস রাখা আছে’ এই অজুহাতে আরএসএস––বিজেপির মদতপুষ্ট উন্মত্ত বাহিনী নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করেছিল মহম্মদ আখলাককে৷ বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা প্রত্যক্ষ মদত জুগিয়েছিলেন এই ঘটনায়৷ আজ হঠাৎ করে বিজেপি সভাপতি এটাকেই আস্ফালনের বিষয় করল কেন? বিজেপির অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের ক্রমবর্ধমান ধাক্কা একের পর এক রাজ্যের নির্বাচনে তাঁরা অনুভব করছে৷ এরপর ২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচন এবং রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মিজোরাম, তেলেঙ্গানা সহ বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপির উন্নয়নের ঝুলিও শূন্য৷ তাই সাম্প্রদায়িকতার তাসই নেতাদের ফাঁকা ঝুলি থেকে বের করতে হচ্ছে৷ রাজস্থানের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপি সভাপতির এই উস্কানিমূলক বক্তব্য তারই প্রতিফলন৷
এর দ্বারা কী বার্তা দিতে চাইলেন বিজেপি সভাপতি? আখলাক হত্যার মতো এমন ঘটনা আরও ঘটবে এবং তাঁরা জনমতের তোয়াক্কা করেন না৷ প্রশাসন তাঁদের হাতে, পুঁজিপতিদের একটি বড় অংশের সমর্থন তাঁদের হাতে৷ তাঁদের বিরোধিতা করলে কালবুর্গি–গৌরী লঙ্কেশের মতো ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে খুন করা হবে৷ নাহলে ‘দেশদ্রোহী’ বলে জেলে পোরা হবে মোদি সরকারের সাড়ে চার বছরের শাসন সে কথাই বলছে৷ কিন্তু অতি প্রতিক্রিয়াশীল সরকারকেও মাথা নত করতে হয় নিপীড়িত জনতার সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের ঝড়ে৷ ইতিহাস সে কথা বারবার প্রমাণ করেছে৷
(৭১ বর্ষ ৮ সংখ্যা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)