সাত বারের বিধায়ক কমরেড দেবপ্রসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিলেন অনেক সাংবাদিক। তাঁর মৃত্যুতে তাঁদেরই কয়েকজন সমাজমাধ্যমে যে স্মৃতিচারণা করেছেন, তার কিছু অংশ প্রকাশ করা হল।
জুড়ি মেলা ভার
জয়ন্ত চৌধুরী, বর্তমান পত্রিকা
দুশো চুরানববই সদস্যের বিধানসভায় তাঁরা মাত্র দু’জন। তার মধ্যে একজন জেলে বন্দি। কিন্তু একদিনের জন্য বিধানসভা অধিবেশনে কামাই করেননি তিনি। তাঁর নাম দেবপ্রসাদ সরকার।
সদস্য সংখ্যার নিরিখে অধিবেশনে বলার সুযোগ মেলে। শাসক বামফ্রন্ট, প্রধান বিরোধী তৃণমূল, কংগ্রেস, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পরে দুই সদস্যের এস ইউ সি। সদস্যদের আনুপাতিক হারে সময় বরাদ্দ হয়। সেখানে এস ইউ সি-র ভাগ্যে যৎসামান্য সময় ধার্য হত, তা-ও আবার অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিমের বদান্যতায়। বরাদ্দ হওয়া সময়ের পূর্ণসদ্ব্যবহারে জয়নগরের বিধায়ক দেবপ্রসাদ সরকারের জুড়ি মেলা ভার। একাই দলের রাজনীতির কথা, এলাকার দাবি দাওয়ার কথা বা সরকারের নীতির সমালোচনায় তিনি অকুতোভয়।
প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া, পাশ-ফেল প্রথা বন্ধ করা ঘিরে বিতর্কে বিধানসভা অধিবেশনে দেবপ্রসাদবাবুর একক লড়াই দোর্দণ্ডপ্রতাপ বামফ্রন্টের বেশ বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল।
নিজের পরিষদীয় ভূমিকা পালনে তাঁর কর্তব্য নিষ্ঠায় তিনি সর্বদা অবিচল থাকতেন। অনেক সময় মাইক অফ করে দিলেও খালি গলায় বলে যেতেন। একাই ওয়াক আউট করতেন। একাই লবিতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতেন। বিলের কপি ছিঁড়ে বিক্ষোভ দেখাতেন একা একাই। ট্রেজারি বেঞ্চ তো বটেই, বিরোধী শিবির থেকেও তা নিয়ে টিকা টিপ্পনি কম হয়নি। অনেকেই তা নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন, তাঁর সেই একক প্রতিবাদের ভঙ্গিমাকে। হাজারো বক্রোক্তি, তিনি কর্ণপাত করতেন না। কোনও দিন রাগ প্রকাশ করতেও দেখিনি।
১৯৭৭ থেকে একটানা সাতবার বিধায়ক। আমাদের কাছে জয়নগর আর দেবপ্রসাদবাবু যেন সমার্থক।
অধিকাংশ দিন ওঁর বক্তব্য কাগজে ঠাঁই পেত না। কিন্তু তাতে তাঁর ভ্রূক্ষেপ ছিল না। তা নিয়ে খেদ ছিল বলে মনে হয়নি। কোনও দিন অনুযোগ করেননি। ‘বুর্জোয়া’ কাগজে তাঁর দলের কথা ছাপা হবে বা টেলিভিশনে বাইট যাবে এমন প্রত্যাশা বা মোহ থেকেও মুক্ত ছিলেন তিনি। পার্টির হোলটাইমার। থাকতেন দক্ষিণ কলকাতার পার্টির কমিউনে। সাড়ে তিন দশক এসইউসি-র বিধায়ক হলেও আত্মপ্রচারের লেশমাত্র দেখিনি।
বঙ্গ রাজনীতি হারাল এক আদর্শবাদীকে
কিংশুক প্রামাণিক, সংবাদ প্রতিদিন
নিঃশব্দে বিদায়। তিনি যে ছিলেন সেটাই ভুলতে বসেছিল সবাই। আজ বিধায়ক বিক্রি হয়। তিনি হননি। একাই একশো হয়ে নীতির সঙ্গে যুদ্ধ করে গিয়েছেন অবিরত। দেবপ্রসাদ সরকারকে সবাইকে চেনাতে পারব না। চিনতে পারবেনও না। বন্ধু সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী যথার্থ বিশ্লেষণ করেছে। আমারও কিছু কথা ছিল। কিন্তু এরপর আর কিছু লেখা যায় না। বঙ্গ রাজনীতি হারাল এক আদর্শবাদীকে।
আদর্শের প্রতি দৃঢ়তা থাকলে একা একাও লড়া যায়
সন্দীপন চক্রবর্তী, আনন্দবাজার পত্রিকা
… বিধানসভায় নিজের পৃথক অবস্থান বুঝিয়ে দিয়ে একাকী ওয়াক আউট। বাইরে গিয়ে কখনও লবিতে একাই স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ, কখনও বিল ছিঁড়ে প্রতিবাদ। কোনও ব্যঙ্গ-কটাক্ষেই বিচলিত না হয়ে নিজের কাজ করে যাওয়ার এই নজিরই তৈরি করেছিলেন দেবু’দা।
পরিণত বয়সে জীবন থেকে তাঁর ওয়াক আউটের খবরটা এক ঝটকায় মনে পড়িয়ে দিয়ে গেল কত কিছু! ঠিক কবে প্রথম বার দেখা, মনে নেই। কবে শেষ বার দেখা হয়েছে, খতিয়ান নেই তারও। তাঁকে দেখে যা শিখেছি, মনে আছে এবং থাকবে পুঙ্খানুপুঙ্খ।
… সেই ১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল গোটা বাম জমানার ৩৪ বছর তিনি জয়নগরে অপরাজিত। টানা ৭ বার। প্রথম প্রথম বিধানসভার খবর করতে গিয়ে তাঁকে দূর থেকেই দেখা। তাতেও চোখে পড়তো, শাসক বা বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে যেমন ঠাট্টাই হোক, স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম তাঁকে বেশ গুরুত্ব দেন। কিছু দিন পরে এক সিনিয়র সাংবাদিকের মাধ্যমে দেবু’দার সঙ্গে আলাপ।
… বিধানসভার দো’তলায় ছিল তাঁর ছোট্ট ঘর। এখনকার মতো যে কোনও নথি পিডিএফ করে মোবাইল মারফত হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়ার যুগ সেটা নয়। দেবু’দার কাছে গিয়ে বিল বা স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট জোগাড় করেছি বেশ কয়েক বার। সেই সঙ্গেই তাঁর কাছে মিলত এসইউসি-র ছোট ছোট কিছু প্রকাশনা। চটি বই, পুস্তিকা। বই, পত্রিকা (সব মিলে লিটারেচার) এই চর্চাটা এখনকার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ক্ষীণ হয়ে এসেছে একেবারেই।
… নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির হয়ে স্থানীয় মানুষের লড়াইয়ের কথা বিধানসভায় তুলেছেন দেবু’দা। আরও নানা বিষয় যোগ হয়ে পরের দিকে নন্দীগ্রাম শাসক ও বিরোধী দু’টি দলের মধ্যে এলাকার কর্তৃত্বের লড়াইয়ে পরিণত হওয়ার আগে জমি আন্দোলনে এসইউসি-র সুর্নিদিষ্ট ভূমিকা ছিল। সেই অবস্থান থেকেই বিধানসভার মধ্যে ছিল দেবু’দার সক্রিয়তা।
… এসইউসি যে হেতু সংসদীয় ব্যবস্থা-নির্ভর দল নয়, বাইরেও দেখা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। লেনিন সরণিতে এসইউসি-র পুরনো দফতরে কত বার। ভাঙাচোরা বাড়ি, বাইরে থেকে খোলা সিঁড়ি, দফতরে স্থান অকুলান, পার্টিশন দিয়ে বিভাগ আলাদা করা সেই দফতর। খুব আটপৌরে, ভগ্নপ্রায়। কিন্তু কী ঐশ্বর্য ছিল সেই বাড়িটার! উপর থেকে ব্যস্ত লেনিন সরণি দেখতে অদ্ভুত লাগত। সাংবাদিক সম্মেলনে গিয়ে অগ্রজ জয়ন্ত চৌধুরীর সঙ্গে ওই বাড়ির খোলা বারান্দা বা ছাদে বৃষ্টিতে ভিজেছিও আমরা।
… মনে আসতে থাকা নানা গল্পকে এক সূত্রে জুড়লে যে বার্তাটা উঠে আসে নিজে আদর্শ এবং অবস্থানের প্রতি বিশ্বাস ও দৃঢ়তা থাকলে একা একাও লড়ে যাওয়া যায়। নিজের কথা জোর গলায় বলে যাওয়া যায়। দেবু’দাকে দেখে পাওয়া মোক্ষম পাঠ এটাই।
… জীবনের হারানো অধ্যায়ের কিছু স্মৃতি উস্কে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন এক জন ভাল মানুষ, ভদ্র রাজনীতিক।
রাজনীতিকে নীতির রাজা হিসাবেই দেখতেন
মোসারফ হোসেন, বর্তমান
একজন মানুষ, একজন নেতা, একজন পরিষদীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেবপ্রসাদবাবুকে যত দেখেছি, অবাক হয়েছি। দেখতাম অধিবেশনের ফাঁকে রোজই কিছুটা সময় বিধানসভার দোতলার লাইব্রেরিতে পুরনো রেকর্ডপত্রে বুঁদ হয়ে গেছেন। সভার মধ্যেও সংক্ষিপ্ত ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে সর্বদা নিজের উপস্থিতি জানান দিতেন। রাজনীতিকে রাজার নীতি নয়, উনি নীতির রাজা হিসেবেই দেখতেন। আমার কলেজ জীবনে যখন প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতাম, তখন থেকেই ওনার দৃপ্ত ব্যক্তিত্ব আমায় মুগ্ধ করত। ওই মহান মানুষটির প্রয়াণে সত্যিই অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
সবার আগে বিধানসভায়
শৈবাল বিশ্বাস
দেবপ্রসাদ সরকার ছাড়া বিধানসভা একটা সময় ভাবা যেত না। আমরা ঠাট্টা করে বলতাম, ভদ্রলোক রাতে তেল মেখে শুয়ে পড়তেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চান করেই গোটা পাঁচেক কলিং অ্যাটেনশন, তিরিশটা মেনশন, গোটা দশ-বারো কোশ্চেন নিয়ে সবার আগে বিধানসভায়।
বিরলব্যক্তিত্ব
তন্ময় চ্যাটার্জী, হিন্দুস্তান টাইমস
বাংলার রাজনীতি একজন বিরল ব্যক্তিত্বকে হারাল। একবার দেবপ্রসাদবাবুর ঘরে গেছিলাম। দেখলাম ধুতি আর হাফহাতা গেঞ্জি পরে উনি ওনার কালো পাম্পসুটা পরিষ্কার করছেন। বর্ষার কাদা লেগেছিল। ওই একপাটি জুতো ছিল ওনার। তখনই বয়স ষাটের কাছাকাছি। কিন্তু মাথায় একটাও পাকা চুল নেই। একবার মজা করে জিজ্ঞেসও করেছিলাম। দেবপ্রসাদবাবু হেসে বলেছিলেন, ‘সারাদিন মাঠেঘাটে ছুটে বেড়াতে হয় তো। চুল আর পাকার সময় পায়নি।’
একটুও বাড়িয়ে বলেননি। মাইলের পর মাইল হাঁটতেন। বিধানসভার কাজ শেষ হবার পর প্রতিটা খবরের কাগজের অফিসে যেতেন যদি কোনও বিশেষ বিল নিয়ে আলোচনা হত সেদিন। উনি এসে বলতেন ওনার দল ওই আইন নিয়ে কী ভাবছে। স্টেটসম্যানে বিধানসভার খবর লেখার সময় কয়েকবার ওনার দলের বক্তব্য লিখেছিলাম। উনি যত্ন করে সব কাগজের কাটিং রেখে দিতেন। অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং নিয়মনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
আদর্শের প্রতি অবিচল
অরূপ মণ্ডল, টিভি ১৮
৭ বারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ সরকার, জয়নগরের মানুষের কাছে আর পার্টি কর্মীদের কাছে তাঁর পরিচয় ছিল দেববাবু। দলে দেববাবু ছিলেন শচীন ব্যানার্জী, সুবোধ ব্যানার্জী, ইয়াকুব পৈলান (পৈলান সাহেব)-দের উত্তরসূরী। ব্যক্তিগত জীবনে বাহুল্য বর্জিত, অনাড়ম্বর। সাদা ধুতি, পাঞ্জাবী আর শীতকালে তার ওপর একটা কাশ্মীরি শাল। এর বাইরে কোনও পোষাকে দেববাবুকে কেউ দেখেনি। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র জয়নগর থেকে লোকাল ট্রেনে চেপে আর পাঁচজন নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে কলকাতায় দলের রাজ্য দপ্তরে আসতেন। বিধানসভায় যেতেন শিয়ালদা থেকে বাসে চেপে। বহুদিন, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে, বিধানসভা থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ ধরে তাঁকে হাঁটতে দেখেছি। হাঁটতে হাঁটতে পৌছে যেতেন ওয়েলিংটনে দলের রাজ্য দপ্তরে। সেখানে দলীয় কাজ সেরে রাতে শিবপুরের কমিউনে বা জয়নগরে ফেরা। জয়নগরে তাঁর পৈত্রিক বাড়ি। দলের কার্যালয় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। কিন্তু, বাড়িতে তিনি কখনও থাকেননি। জয়নগরে থাকলে তাঁর ঠিকানা ছিল দলীয় পার্টি অফিসের এক চিলতে ঘর। সেই ঘরে যারা গেছেন, তারা দেখেছেন, আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে আজীবন লড়াই করা এক বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধির জীবনযাপন কতটা বাহুল্যবর্জিত, সাদামাটা হতে পারে।
আট বাই ছয়ের সেই ঘরে আসবাব বলতে ছিল একটা দড়ির খাটিয়া। বিশ্রাম নেওয়া বা রাতে ঘুমোনোর জন্য। খাটিয়ার নিচে থাকত জামাকাপড় কাচার সাবানের একটা প্যাকেট, তেলের শিশি, লাইফবয় বা লাক্সের মতো সস্তা দামের সাবান। জানালার পাশে টেবিল ল্যাম্প সহ নড়বড়ে একটা কাঠের টেবিল। তার ওপর স্তুপীকৃত কাগজপত্র। দেওয়ালে মার্ক্স, এঙ্গেলস এর ছবির পাশে শিবদাস ঘোষের ছবি। ঘরের এক কোণে একটা মাটির কুঁজো (জল রাখার), পাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা একটা স্টিলের থালা আর কাঁচের গ্লাস। ঘরের দেওয়ালে পেরেক মেরে টাঙানো দড়িতে ঝুলত ব্যবহৃত জামা-কাপড় থেকে স্নানের গামছা। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সস্তা একটা ট্রাঙ্কে থাকত কয়েক সেট ধুতি পাঞ্জাবী, শীতের শাল, সঙ্গে দু একটা গরমের পোষাক। দেওয়ালে টাঙানো বইয়ের তাক। তাতে শিবদাস ঘোষ থেকে শুরু করে বামপন্থী রাজনীতির নানা বই। এই নিয়েই দীর্ঘ এতগুলো বছর পার করে দিলেন দেববাবু।
নির্মোহ দৃষ্টিতে মাস্টারমশাই দেববাবুকে দেখলে এটা বলা অন্যায় হবে না যে, দেবপ্রসাদ সরকার কোনদিনই খুব বড় মাপের সংগঠক বা সংগঠন বোঝা নেতা ছিলেন না। আপাদমস্তক শিক্ষিত দেববাবু মনে করতেন দলের বিধায়ক হিসাবে এলাকার মানুষের সমস্যা ও তার দলের রাজনীতিকে সঠিকভাবে বিধানসভায় তুলে ধরা তাঁর অন্যতম কাজ। আর, এই কাজে তিনি ছিলেন অক্লান্ত এক কর্মী। দীর্ঘ ৩৪ বছরে সঙ্গীবিহীন এবং একা।
বন্ধুতার সম্পর্ক ছিল
অশোক সেনগুপ্ত
একটা ব্যাগ নিয়ে মূলত হেঁটেই যাতায়ত করতেন গন্তব্যে। তখন গাড়ি চড়ার প্রচলন কম ছিল। অধিবেশনের দিন সংবাদপত্র দফতরগুলোয় আসতেন। প্রেস বিবৃতি দিয়ে যেতেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে একটা বন্ধুতার সম্পর্ক ছিল। বহুকাল যোগাযোগ নেই। কিন্তু মনে হচ্ছে কাছের একজন মানুষ চলে গেলেন।
মানুষটি যেন রূপকথার চরিত্র
গৌতম সরকার, টাইমস অফ ইন্ডিয়া
এই কমিউনবাসী মানুষগুলি যেন রূপকথার চরিত্র হয়ে যাচ্ছেন। মতাদর্শের সঙ্গে একমত কেউ হতে পারে, নাও পারে। কিন্তু এমন ত্যাগ, তিতিক্ষা, লক্ষ্যের প্রতি অবিচল, দায়বদ্ধ মানুষগুলোর কথা ভাবলে নিজেদের ভীষণ ধান্দাবাজ, স্বার্থপর, সংকীর্ণমনা বোধ হয়।
অন্য রকম বামপন্থী
বিশ্বজিৎ রায়, টেলিগ্রাফ
দেবপ্রসাদ বাবু ভিন্ন রকম মানুষ, অন্য রকম বামপন্থী। অ্যাসেম্বলির দিনগুলোতে অন্য বিধায়কদের মতো ওকে কোনও দিন লবিতে খোশগল্প করতে দেখিনি। মাঝেমধ্যে ওকে খুব যান্ত্রিক মনে হত। ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার সুযোগ বিশেষ পাইনি। ওর বক্তব্য আনন্দবাজার বা টেলিগ্রাফে খুব একটা জায়গা পেত না। ফলে প্রায়শই লজ্জায় পড়তাম, এড়িয়ে যেতাম। উনি বিশেষ অনুযোগ করতেন না। কিন্তু সিপিএম বিধায়করা যখন হাউজের ভেতরে বা বাইরে ওকে বিদ্রুপ করতেন, তখন খুবই খারাপ লাগত। একটি ছোট বাম দলের কার্যত একমাত্র প্রতিনিধির প্রাপ্য সম্মানটুকু ওরা দিতেন না। যদিও তাঁর দল যুক্তফ্রন্টের সময় সিপিএমের সহযোগী ছিল। দেশ ও রাজ্যের রাজনীতিতে পরিষদীয় সৌজন্য ও শিষ্টাচার অনেকদিন আগে থেকেই মুছে যেতে শুরু হয়েছে। এখন তো কেন্দ্র-রাজ্য, পুরসভা পঞ্চায়েত সব স্তরেই তা বিলুপ্ত। ওনার চলে যাওয়া সেটা মনে পড়িয়ে দিল।
বিরলতম রাজনীতিক
অনিন্দ্য জানা, অনলাইন আনন্দবাজার
দেবপ্রসাদবাবু বিরল নয়, বিরলতম রাজনীতিক। তাঁর চলে যাওয়ায় মন খারাপ হচ্ছে।
সমাজের ক্ষতি
দীপক ঘোষ, এ বি পি আনন্দ
দীর্ঘদিন থেকেই তিনি চলে গিয়েছিলেন চোখের আড়ালে। যখন তার উপস্থিতি থাকতো, সেটা থাকতো প্রবলভাবেই। আখের গোছাতে নয়, রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে রাজনীতি করার মানুষ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এটা আমাদের সমাজের ক্ষতি।
দলের প্রতি একনিষ্ঠ
মিলেনিয়াম পোস্ট
বামফ্রন্ট শাসনে এসইউসিআই-এর দু’জন এমএলএ ছিলেন। বামফ্রন্ট সরকারের ইংরেজি তুলে দেওয়ার নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন দেবপ্রসাদ সরকার। তিনি অবাধ প্রমোশন নীতির বিরোধী ছিলেন। তিনি বিধানসভায় নিয়মিত আসতেন এবং নানা বিতর্কে অংশ নিতেন। থাকতেন পার্টি কমিউনে। দলের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা এবং সহজ-সরল স্বভাবের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।