পুরুলিয়ার সাঁওতালডিতে নির্মীয়মাণ ২.০ এমটিপিএ ক্ষমতাসম্পন্ন কোল ওয়াশারিতে চলছে জঙ্গলের রাজত্ব। নির্মীয়মাণ কারখানাটি ভারত সরকার অধিগৃহীত বিসিসিএলের একটি প্রজেক্ট।
অদক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত মজুরি দৈনিক ৪৯৪ টাকা। কিন্তু তাদের দেওয়া হয় মাত্র ২৬৫ টাকা। প্রাপ্য বোনাস অনেক কমিয়ে শ্রমিকদের হাতে দেওয়া হয় মাত্র ২৫০০ টাকা। পিএফ ও ইএসআই-এর বালাই নেই। বাড়তি কাজের জন্য কোনও ওভারটাইম মজুরি নেই। নেই কাজের কোনও নিরাপত্তা। মুখের কথায় ছাঁটাই এখানে নিত্য ঘটনা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশ্রয়ে এখানকার কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনগুলি দু’পায়ে মাড়িয়ে চলে। এখানকার মুখ্য নিয়োগকর্তা বিসিসিএল কর্তৃক নিযুক্ত মূল ঠিকাদার জিজি কন্সট্রাকশনের অধীনে কর্মরত ঠিকাদাররা এলাকার সিপিএম ও তৃণমূলের মদতপুষ্ট। স্থানীয় ঠিকাদাররা বিসিসিএল ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে ঠিকা শ্রমিকদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এই কারখানার ঠিকা শ্রমিকদের একমাত্র অনুমোদিত সংগঠন এআইইউটিইউসি গত পাঁচ বছর ধরে শ্রমিকস্বার্থে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উত্থাপিত শ্রমিকদের দাবিগুলি বর্তমানে আসানসোলে কেন্দ্রীয় লেবার কমিশনারের অধীনে বিবেচনাধীন। দীর্ঘদিন ধরে লেবার কমিশনার আহূত বৈঠকগুলিতে বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদাররা অনুপস্থিত থাকায় কিছুতেই দাবিগুলির মীমাংসা হচ্ছে না।
এই অবস্থায় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের আইনমাফিক মজুরি ও বোনাসের দাবিতে স্বাক্ষরিত দাবিপত্র শ্রমদপ্তরে পেশ করা হয়। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে চাপ সৃষ্টি করে ঠিকাদার। হুমকি দেয়– সই না করলে ছাঁটাই করা হবে। কিছু শ্রমিকের স্বাক্ষরিত কাগজ ঠিকাদার শ্রমদপ্তরে জমা দেয়। কিন্তু ইউনিয়নের নির্দেশে সিংহভাগ শ্রমিক স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। এই পরিস্থিতিতে জি জি কন্সট্রাকশনের ঠিকাদার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকাশ মাহাতো সহ পাঁচজনকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ছাঁটাই করে। ইউনিয়ন ও শ্রমদফতরের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন জানানো সত্তে্বও ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহাল করা হয়নি। পাশাপাশি কারখানায়় চলতে থাকে সাদা কাগজে সই করার হুমকি। এই অন্যায় জুলুমে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
ঠিকাদারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সংগঠিত করে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জেলাশাসক ও এসপি-কে স্মারকলিপি দেওয়া হয় ২৫ আগস্ট। কিন্তু সরকারি কর্তারা কোনও পদক্ষেপ নেননি। এই পরিস্থিতিতে ২৯ আগস্ট ছাঁটাই শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজন সহ এলাকার সাধারণ মানুষ ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে স্থানীয় কামারগোড়া গ্রামে রাস্তা অবরোধ করেন। অবরোধে ঠিকাদারের গাড়ি আটকে যায়। ঠিকাদার অবরোধকারীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।
এরপর তিনি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে। তার ভিত্তিতে পুলিশ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকাশ মাহাতো সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে। যদিও আকাশ মাহাতো ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ৩০ আগস্ট রাতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করে। শ্রমিকদের বাড়িতে না পেয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক পুলিশি তাণ্ডব। এলাকার মানুষ প্রশাসন ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। কিন্তু শত অত্যাচার়েও শ্রমিকদের মনোবল ভাঙতে পারেনি ঠিকাদার-পুলিশ চক্র। ইউনিয়নের পাশে দাঁড়িয়ে ঠিকাদারের হুমকি উপেক্ষা করে শ্রমিকরা সাদা কাগজে স্বাক্ষর না করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছন। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্য নিয়োগকর্তা বিসিসিএল কর্তৃপক্ষ, ঠিকাদার, প্রশাসন এবং সিপিএম ও তৃণমূলের সম্মিলিত আক্রমণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চলবে। প্রাপ্য বেতন না দেওয়া এবং ন্যায্য আন্দোলনের উপর অন্যায় আক্রমণ– মালিকের এই জুলুমবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন বলে স্থির করেছেন শ্রমিকরা।