‘আচ্ছে দিন’, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’– সমস্তই যে নির্ভেজাল ধোঁকাবাজি তার প্রমাণ পাওয়া গেল হাতেনাতে৷ সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই)–এর সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে দেশে বেকারির হার গত দু’বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে৷ কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যাও বেড়েছে৷ এবারের অক্টোবরে দেশে কর্মরত ভারতবাসীর সংখ্যা ৩৯.৭ কোটি, যা ২০১৭ সালের অক্টোবরে ছিল ৪০.৭ কোটি৷ রিপোর্টটি আরও বলছে, গত মাসে প্রাপ্তবয়স্ক কর্মক্ষম দেশবাসীর মাত্র ৩৯.৫ শতাংশ কর্মরত ছিলেন৷ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক্ জনগণের ৬০ শতাংশের বেশি বেকার বা কর্মহীন৷
নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সাধারণ মানুষের ‘আচ্ছে দিন’ এল কাজ খুইয়ে, বেকারদের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হওয়ার মধ্য দিয়ে৷ ‘সবকা বিকাশ’ মানে দেশের সকল খেটে খাওয়া মানুষের বিকাশ বা উন্নয়ন নয়, বিপুল পরিমাণে বিকাশ ঘটেছে দেশের পুঁজিপতি শ্রেণির একটা অংশের৷ আচ্ছে দিন এসেছে বিজেপি ঘনিষ্ঠ আম্বানি–আদানি প্রমুখ শিল্পপতিদের৷ বিজেপির দাক্ষিণ্যে সাধারণ মানুষকে চূড়ান্ত শোষণ করে সর্বোচ্চ মুনাফা আদায় করে তারা সম্পদের চূড়োয় অবস্থান করছে৷
সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেশে কর্মক্ষম ব্যক্তির অভাব নেই, কাজ করতে আগ্রহী লোকেরও অভাব নেই৷ কাজ না পেয়ে সংসার চালানোর তাগিদে দু’বেলা মুখে রক্ত তুলে যা হোক কিছু রোজগারের আশায় হয়রান হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ অথচ সরকার তাদের কাজ দেওয়ার জন্য কোনও রকম পরিকল্পনা তো করছেই না, উল্টে নানা ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে৷ স্থায়ী কাজের বদলে চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়োগ হচ্ছে নামমাত্র বেতনে, ফলে অবসরকালীন কোনও সুযোগ–সুবিধা আর সরকারকে দিতে হচ্ছে না৷ কাজের সুযোগ কমছে ক্রমাগত৷ সরকারি দপ্তরগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে এবং আধুনিকীকরণ করে চাকরির সুযোগ হরণ করা হচ্ছে৷ বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী বেকার যুবকদের পকোড়ার দোকান দিয়ে রোজগারের পথ বাতলাচ্ছেন৷ তাহলে মোদিজির ‘আচ্ছে দিন’ স্লোগান দেশবাসীর কাছে চূড়ান্ত প্রতারণা ছাড়া আর কী!
(৭১ বর্ষ ১৪ সংখ্যা ১৬ – ২২ নভেম্বর, ২০১৮)