![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/8-Bandh-Kolkata-1-1024x543.jpg)
৮ ডিসেম্বর দিনটি ভারতের ইতিহাসে লিখে গেল এক নতুন ইতিহাস। আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে এক মানুষের মতো দাঁড়ালেন সারা ভারতের কোটি কোটি শ্রমিক, চাষি, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষ। অচল করে দিলেন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। কেন্দ্রের উদ্ধত সরকারের কাছে দাবি তুললেন কোনও টালবাহানা নয়, অবিলম্বে তিনটি কৃষক বিরোধী কৃষি আইন এবং জনবিরোধী বিদ্যুৎ আইন-২০ প্রত্যাহার করতে হবে।
এই সর্বাত্মক ভারত বনধের জন্য ওই দিন এক বিবৃতিতে জনগণকে অভিনন্দন জানান দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কৃষকরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে, খেটে-খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে সর্বত্র গণকমিটি ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সেবাদাস বিজেপি সরকার লকডাউনের সুযোগে জনবিরোধী কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ আইন দেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল। তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল ২৬ নভেম্বরের সর্বাত্মক ভারত বনধে। কান দেয়নি সরকার। তাদের এই ঔদ্ধত্যের জবাব দিতে কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃত্বে দিল্লি সীমান্তে বিজেপি সরকারের পুলিশি হামলা অগ্রাহ্য করে অনমনীয় দৃঢ়তায় দিনের পর দিন অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন নানা রাজ্যের লক্ষাধিক কৃষক। গোটা দেশ থেকে হাজারে হাজারে সংগ্রামী মানুষ দলে দলে এসে সামিল হচ্ছেন এই আন্দোলনে।
সরকারের যাবতীয় মিথ্যা প্রচার অগ্রাহ্য করে আজ গোটা দেশের খেটে-খাওয়া মানুষই এসে দাঁড়িয়েছেন কৃষক সমাজের পাশে। সোচ্চারে গলা মিলিয়েছেন তাঁদের তোলা স্লোগানে। ৮ ডিসেম্বরের ধর্মঘটে তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে স্তব্ধ গোটা দেশ জোরালো থাপ্পড় কষিয়েছে স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক, কর্পোরেট পুঁজিপতিদের সেবাদাস এই সরকারকে। ধর্মঘট ভাঙতে চেষ্টার কসুর করেনি সরকার। কোথাও কোথাও জোর করে বাস চালিয়েছে, হুমকি দিয়েছে, পুলিশবাহিনী নামিয়ে রুখে দিতে চেয়েছে মিছিলের জনজোয়ার। গুজরাট জুড়ে জারি করেছে ১৪৪ ধারা। উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ সরকার বনধ ভাঙতে ব্যাপক পুলিশ নামায় রাজ্য জুড়ে। বিহার সরকার বিশাল পুলিশ বাহিনী নামিয়ে ব্যর্থ করতে চেয়েছে ধর্মঘট। উত্তরপ্রদেশের বদলাপুরে দলীয় দপ্তরে হামলা চালায় পুলিশ। কর্মীদের আটকে দিয়ে জৌনপুর জেলা সম্পাদক কমরেড রবিশঙ্কর মৌর্যকে গ্রেপ্তার করে। ওড়িশার কটকে ৪৫ জন এসইউসিআই(সি) কর্মী সহ ৫৫ জনবাম নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছ’ঘন্টা আটকে রেখে তাঁদের খাবার দেওয়া দূরে থাক, জলটুকু পর্যন্ত দিতে অস্বীকার করে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ সহ নানা রাজ্যের অ-বিজেপি সরকারগুলি আন্দোলনের এই প্রবল গতি দেখে দাবিগুলিকে সমর্থন করতে বাধ্য হলেও কর্পোরেট মালিকদের সন্তুষ্ট রাখতে বনধের বিরোধিতা করেছে। সরকারি বাস চালিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত সত্তে্বও কোনও মতেই পিছু হটানো যায়নি লড়াকু জনতাকে। পথে নেমে তারা বুঝে নিতে চেয়েছে নিজেদের অধিকার।
দেশ জুড়ে গণপ্রতিবাদের এই বন্যার পরেও নির্লজ্জ সরকার বলে চলেছে, কর্পোরেট মালিকদের স্বার্থে সর্বনাশা কৃষি আইন, বিদ্যুৎ আইন তারা বাতিল করবে না। আসলে তাদের হাত-পা বাঁধা। পুঁজিবাদী ভারত রাষ্ট্রের আসল মালিক একচেটিয়া পুঁজিপতি শ্রেণির সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই তো ক্ষমতায় বসেছে তারা। এই ক্ষয়িষ্ণু ব্যবস্থাকে রক্ষা করার মরিয়া চেষ্টাতেই জনগণের সমস্ত ক্ষোভ উপেক্ষা করে তাদের এই নির্লজ্জ আক্রমণ।
কিন্তু আজ যখন সেই ক্ষোভ সংগঠিত আন্দোলনের রূপ পাচ্ছে, মালিক শ্রেণি আর তার সেবাদাস ভোটবাজ সরকারি দলগুলির শিরদাঁড়া বেয়ে আতঙ্কের হিমস্রোত নামছে। কারণ, তারা জানে, আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী এবং সংগঠিত হলে, তা সঠিক মার্কসবাদী বিপ্লবী রাজনীতির দ্বারা পরিচালিত হলে, তার মধ্য দিয়েই জন্ম নেবে জনগণের বিপ্লবী শক্তি। আশু দাবি আদায়ের সংগ্রামের মধ্যেও এই সত্য ধরিয়ে দেওয়ার কঠিন কাজ কৃষকদের মধ্যে করে চলেছে এআইকেকেএমএস। এস ইউ সি আই (সি) সর্বশক্তি নিয়ে কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে এই ভূমিকাই পালন করে চলেছে।
দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন, এবং ৮ ডিসেম্বরের সর্বাত্মক ধর্মঘট গণআন্দোলনের সামনে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়ে গেল। এই ধর্মঘট দেখিয়ে দিল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা, এমপি সংখ্যার জোরের থেকে অনেক বড় জনগণের সংগঠিত আন্দোলনের শক্তি। লড়াকু এই কৃষক আন্দোলন এবং ধর্মঘটে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখিয়ে দিল, পচে যাওয়া এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পার্লামেন্ট আর জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না, পারে একমাত্র সংগঠিত গণআন্দোলন। দেখিয়ে দিল, বিজেপি যতই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে থাকুক, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন তাদের প্রতি নেই। এই আন্দোলন সফল করতে দেশের সর্বস্তরের জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)।
(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ১২ সংখ্যা_১১ ডিসেম্বর, ২০২০)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/AP-Vijaywara-1024x428.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Ashoknagar-M-P-Strike-1024x381.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Baharampur-Strike-1024x439.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Balurghat-Strike-1024x442.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Bhubaneswar-Strike-1024x720.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Bokaro-Strike-1024x264.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Duttapukur-Strike-1024x449.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Jamsedpur-Strike-1024x386.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Jamtala-Bazar-Kultali-Strike.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/KKMS-Rail-Aborodh-at-Habra-1024x560.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Murarai-strike-1024x567.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Siliguri-Strike-1024x464.jpg)
![](https://ganadabi.com/wp-content/uploads/2020/12/Uttarakhand-Strike.jpg)