কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জাতির জীবনে নতুন আঘাত নামিয়ে এনেছে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির মধ্য দিয়ে। সরকার হিসেব কষেছিল দেশবাসীকে করোনা বিধির দাওয়াই দিয়ে আটকে রেখে, প্রতিবাদ-আন্দোলনের কোনও সুযোগ না দিয়ে শিক্ষার সার্বিক বাণিজ্যিকীকরণের নীল নকশা এভাবেই দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু না, সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দেশব্যাপী প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি। দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করে ৩০-৩১ অক্টোবর সর্বভারতীয় সম্মেলনের ডাক দেয় অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি।
কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথাগতভাবে একটি স্থানে সম্মেলনের আয়োজন না করে কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হল, দিল্লির গান্ধী পিস ফাউন্ডেশন হল এবং চেন্নাইয়ের মাপোসি আরাঙ্গাম হলে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয় এবং অনলাইনে এই তিনটি কেন্দ্রের সমন্বয় করে সংগঠনের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সম্প্রচার করা হয়। এই তিনটি কেন্দ্র ছাড়াও দেশের নানা স্থানে সেভ এডুকেশন কমিটির সদস্য ও শিক্ষানুরাগী মানুষেরা বিপুল উৎসাহে একত্রিত হয়েও বড় পর্দায় সম্মেলনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির সর্বভারতীয় সভাপতি প্রকাশ এন শাহ।
প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অনীশ কুমার রায়। মোদি সরকারের এই শিক্ষানীতির বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক দিকগুলি তুলে ধরে অ্যাকাডেমিক সেশনে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ইরফান হাবিব, অধ্যাপিকা রোমিলা থাপার, ইউজিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুকদেব থোরাট, প্রাক্তন উপাচার্য ও অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী, আসাম ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, মহীশূর জেএসএস ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য এল জওহর নেশান, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চ্যাটার্জী, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শচীদানন্দ সিনহা, অধ্যাপক করুণানন্দন, অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার নায়ক সহ বহু বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী। অ্যাকাডেমিক সেশনের প্রথম দিনের অধিবেশনের সঞ্চালক ছিলেন অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর এবং দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনের সঞ্চালক ছিলেন আন্না ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এস থিলাগর।
প্রতিনিধি অধিবেশন সঞ্চালনা করেন অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য দেবাশীষ রায় এবং মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন অন্ধ্রপ্রদেশ সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক এস গোবিন্দরাজালু। সম্পাদকীয় রিপোর্টে অধ্যাপক অনীশ কুমার রায় শিক্ষার উপর শাসকশক্তির ধারাবাহিক আক্রমণের বিরুদ্ধে সেভ এডুকেশন কমিটির দীর্ঘ আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরেন।
বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা মূল প্রস্তাব ও সম্পাদকীয় রিপোর্টের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট ভূ-বিজ্ঞানী অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি মুখ্যোপাধ্যায় দেশজুড়ে শক্তিশালী ‘সেভ এডুকেশন আন্দোলন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন কমিটির নাম প্রস্তাব করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে প্রকাশ এন শাহকে সভাপতি এবং অধ্যাপক অনীশ কুমার রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি নির্বাচিত হয়।