জনমতের চাপে একদিকে যখন বিহারে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তামিলনাড়ুতে ধীরে ধীরে মদের প্রসার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার উল্টোপথে হেঁটে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজ্যে নতুন ১২০০ মদের দোকান খুলতে চলেছে৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ৮৫ শতাংশ নারী নির্যাতনের ঘটনায় নির্যাতনকারীরা মদ্যপ অবস্থায় থাকে৷ ইতিমধ্যেই নারী নির্যাতনে এ রাজ্য প্রথম সারিতে৷ আরও নতুন ১২০০ মদের দোকান খোলার অর্থ নারীদের উপর নির্যাতন কয়েকগুণ বাড়তেই সাহায্য করা৷ সরকার মদ খাওয়াকে উৎসাহ দিয়ে ছাত্র–যুবসমাজকে বিবেক মনুষ্যত্বহীন নেশাগ্রস্ত অনৈতিক জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ সমাজে যার প্রভাব ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে৷ তীব্র বেকারত্বে জর্জরিত যুব সমাজের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, তা যাতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ আকারে ফেটে পড়তে না পারে, তা–ও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য৷ সরকারের যুক্তি মদ বিক্রি করে কোষাগারে অনেক রাজস্ব আসছে৷ একটি সরকার কতখানি জনবিরোধী চরিত্রের হলে রাজস্ব বৃদ্ধির নামে এ ভাবে যুব সমাজ তথা গোটা সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে সত্যিই রাজস্বের ঘাটতি হলে পুজো কমিটিগুলিকে ২৮ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া ও বিদ্যুতে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করার কী প্রয়োজন ছিল? মন্ত্রীদের সুযোগ–সুবিধা কমানোর পরিবর্তে বেড়েই চলেছে এবং এর সাথে নানা অছিলায় কিছু মানুষের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে আসন্ন নির্বাচনে বাজিমাত করার প্রচেষ্টা চলছে৷ সরকারি অপশাসনের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ যাতে না ওঠে, তাই ছাত্র–যুব সমাজকে নেশাগ্রস্ত করে নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে৷ এই যুবকরাই ভোটের সময় বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বিরোধীদের উপর আক্রমণ যেমন করে তেমনি পাড়ায় পাড়ায় মহিলাদের নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ করে৷
বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে নানা ভাবে তার সুফল লক্ষ করা যাচ্ছে৷ তথ্য বলছে সেখানে ২৭ শতাংশ অপরাধ কমে গিয়েছে৷ প্রয়োজনীয় খাবার, জামা–কাপড় ও সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার প্রচলন বেড়েছে৷ এতদিন যে টাকাগুলি মদের পিছনে খরচ হয়ে যাচ্ছিল এখন মানুষ এর মধ্যেই ১০,০০০ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছে (ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট)৷ দেখা যাচ্ছে ৫৫ শতাংশ পথ দুর্ঘটনা, ২৪ শতাংশ হত্যা, ১৬ শতাংশ লুট ও ৩৭ শতাংশ মারপিট কমেছে৷ মদ নিষিদ্ধ করার পর হিন্দুস্থান টাইমস এর রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে বিহারে রাজস্ব আদায়ের উপর কোনও প্রভাব পড়েনি৷ ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির যুক্তি কোনও ভাবেই ধোপে টেকে না৷
মদের কুপ্রভাব কারওর অজানা নয়৷ আজ ছোট ছোট ছেলে–মেয়েরাও এই নেশার দিকে ঝুঁকছে৷ এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে সমাজ সভ্যতার মারাত্মক ক্ষতি হবে৷ ফলে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে হলে মদের প্রসার বন্ধ করতেই হবে৷ আমাদের দেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতারা মাদক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন৷ আজকের পরিস্থিতিতেও এই ধরনের আন্দোলন দেশজুড়ে গড়ে ওঠা একান্ত প্রয়োজন৷
(৭১ বর্ষ ৯ সংখ্যা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)