পশ্চিমবঙ্গে স্কুল শিক্ষাকে পিপিপি মডেলে বৃহৎ ব্যবসায়িক সংস্থার সঙ্গে মিলে পরিচালনা করার পরিকল্পনার কথা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। তাতে স্কুল শিক্ষার বেসরকারিকরণের নীল নকশাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) রাজ্য কমিটির উদ্যোগে ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল ও সভা সংগঠিত হয়। রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও প্রতিবাদ মিছিল হয়। সংবাদে প্রকাশ, রাজ্য সরকার স্কুল শিক্ষাকে পিপিপি আঙ্গিকে পরিচালিত করার জন্য কয়েকটি বড় কর্পোরেট সংস্থার সংগে বৈঠক করে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে। স্কুলের ভবন, সংলগ্ন জায়গা এবং অন্যান্য পরিকাঠামো বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেবে এবং ওই মালিকরাই স্কুল চালাবে ও স্কুলের মাধ্যম, কোন বোর্ডের অধীনে চলবে ইত্যাদি তাঁরাই নির্ধারণ করবে। এমনকি শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের অধিকারও তাঁদের হাতে থাকবে। দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, সরকারি অর্থ, শিক্ষাপ্রেমী ব্যক্তিদের দান ও সাধারণ মানুষের শ্রমের বিনিময়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে স্কুলের যে সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে তা মুনাফালোভী কর্পোরেট মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া চূড়ান্ত জনবিরোধী ও অনৈতিক। এর ফলে শিক্ষার বেসরকারিকরণ আরও ত্বরান্বিত হবে, ফি বৃদ্ধি হবে, শিক্ষা হবে আরও ব্যয়বহুল এবং যারা বেশি মূল্যে তা কিনতে পারবে তারাই শিক্ষা পাবে। যখন করোনা মহামারির কারণে আর্থিকভাবে মানুষের নাকাল অবস্থা ও স্কুলছুট বাড়ছে, সে কারণেই সরকারের অধিকতর দায়িত্ব নেওয়ার কথা তখন সরকার শিক্ষার দায়িত্ব এইভাবে অস্বীকার করতে চাইছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তেও এমন বেসরকারিকরণের প্রস্তাব আছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরকারকে বিরত হওয়ার দাবি করছি।
এদিন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল শুরু হয় এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে পৌঁছলে একটি প্রতিবাদ সভা হয়। বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড তরুণ কান্তি নস্কর, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড সুব্রত গৌড়ী প্রমুখ।
তীব্র প্রতিবাদ এআইডিএসও-র
স্কুল শিক্ষাকে পিপিপি মডেলের মাধ্যমে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এআইডিএসও। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড মণিশঙ্কর পট্টনায়ক ১৭ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে বেসরকারি মালিকদের হাতে স্কুল শিক্ষাকে তুলে দেওয়ার এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এআইডিএসও ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে। সংবাদে প্রকাশ, ৮০ শতাংশ প্রযুক্তিগত দিকের সঙ্গে ২০ শতাংশ আর্থিক সঙ্গতি থাকলেই সরকারি স্কুলের জমি, বিল্ডিং সহ সমস্ত পরিকাঠামো যে কোনও বেসরকারি সংস্থা বা মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। বিপুল ফি-র বোঝা যারা বইতে পারবে তাদের জন্যই এই সব স্কুলের দরজা খোলা থাকবে। করোনা অতিমারিকে কেন্দ্র করে প্রায় দু’বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল এবং সরকারি অবহেলায় রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ইতিমধ্যেই স্কুলছুট। এই অবস্থায় যখন দরকার ছিল স্কুলছুটদের ক্লাসরুমে ফেরানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা, অর্থনৈতিক সংকটগ্রস্ত এই সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা, শিক্ষার সর্বস্তরে ফি মকুব করা, তখন রাজ্য সরকার জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কিংবা বহু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির দানে গড়ে ওঠা সরকারি স্কুলের জমি, বাড়ি, পরিকাঠামো তুলে দিচ্ছে বেসরকারি মালিকদের হাতে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার জন্য। তিনি বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ মধ্য দিয়ে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে যেভাবে কর্পোরেটদের হাতে তুলেদেওয়ার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছে তাকেই বাস্তবায়িত করছে এ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।