সরকারি ব্যর্থতায় রাজ্যে ভয়াবহ আকার নিয়েছে ডেঙ্গু

গত ক’বছর ধরে বর্ষার শুরুতে এবং শেষে প্রায় তিন মাস গোটা রাজ্যের ব্যাপক সংখ্যক মানুষ বিপর্যস্ত হচ্ছেন ডেঙ্গু জ্বরে৷ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে৷ পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ আকার নিয়েছে যে বেশিরভাগ হাসপাতালের ৭৫–৮০ শতাংশ শয্যাই এই সময়ে ডেঙ্গু রোগীদের দখলে৷ হাসপাতালগুলিতে চূড়ান্ত অপ্রতুল চিকিৎসক–চিকিৎসা৷ তবুও যাঁরা এর মধ্যেও কিছুটা পরিষেবা দিতে চেষ্টা করেছেন তাঁরা জায়গা দিতে না পেরে দিশেহারা৷ অবস্থা এমন হওয়ার কারণ, গত ক’বছর ধরে ডেঙ্গু রোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে৷ আর এ তো জানা কথাই যে, গোডায় সমাধান না করে যদি সমস্যা চাপা দেওয়া হয় তাহলে তা বেড়েই চলে৷ এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে৷

সরকারি উদ্যোগে ডেঙ্গু চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চলতে থাকায় জনস্বাস্থ্যে (পাবলিক হেলথ) যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে রোগের প্রাদুর্ভাব আটকানোর পথে রাজ্য পৌরসভা, পঞ্চায়েত, স্বাস্থ্যদপ্তরগুলি হাঁটল না৷ স্বাস্থ্যদপ্তর রোগ অস্বীকার করায়, ধামাচাপা দেওয়ায়, চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন–ট্রিটমেন্ট ফাইলে রোগের প্রকৃত কারণ না লিখতে বাধ্য করা– এসব চলল লাগাতার৷ মেডিকেল এথিক্স মেনে এই রোগ চেপে যেতে যে চিকিৎসকরা অস্বীকার করছেন, তাঁদের নানাভাবে হেনস্থা, শোকজ– এমনকি সাসপেন্ড করার দিকে দপ্তর এগিয়েছে৷

বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগে গবেষণার দ্বারা প্রকোপ বাডার আগেই রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা যায়৷ তা না করে রোগ চাপা দেওয়ায় কেবল কোনও একটি বছরে চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়েছে তা নয়, রোগের ভয়াবহতা কম দেখানোর কারণে প্রাথমিক যে সব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল, অর্থ, চিকিৎসা এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ করা, হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি করা ইত্যাদি কাজে থেকে যাচ্ছে চূড়ান্ত ঘাটতি৷ ফলে বছর বছর বেড়ে চলেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ৷

এর পাশাপাশি সর্বত্র মশা নিধন কর্মসূচি অবহেলিত হয়েছে৷ দক্ষ এবং অদক্ষ সব ধরনের কর্মীর অভাব থাকায় এ কাজ যথাযথ ভাবে হচ্ছে না৷ বাস্তবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের কর্মীদের কাজে লাগিয়ে এই রোগ নিয়ে কিছু ব্যানার–মাইক প্রচার ছাড়া বিশেষ কিছু হয়নি৷ যে কাজগুলি জরুরি তা হল – ১) জঞ্জাল অপসারণ, ২) বাড়ি এবং এলাকায়, বিশেষত পরিত্যক্ত জমি–কারখানা এবং আস্তাকুঁডে জমা জলে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা, ৩) সর্বত্র নির্দিষ্ট সময় মতো উপযুক্ত পরিমাণে উন্নত মানের মশা মারার তেল প্রয়োগ, ৪) খাল ও নিকাশি সংস্কার, ৫) পৌরসভা এবং সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগে উপযুক্ত সংখ্যক সাধারণ এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য কর্মী দ্বারা দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলা, ৬) সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত প্লেটলেটের ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি৷

উপরোক্ত বিষয়গুলি অবিলম্বে কার্যকর করা সহ ডেঙ্গুতে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের হাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার দাবিতে এস ইউ সি আই (সি) কলকাতা জেলা কমিটির নেতৃত্বে গত ২৬ নভেম্বর কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে বিক্ষোভ দেখানো হয় ও মেয়রের উদ্দেশে স্মারকলিপি দেওয়া হয়৷

(গণদাবী : ৭২ বর্ষ ১৭ সংখ্যা)