Breaking News

সরকারি নেতা-মন্ত্রীদের দেশের মানুষের জীবনমৃত্যু নিয়ে কোন উদ্বেগ নেই – প্রভাস ঘোষ

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রভাস ঘোষ ১৭ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলেনঃ

বর্তমানে আমরা কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় দফার আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছি যা প্রথম দফার থেকে আরও বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর এবং ইতিমধ্যেই বহু মানুষ এই মারাত্মক আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। এতদসত্বেও এই ভয়াবহ অবস্থার মোকাবিলা করতে কি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার, কি অন্যান্য সমস্ত রাজ্যের সরকারগুলি কার্যত কোন রকম কার্যকরী পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করল না।

গত বছর যখন এই রোগ মহামারীর আকার ধারণ করেছিল এবং কয়েক লক্ষ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে এক দুর্বিসহ অর্থনৈতিক সংকটের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল, সে সময় অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছিলাম পর্যাপ্ত হাপাতাল, হাসপাতালে বেডের সংখ্যা, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা প্রতিষেধক টিকা সহ অত্যাবশ্যকীয় সমস্ত রকম ওষুধের চূড়ান্ত অভাব। আজ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সমস্ত সরকার স্বাস্থ্যের মতো অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যে ধরনের অবহেলার পরিচয় দিয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধের সামিল। এই সংকটে যখন দেশে ভ্যাকসিনের খুবই অভাব তখন এই রকম একটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘টিকা উৎসবে’ মেতেছেন। ঠিক এভাবেই গত বছর হাততালি দেওয়া, থালা বাজানো, প্রদীপ আর টর্চ জ্বালানো, সামরিক হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়ানো ইত্যাদি নানা রকম চমক দিতে তিনি সে সময় ব্যস্ত থেকেছেন।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে এই অভাবগুলি পূরণের জন্য সরকার পর্যাপ্ত সময় হাতে পেয়েছিল। দেশের মানুষের জীবনের কোনও মূল্য তাদের কাছে থাকলে এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে তারা ঘাটতিগুলি পূরণ করতে পারত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ হচ্ছে নামমাত্র। অথচ একচেটিয়া মালিকদের জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ক্রমাগত বিশাল পরিমানে বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে, ও অন্যান্য সরকারী খাতে বিপুল পরিমানে ব্যয়বৃদ্ধি হচ্ছে। একদিকে নতুন সংসদ ভবনের নামে জমকালো প্রাসাদ তৈরি, তার চতুর্দিকে মহার্ঘ সাজসজ্জা, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীর বিলাসব্যসনে বিপুল পরিমানে ব্যয় করছে, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার অসহায় দরিদ্র মানুষের কান্না, সামান্য একটু চিকিৎসার জন্য হাহাকার। আর এই সামান্য চিকিৎসার অভাবে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলি মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়ছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী ‘পি. এম. কেয়ার’ ফান্ডে যে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছেন, সেটা কোথায়, কার কেয়ারে ব্যয় হচ্ছে, কেউ জানে না। এটা রহস্যাবৃত।

হিন্দুত্বের এই সব স্বঘোষিত ধ্বজাধারীদের কি আদৌ কোনও মানবিকতা আছে? যখন করোনা মহামারি মৃত্যুদূত রূপে দ্বিতীয়বারের জন্য দাবানলের মতো ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহ বিজেপির শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীরা দিনরাত নির্বাচনী প্রচরে ব্যস্ত। ভোটার কিনতে তারা কোটি কোটি টাকা ছড়াচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত করছে। তাদের একটাই লক্ষ্য, যেভাবেই হোক ভোটে জিতে সরকারি গদির দখল নিতে হবে।

এই রকম ভয়াবহ অবস্থা আজ পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশ জুড়ে। এই হল পুঁজিবাদের অমানবিক চেহারা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবনের কানাকড়িরও মূল্য নেই, কিন্তু বুর্জোয়া শ্রেণির সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য এই ব্যবস্থার রক্ষকরা সর্বদা সচেষ্ট। তাই এটা কোনও বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে, যখন কোটি কোটি মানুষ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত, লক্ষ লক্ষ মানুষ কোভিড মাহামারি এবং অনাহারে প্রাণ হারাচ্ছেন, ঠিক তখনই বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থার ধনকুবের মালিকরা তাদের সম্পদকে বহুগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে। আজ মানব সভ্যতা বিশ্বজোড়া অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য সংকট ও তার সাথে ভয়াবহ আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও এই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইতে নামার জন্য পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা তাদের সমস্ত শক্তি, সামর্থ এবং সম্পদ সংহত করছে না। তারা ব্যস্ত বিভেদের বাণিজ্য যুদ্ধে। এজন্য তারা সামরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য বাজেটে বিপুল হারে ব্যয় বৃদ্ধি করছে। নিজেদের প্রভাবাধীন অঞ্চলের পরিধি এবং সামরিক কর্তৃত্ব বাড়াতে তারা স্থানীয় এবং সীমান্ত সংঘর্ষ বাধিয়ে রেখেছে। এর মধ্য দিয়ে আরও একবার পঁজিবাদের অমানবিক দানবীয় চরিত্র নগ্ন হয়ে গেল। পুঁজিবাদের কাছে সর্বোচ্চ মুনাফাই হল প্রধান, মানুষের জীবনের দাম তার কাছে বিন্দুমাত্র নেই।

আজকের দিনের সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য হল, নিজ নিজ দেশের সাম্রজ্যবাদী-পুঁজিবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে শোষিত জনগণের সংঘবদ্ধ, সুসংগঠিত গণআন্দোলন গড়ে তুলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে শাসকদের বাধ্য করা। একই সাথে প্রয়োজন ভারত সহ সমস্ত দেশে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার কাজকে ত্বরান্বিত করা।