প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বারবার ঘর ভাঙবে, আর আমরা জোড়াতালি দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করব– এই কি আমাদের ভবিতব্য? গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগণা জুড়ে এই প্রশ্নটি আবেগরুদ্ধ কন্ঠে উঠছে। শুধু মহা প্রলয়ঙ্করী আমপান নয়, আয়লা, বুলবুল, হুদহুদ, ফণির ফণা তোলা তাণ্ডবে বারবার এ জেলার মাটির ঘর, বাঁশ, খড়ের চালা, টিনের বা টালির ঘর ধূলিসাৎ হয়েছে। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের অভিঘাত সহ্য করার মতো শক্তপোক্ত পাকাবাড়ি নির্মাণ করার কোনও উদ্যোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০২২ সালের মধ্যে সকল দেশবাসীর জন্য পাকা ঘরের অঙ্গীকার বাস্তবে ঘরভাঙা এই মানুষদের প্রতি একটা নিষ্ঠুর পরিহাস।
সরকার বদলায়, পাকা ঘরের যোজনার নাম বদলায়– মানুষের মাথার ছাদ আর তৈরি হয় না। কংগ্রেস আমলে এর নাম ছিল, ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা।’ মোদি সরকার এসে নাম দিল ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’।
এ রাজ্যেও ‘আমার ঠিকানা’ প্রকল্প নাম পাল্টে হয়েছিল ‘গীতাঞ্জলি’। এখন তা আবার নাম পাল্টে হয়েছে ‘বাংলা আবাস যোজনা’। নাম পাল্টানোর রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড়ই কেবল চলছে। কিন্তু গরিব, নিম্নবিত্ত অসহায় মানুষগুলি নেতা-মন্ত্রীদের সুমধুর বচন ভিন্ন কিছু পেল না, ঘর দূরস্থান। উন্নয়নের ফোলানো ফাঁপানো বিজ্ঞাপনের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া এই মারাত্মক বাসস্থান সঙ্কট নগ্ন করে দেখিয়ে গেল আমপান। আরও দেখিয়ে গেল মানুষের দুঃখদুর্দশা নিয়ে ভোটসর্বস্ব ক্ষমতাসীন বা তথাকথিত বিরোধীরা কী নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে।
এতবড় বিপর্যয়ে মোদি সরকার মাত্র এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছে। এমন একটি পুঁজিবাদী সরকার কেন্দে্র অধিষ্ঠিত যে সরকার মন্দার আবহে পুঁজিপতিদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ত্রাণ প্যাকেজ দিয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের সামান্য বাসস্থানের ব্যবস্থাটুকু করতে পারে না। রাজ্য বিজেপি এই বঞ্চনার প্রতিবাদে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছে।
সরকারি উদ্যোগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাকা ঘর নির্মাণ করে সর্বস্বান্ত মানুষের পুনর্বাসন চাই– এটাই এই সময়ের প্রধান দাবি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কথার ফুলঝুরিতে আর কতকাল ভোলাবে!