চালের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ, ডিমের দাম ১০ শতাংশের বেশি, জ্বালানির দাম ৮ শতাংশ এবং ডাল-আনাজের দাম বৃদ্ধিতে (এনএসও-র রিপোর্ট-গত মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চ মাসে) সাধারণ মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। দু’বছর যাবত করোনা অতিমারি পরিস্থিতি, তার উপর বিপুল মূল্যবৃদ্ধিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি সংকটের মুখে পড়েছে। ডিম, সয়াবিন দূরের কথা, চাল-ডালের খিচুড়িও মিলছে না বহু জায়গায়। শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের খাবারের মান নামছে এবং পরিমাণও কমছে।
দক্ষিণে সুন্দরবন থেকে উত্তরে চা-বাগান সর্বত্র অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি ধুঁকছে। পানীয় জল, শৌচালয়, রান্নাঘর সহ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব সব কেন্দ্রগুলিতেই চোখে পড়ে। কোনও কোনও কেন্দে্র নীল-সাদা রঙের পোচ পড়লেও ভেতরের মলিন দশা চোখ এড়ায় না। অথচ এই কেন্দ্রগুলির উপর গরিব পরিবারের শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের টিকাকরণ, পুষ্টি, শিশুদের শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
১৯৭৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন এই প্রকল্প চলছে। সরকার বদলেছে, নেতা বদলেছে, কিন্তু এই প্রকল্পের সংকট কমেনি, বরং তা আরও বেড়েই চলেছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা নামমাত্র বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন বছরের পর বছর। এর উপর ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’– কেন্দ্রগুলির জন্য বরাদ্দ সরকারি সাহায্য এসে পৌঁছয় না মাসের পর মাস। বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় নিজেদের পকেট থেকে বাজার খরচ সামলাতে হয় বহু কেন্দে্রর অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। সরকারি সাহায্য না পেয়ে শয়ে শয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা সহ সর্বত্রই একই অবস্থা। জেলাগুলির বহু কেন্দ্র বন্ধ, অনেকগুলি অনিয়মিত ভাবে চলছে। ছ’ বছরের শিশু থেকে প্রসূতি– কেন্দ্রগুলির সুবিধা-প্রাপকরা পড়েছেন বিপদে। প্রশাসন নিশ্চুপ। কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সরকারের হেলদোল নেই। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বুঝেছেন, আবেদন-নিবেদন নয়, সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতি, কেন্দ্রগুলির উপযুক্ত পরিকাঠামো সহ নানা দাবি আদায় করতে হবে আন্দোলনের পথেই। তাঁরা সংগঠিত হয়ে শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি-র নেতৃত্বে গড়ে তুলেছেন আন্দোলন।