নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ এবং সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রথম দশটি ধনী দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ষষ্ঠ৷
২০১৭ সালে ভারতের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৩০ বিলিয়ন ডলার৷ ৬৪ হাজার ৫৮৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আমেরিকা ছিল প্রথম স্থানে৷ এরপর ছিল চীন, জাপান, ইউ কে ও জার্মানি৷ এর পরেই ষষ্ঠ স্থানে ভারত৷
মোট সম্পদের পরিমাণ বলতে বোঝায় কোনও দেশের নাগরিকদের দায় বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পদ, যার মধ্যে রয়েছে অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ টাকা, ব্যবসার সম্পদ এবং ইকুইটি৷ এর মধ্যে অবশ্য সরকারের সম্পদ অন্তর্ভুক্ত নয়৷ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারতের স্থান সবার উপরে৷ ২০১৬ সালে যেখানে ভারতের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৫৮৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ২৩০ বিলিয়ন ডলার৷ অর্থাৎ বৃদ্ধি ২৫ শতাংশ৷ অন্যদিকে আগের দশ বছরে (২০০৭ থেকে ২০১৭) ভারতের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ১৬৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ২৩০ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ বৃদ্ধি ১৬০ শতাংশ৷
এই রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে বাস করেন ৩ লক্ষ ৩০ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি যাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি৷ এই রকম ধনী ব্যক্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি আমেরিকায়– ৫০ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪০০ জন৷ ভারতে কোটিপতির সংখ্যা ২০ হাজার ৭৩০ জন, বিশ্বে সপ্তম৷ লক্ষ কোটিপতির সংখ্যায় ভারতের স্থান তৃতীয়৷ আমেরিকা ও চীনের পরেই তার স্থান৷
দেশের মোট ধনসম্পদের এত বৃদ্ধি হলে কী হবে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কিন্তু দু’বেলা ভাত জোটানো দুষ্কর৷ আন্তর্জাতিক ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ক্ষুধা সূচকের মাপকাঠিতে ১১৯ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০০৷
এশিয়াতে কেবল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের স্থান ভারতের নিচে, ভারতের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, চীন ও বাংলাদেশের স্থানও ভারতের উপরে৷ এর আগে ২০১৪ সালে ভারতের স্থান ছিল ৭৬ টি দেশের মধ্যে ৫৫–তে৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে অপুষ্টির নিরিখে ভারতের অবস্থা গুরুতর৷ ভারতের এই শোচনীয় অবস্থার কারণ শিশুদের তীব্র অপুষ্টি৷ ভারতের শিশুদের মধ্যে ৫ বছর বা তার কমবয়সী ২০ শতাংশেরও বেশি শিশুর ওজন তাদের উচ্চতার তুলনায় খুবই কম৷
এ থেকেই বোঝা যায়, এই বিপুল সম্পদ জমা হয়েছে কিছু পুঁজিপতি বড় ব্যবসায়ীদের হাতে, দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় যাদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প৷ দেশের অধিকাংশ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এই সম্পদের নাগাল পায় না৷ অথচ তাদেরই ঘাম ঝরানো পরিশ্রমেই সৃষ্টি হয়েছে এই সম্পদ৷
পুঁজিবাদী এই দেশে পুঁজিপতি শ্রেণির রাজনৈতিক ম্যানেজার সরকার ও শাসক দলগুলি পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা করাকেই ও তাদের উন্নয়নকেই দেশের উন্নয়ন বলে প্রচার করে৷ আর সাধারণ মানুষ এদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ভুলে একবার এ দল একবার ও দলকে ক্ষমতায় বসায়৷ তাই একের পর এক সরকার বদল হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনের সমস্যাগুলির সমাধান হয় না৷
(৭০ বর্ষ ৪২ সংখ্যা ৭জুন, ২০১৮)