সমাবেশ ব্রিগেডে প্রস্তুতি ঘরে ঘরে

কেরালা

৫ আগস্ট, এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) দলের প্রতিষ্ঠাতা, এ যুগের মহান মার্ক্সবাদী দার্শনিক কমরেড শিবদাস ঘোষের জন্মশতবর্ষের সমাপনী সমাবেশ। ওই দিন কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বেলা ১২ টায় এক ঐতিহাসিক সমাবেশ শুরু হবে। তার প্রস্তুতি চলছে রাজ্যে রাজ্যে জেলায় জেলায় গ্রাম থেকে শহরে। সর্বভারতীয় এই সমাবেশ সফল করতে ছোট-বড় অসংখ্য সভা, পথসভা, অটো-টোটো-ম্যাটাডোর-ভ্যানে মাইক প্রচার চলছে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়। ছাত্র-যুব-মহিলা-কৃষক-খেতমজুর থেকে শ্রমিক মহল্লায় চলছে মুক্তির দিশারি এই মানুষটির যুগান্তকারী চিন্তাধারা নিয়ে নিবিড় চর্চা।

অসংখ্য সাধারণ মানুষ বুঝে নিতে চাইছেন ঠিক কী কারণে ব্রিগেডের সমাবেশে যেতে হবে তাঁদের। বুদ্ধিজীবী থেকে অসংগঠিত নানা ক্ষেত্রের মানুষ এই চিন্তানায়ককে জানতে বুঝতে জড়ো হচ্ছেন। শহরের বস্তি এলাকা, ফুটপাতে বসবাসকারী মানুষরাও জানতে চাইছেন এই দার্শনিকের জীবন-সংগ্রামের কথা। ডাক্তার-অধ্যাপক-আইনজীবী-সরকারি কর্মচারী সহ সমাজের বিশিষ্ট জনেরা নানা মিটিং-এ উপস্থিত হয়ে শুনছেন দলের বক্তব্য। নিজেরা বহু জায়গায় মিটিং আয়োজনে সহযোগিতা করছেন এবং ব্রিগেডের সভায় যাওয়ার জন্য আত্মীয়-বন্ধুদের বলছেন। আশাকর্মী-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী-পৌর স্বাস্থ্যকর্মী-পরিচারিকা-মোটরভ্যান চালক-টোটো চালক-রিক্সা চালক-নির্মাণ শ্রমিক-চা-শ্রমিক-ঠিকা শ্রমিক-হোসিয়ারি শ্রমিকরা তাঁদের একদিনের রোজগার বন্ধ রেখে ব্রিগেড যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছাত্ররা ওই দিন কলেজ না গিয়ে এবং যুবকেরা কাজের জায়গায় ছুটি নিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। এই আগ্রহের উৎস কোথায়? তাঁরা জানতে চাইছেন জীবন ঘিরে যে হাজারো সমস্যা– তার সমাধান কোথায়? ভোটসর্বস্ব দলগুলি তো এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাই এস ইউ সি আই (সি)-র বক্তব্য জানতে চান তাঁরা।

সেজে উঠছে কলকাতার ব্রিগেড চত্বর এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা। হাওড়া, শিয়ালদা স্টেশন চত্বর, কলেজ স্ট্রিট-শ্যামবাজার-মানিকতলা-উল্টোডাঙা-বিধাননগর থেকে টালিগঞ্জ-রাসবিহারী-হাজরা-ভবানীপুর-পার্ক স্ট্রিট-ধর্মতলা-বউবাজার শিবদাস ঘোষের প্রতিকৃতি সংবলিত ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে অজস্র। লাগানো হচ্ছে বিপ্লবী সংগ্রামের প্রতীক রক্তপতাকা, এস ইউ সি আই (সি) নামাঙ্কিত ব্যানার। স্বেচ্ছাসেবকেরা দিনরাত এক করে এগুলি তৈরি করছেন, বিভিন্ন জায়গায় লাগানোর ব্যবস্থা করছেন।

চলছে ৫ আগস্টের সভার জন্য আন্তর্জাতিক এবং কমরেড শিবদাস ঘোষকে নিয়ে রচিত সঙ্গীত এবং নানা গণসঙ্গীতের রিহার্সাল। কিশোর বাহিনী কমসোমলের সদস্যরা কয়েক মাস ধরে প্যারেড রিহার্সাল করছেন, যাতে নিখুঁত ভাবে গার্ড অব অনার জানানো যায়। কমরেড শিবদাস ঘোষের বিশাল প্রতিকৃতিতে রেড স্যালুট করে সম্মান জানানোর জন্য কমসোমল সদস্যদের মধ্যে এক আবেগময় অনুভূতি কাজ করছে। মহান এই চিন্তানায়কের নানা বিষয়ে দিকনির্দেশকারী অমূল্য শিক্ষার উদ্ধৃতি প্রদর্শনী হবে ব্রিগেডে। তা তৈরির জন্য একদল কমরেড দিনরাত পরিশ্রম করে কাজ করছেন। বইয়ের স্টল কী ভাবে সাজানো যায় তা নিয়েও চলছে চর্চা। দলের মেডিকেল ইউনিটের সদস্যরা মেডিকেল ক্যাম্প করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

চলছে নানা রাজ্য এবং জেলা থেকে আসার প্রস্তুতি। আস্ত ট্রেন বুক করে, কামরা রিজার্ভ করে, বাস রিজার্ভ করে, নদীপথে ভুটভুটিতে করে হাজার হাজার মানুষ ব্রিগেডে আসবেন। দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রত্যন্ত এলাকা গোসাবা, কে প্লট, জি প্লট, এল প্লট থেকে ভোররাতে যন্ত্রচালিত নৌকোয় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে বাস ধরে ব্রিগেড আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মৎস্যজীবী, স্কিম ওর্য়ার্কার এবং পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। জেলার নামখানা, জয়নগর, ক্যানিং, কুলতলি, বজবজ, রায়দিঘি সর্বত্র দলের কর্মী-স্বেচ্ছাসেবকরা ঘরে ঘরে চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষের জন্মশতবর্ষের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। কৃষক যেমন করে জমিতে বীজ পুঁতে জল-সার দিয়ে অপেক্ষা করে সোনার ফসলের, সেরকমই প্রতিটি পরিবারে ছাত্র-যুব-মহিলাদের মধ্যে দল সম্পর্কে আকর্ষণ তৈরির চেষ্টা করছেন, দলের নেতাদের বক্তব্য শোনার মন তৈরি করছেন কর্মীরা। বহু জায়গায় স্থানীয় ছাত্র-যুবকেরা দলের নেতাদের কাছ থেকে বুঝে নিচ্ছেন ব্রিগেড সফল করতে তাদের কী ভূমিকা নিতে হবে। প্রত্যেকে এক একজন সংগঠকের মতো দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।

সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, তার বিপরীতে ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার গ্রামীণ মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে। দলের শিক্ষায় কর্মীরা বলছেন, ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি নয়, লড়ে অধিকার আদায় করতে হবে সাধারণ মানুষকেই।’ কৃষক-খেতমজুর-দিনমজুর-ছোট ব্যবসায়ী-দোকানদার-দর্জিশ্রমিকরা তৈরি হচ্ছেন ট্রেনে-বাসে-ম্যাটাডোরে করে ব্রিগেড আসার জন্য। তারা অর্থসংগ্রহ করছেন। কেউ রুটি, কেউ চিঁড়ে-মুড়ি নিয়ে সভায় আসার পরিকল্পনা করছেন। মহিলারা ঘরের ছোট শিশুকে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে রেখে, কেউ সঙ্গে করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছেন। জেলার বহু অঞ্চল নদীবহুল। নদীপথে লঞ্চ, নৌকোতে বহু মানুষকে আসতে হবে অনেক বিপদের ঝুঁকি নিয়ে। কাঁকড়া-মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের পেটে যেতে হয় সুন্দরবনের এই এলাকার মানুষজনকে, তারা জীবনের প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করেন। তাঁরা জানতে আসবেন এস ইউ সি আই (সি) দলের লড়াইয়ের উৎস মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা। তাদের জীবনের শোষণ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষের বক্তব্য শুনতে আসবেন। আবার যাঁরা একসময় দ্বীপগুলি থেকে মাইলের পর মাইল নদীপথে নৌকায় দাঁড় বেয়ে রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা পৌঁছতেন পার্টির মিটিংয়ে, তাঁরা আজ প্রবীণ। তাঁদের অনেকেই এই সভায় আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে কয়েক মাস ধরে চলেছে শিবদাস ঘোষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা সভা, কর্মী বৈঠক। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যেও দলের প্রার্থীরা সাধারণ মানুষের কাছে সর্বত্র ব্রিগেড সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনী সভাগুলিতে দলের বক্তব্য মানুষ আগ্রহের সাথে শুনেছেন, পথসভাগুলিতে মানুষ এসে নাম লিখিয়েছেন ব্রিগেডে যাওয়ার জন্য। বর্ধমান শহরে বুক স্টল, উদ্ধৃতি প্রদর্শন, প্রচার সভা এবং অর্থসংগ্রহ করা হয়। রিক্সাচালক, টোটো চালক, হকার, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক সকল স্তরের সাধারণ মানুষ দলের তহবিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা থেকে বাসে করে এবং আগের দিন রাতের ট্রেনে মানুষজন পৌঁছবেন। রাতে ট্রেনে যারা আসবেন তাদের স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া এবং আবার নিয়ে যাওয়ার জন্য ছোট গাড়ি বা ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ আগস্ট ভোর থেকেই ট্রেনে করে মানুষ কলকাতা রওনা দেবেন।

নদীয়া উত্তর সাংগঠনিক কমিটির উদ্যোগে করিমপুর থেকে বেথুয়াডহরির অসংখ্য স্থানে প্রচার সভা, গ্রুপ বৈঠক হয়। মোটরভ্যান চালকরা মিটিং করে তাঁদের পরিবারের সকলকে নিয়ে ৫ আগস্ট বিগ্রেড সমাবেশে যাওয়ার অঙ্গীকার নেন। জেলা নেতৃত্ব বলেন, জেলা থেকে অসংখ্য বাস এবং ট্রেনে করে ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা দেবেন সাধারণ মানুষ ও কর্মীরা।

নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সর্বত্র চলছে ছোট ছোট গ্রুপ বৈঠক। কৃষ্ণনগরে শিক্ষক, অধ্যাপক ও অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের নিয়ে শিবদাস ঘোষের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে আলোচনা সভা হয়। প্রচারের জন্য কৃষiরনগর শহর জুড়ে লালপতাকা, ‘ব্রিগেড চলো’ ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে টোটো-মাইক সহযোগে চলছে লিফলেট বিতরণ ও অর্থ সংগ্রহ।

হাওড়ার বাগনান সহ সর্বত্র বহু সভা, মিছিল, ছাত্র-যুব মিটিং হয়। হাওড়া গ্রামীণ সাংগঠনিক জেলা থেকে ব্রিগেড সমাবেশে যাওয়ার জন্য বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। লোকাল ট্রেনেও বহু মানুষ যাবেন। হাওড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে প্রচার হয়েছে।

কোচবিহার শহরে দলের প্রচার শুনে কয়েকজন সাধারণ মানুষ অফিসে এসে বলে গেছেন তাঁরা কলকাতা যাবেন। কয়েকজন দোকানদার সকালে বেচাকেনার অভাবে চাঁদা দিতে না পারায় পরে পার্টি অফিসে এসে চাঁদা দিয়ে গেছেন। ব্রিগেড সমাবেশের ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছিল শহর লাগোয়া টাকাগাছ এলাকায়। একজন ফুচকা বিক্রেতা কর্মীদের ডেকে বলেন, আমাকে একটা ফ্লেক্স দিয়ে যাও, আমি প্রতিদিন ফ্লেক্সটা আমার দোকানে টাঙিয়ে রাখবো। তিনি প্রতিদিন দোকানে ফ্লেক্সটি টাঙিয়ে ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার করেন। এই ছোট ছোট ঘটনাগুলি দেখিয়ে দেয় ব্রিগেড প্রচার সাধারণ মানুষের মধ্যে অনুরণন তুলতে পেরেছে।

 কোচবিহার জেলার এলাকায় এলাকায় গ্রুপ সিটিং, পথসভা, মাইকপ্রচার, সাইকেল মিছিল, বুকস্টল করে প্রচার চলছে। ৬০-৭০ কিলোমিটার দূর থেকে কর্মী সমর্থকরা ৪ আগস্ট ভোরেই রওনা দেবেন সকাল ১০টার মধ্যে নিউ কোচবিহার স্টেশনে পৌঁছে স্পেশাল ট্রেনে ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য।

পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় দলের কর্মীরা এখন শেষ পর্বের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। পূর্ব মেদিনীপুরের ট্রেন রুট সংলগ্ন এলাকাগুলি থেকে প্রধানত ট্রেনে এবং দূরের অঞ্চলগুলি থেকে বাস রিজার্ভ করে সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ট্রেন ছাড়াও শতাধিক বাস ইতিমধ্যে রিজার্ভ করা হয়েছে। শুধু এই জেলা থেকেই ১০-১২ হাজার মানুষ যোগ দেবেন সমাবেশে। প্রচুর দেওয়াল লিখন ছাড়াও পূর্বের মেচেদা তমলুক কাঁথি, বাজকুল, হলদিয়া পাঁশকুড়া, পশ্চিমের মেদিনীপুর, বেলদা, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা, খড়গপুরের মতো শহর ও গঞ্জগুলিতে চোখে পড়ছে ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন, ব্যানার, হোর্ডিং, কমরেড শিবদাস ঘোষের ছবি এবং উদ্ধৃতি। বিভিন্ন জায়গায় তা নিয়ে ছোট, বড়, ঘরোয়া সভা হচ্ছে। জেলার প্রায় প্রতিটি গঞ্জে বাজারে হাটে স্টেশনে প্রায় প্রত্যেকদিন প্রচার কর্মসূচি চলছে। সাড়া দিচ্ছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষ। আবার ৫ আগস্টের কর্মসূচি যত এগিয়ে আসছে শিক্ষক অধ্যাপক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আইনজীবী সরকারি কর্মচারীদের মধ্যেও কমরেড শিবদাস ঘোষের জীবন ও সংগ্রাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে উত্তরোত্তর। এদের আগ্রহ ও পরামর্শক্রমে বহু জায়গায় আলোচনা সভা হচ্ছে। তারা গভীর আগ্রহে এই কর্মসূচির সাফল্যের জন্য আর্থিক সাহায্য করছেন, অনেকে ব্রিগেডের সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে সদ্য। এখনও এলাকায় এলাকায় ঘটছে কিছু অশান্তির ঘটনা। নির্বাচনসর্বস্ব দলগুলির মধ্যে সুবিধাবাদী আঁতাত এবং তার মধ্যেও পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর কোথাও জিত, কোথাও অল্প কিছু ভোটে হার হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করেই এলাকায় এলাকায় দলের সমর্থক বহু পরিবার, বাড়ির সকলকে নিয়েই সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকেই নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সমাবেশে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। গভীর আবেগে দিনরাত কাজ করে চলেছেন দলের কর্মীরা। সমর্থকরা এগিয়ে আসছেন পরিশ্রম, অর্থ, চাল সাহায্য দিয়ে এই কর্মসূচিকে সফল করার জন্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের উত্তর ও দক্ষিণ দুই সাংগঠনিক জেলা মিলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ পর্যন্ত ট্রেন ছাড়াও প্রায় ১০০টি বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ১০ হাজার মানুষ ব্রিগেডে যাবেন।

উত্তরবঙ্গ জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি। ধান চাষ এবং চা-এর ভরা মরসুম। কৃষকদের মাঠ থেকে মুখ তোলার অবকাশ নেই। এরই মধ্যে সংগঠকদের চাষের মাঠে নেমে ৫ আগস্টের প্রস্তুতির কাজ করতে হচ্ছে। বিগত বছরগুলিতে কাঁচা চা পাতা ৪৫-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ বছর চা-চাষিরা কেজি প্রতি ১৩-১৫ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। তার মধ্যেও ব্রিগেডের সভায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্রিগেডে যাওয়ার় জন্য কৃষকদের অনেকে ধান রোপণের কাজ আগে থেকেই করে নিচ্ছেন।

দলের মহান আদর্শকে বুকে বহন করে বানারহাট, মালবাজার সহ জেলার বিস্তীর্ণ চা বাগান বলয় এবং ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর, রাজগঞ্জ ব্লকের বিস্তীর্ণ কৃষি বলয় এবং জলপাইগুড়ি জেলার যে সামান্য কিছু কারখানা আছে সেখান থেকে শ্রমিক সহ কয়েক হাজার মানুষ ব্রিগেড সমাবেশে আসবেন।

দার্জিলিং-এ সমতলের প্রায় সমস্ত এলাকায় প্রচার হয়েছে। চা শ্রমিক, কৃষক, পাথর ভাঙা শ্রমিক, ভ্যান চালক, দিনমজুর, পরিচারিকা, নন-স্কিলড কর্মী, স্কিম ওয়ার্কার, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের ডাক্তার সহ সর্বস্তরের ছাত্র এবং গ্রাম শহরের সাধারণ মানুষের কাছে কর্মীরা কমরেড শিবদাস ঘোষের নাম ও এসইউসিআই(কমিউনিস্ট) দলকে নিয়ে গেছে। অসংখ্য গ্রুপ বৈঠক হয়েছে। অবিশ্রান্ত বর্ষণ, প্রখর রৌদ্রতাপকে উপেক্ষা করে কর্মীরা বৈঠক করে সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য জনগণকে প্রস্তুত করেছেন। জেলায় এই প্রচার আন্দোলনে ছাত্রকর্মীদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তারা চা বাগান সহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রদের মধ্যে প্রচার করতে গিয়ে চা শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পরিচারিকা মহিলা সহ সাধারণ মানুষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। শিলিগুড়ি শহরে পরিচারিকাদের একটি কমিটি ও শিশু কিশোরদের ক্লাব তৈরি হয়েছে।

অসংখ্য নতুন এলাকায় প্রচার ও যোগাযোগ করা হয়েছে। সেগুলি হল– নকশালবাড়ি, নেপাল লাগোয়া মেচি বস্তি, পানিট্যাংকি থেকে শুরু করে বাতাসি, ঘোষপুকুর, খড়িবাড়ি বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গোসাইপুর, তারাবাড়ি, বালাসন, আলসিয়া বাজার, সিসাবাড়ি, নিশ্চিন্তপুর চা বাগান, পাথরঘাটা অঞ্চল। মেডিকেল-সুশ্রুতনগরকে কেন্দ্র করে মেডিকেল কলেজ কলমজোত, কাওয়াখালি, নিমতলা, ঠিকনিকাটা। শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের টিকিয়াপাড়া, বাগরাকোট, কলাবাগান সর্বত্রই শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারা নিয়ে পৌঁছে গেছেন দলের কর্মীরা। কালিম্পং ও দার্জিলিং-এও যোগাযোগ হয়েছে। ফাঁসিদেওয়া ফুলবাড়িকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় প্রচার চালানো হয়।

পুরুলিয়ায় এ বছর এখনও তেমন বৃষ্টি হয়নি, হয়ত সেই সময়েই চাষের কাজ শুরু হয়ে যাবে, আবার খরা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, তবুও কৃষকদের মধ্যে সমাবেশে যাওয়ার প্রবল উৎসাহ। নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে স্টেশন পৌঁছনোর জন্য গাড়ি রিজার্ভ করছেন। পুরুলিয়া উত্তরে আনলোডিং, মুটিয়া, ঠিকা শ্রমিক, রঙ শ্রমিক সহ বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা মিটিং করে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। পরিচারিকারা কাজের বাড়ি থেকে ছুটি নেওয়ার় পরিকল্পনা করছেন। মহিলারা সংগঠিত হয়ে মিটিং করছেন। ছাত্র-যুবরাও বিভিন্ন পাড়া, গ্রাম ধরে বৈঠক করছে, কলেজে কলেজে প্রচার চলছে। পুরনো দিনের পার্টি কর্মী যাঁদের মধ্যে অনেকেই কমরেড শিবদাস ঘোষকে চাক্ষুষ করেছেন, তাঁদের অনেকেই আজ বয়সের ভারে ন্যুr, কেউ অসুস্থ, তারা কমরেড শিবদাস ঘোষের জন্মশতবর্ষের সমাপনী সমাবেশে আসতে খুবই আগ্রহী। তাদেরই কয়েকজন বাস রিজার্ভ করার জন্য আর্থিক ব্যয় বহন করেছেন। পুরুলিয়া দক্ষিণের মানবাজার, বান্দোয়ান, আড়শা সহ নানা গ্রামীণ এলাকায় শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রচার চলছে জোরকদমে।

মালদা জেলার ১৫টি ব্লকের মধ্যে ১০টি-তে দেওয়াল লিখন, পোস্টারিং এবং কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গ্রাম বৈঠক, মিটিং হয়েছে, বাজারে মাইক প্রচার হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, ইংলিশ বাজার, গাজোল, আলমপুর সহ অন্যান্য জায়গায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মিটিং করেছেন। সমাপনী সমাবেশ উপলক্ষে এআইইউটিইউসি-র পক্ষ থেকে ১৩ জুন শ্রমিকদের বিশাল মিটিং হয়। এতে জেলার ১৫টি ব্লকের শ্রমিকরা অংশ নেন। এ আই ডি এস ও ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করছে। ট্রেনে শত শত কমরেড আসবেন। বয়স্ক, অসুস্থরাও এই সমাবেশে আসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও প্রচার, গ্রুপ বৈঠক, বুক স্টল, উদ্ধৃতি প্রদর্শনী, সাইকেল মিছিল, বাইক মিছিল চলছে। এ ছাড়া জেলায় জেলায় গড়ে ওঠা কমরেড শিবদাস ঘোষ জন্মশতবর্ষ কমিটির উদ্যোগে সভা-সমাবেশ হচ্ছে। এ ভাবেই জেগে উঠেছে গ্রাম-শহর।