বেশ কিছু দিন ধরে কতগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে ভিড় বাড়িয়ে চলেছে। আজ মানুষের উনুন জ্বালানোর কোনও উপায় থাকছে না। পর্যাপ্ত কাঠ ও গোবরের ঘুঁটেও পাওয়া যায় না। রেশনে কেরোসিন সহজ প্রাপ্য নয়, তার দামও ১০০ টাকা লিটার ছাড়িয়ে গেছে। রান্নার গ্যাসের দাম ১১০০ টাকার কাছাকাছি। খাবার জিনিসের দাম ক্রমবর্ধমান। এ দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বিদ্যুতের মাশুল বাড়বেই।
আমরা যারা ছোটবেলায় কংগ্রেসি শাসন দেখেছি, কেরোসিনের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ছাত্রদের মিছিল, বই-খাতার দাম বাড়ার প্রতিবাদে ছাত্রদের মিছিল ভোলার নয়। যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে দেখতাম খবরের কাগজের পাতায় লেখা হত, আন্দোলন করে ‘ঘেরাও মন্ত্রী’র দল। বড় হয়ে জেনেছি এই মন্ত্রী আসলে সুবোধ ব্যানার্জী। যখন যৌবনে পা রাখলাম দেখলাম দীর্ঘ ৩৪ বছরের সিপিএমের রাজত্বে শিক্ষার দাবিতে, বাসভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, হাসপাতালে চার্জ বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, ঢালাও মদের লাইসেন্সের বিরুদ্ধে, ব্যাপক নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলন করছে সেই ‘ঘেরাও মন্ত্রীর’ দলটাই।
কংগ্রেসের মতো করেই সিপিএম ফ্রন্ট, তারপর তৃণমূল শাসন– পার্থক্য পাওয়া ভার। প্রশ্ন জাগে, সব শাসকই কেন এমন জনবিরোধী? শাসক আসলে কার পক্ষে? তারা ঠিক কোন মানুষের উন্নতি চায়? দেশের নারী সুরক্ষা বলতেই বা তারা কী বোঝাতে চায়? শিক্ষার ক্ষেত্রে তারা কী ভূমিকা পালন করছে? কেন তারা গবেষণাগুলোতে অর্থ সাহায্য ক্রমশ কমিয়ে দিচ্ছে? কেন শিক্ষাকে ব্যবসায়ীকরণ করছে? আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও কেন কোনও শাসকই কৃষকের আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিল না? স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত তারা দেশজুড়ে শিক্ষার প্রসারে অবৈতনিক শিক্ষার প্রয়াস গ্রহণ করল না কেন? কেন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করেও নারী সুরক্ষায় কোনও সদর্থক ভূমিকা পালন করে না? ভাবতে লজ্জা করে একটা দেশে ৬ মাসের শিশু থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পায় না।
এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখছি গণদাবীর পাতায় তা বারবার উঠে আসে। এই পত্রিকাটির ভূমিকা বড়ই সদর্থক। পত্রিকাটি যথার্থই সমাজ দর্পণ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠছে। এর আরও বিস্তার ঘটুক।
পুষ্পিতা মালিক, কলকাতা – ৭৫