নভেম্বর বিপ্লব পূর্ববর্তী রাশিয়ার স্বাস্থ্য পরিষেবা ছিল যৎসামান্য এবং তা অতি সাধারণ মানের৷ যেটুকু ছিল তা ভোগ করত সে দেশের সম্রাট বা জার এবং অভিজাত শ্রেণি৷
গরিবের ভরসা ছিল শিক্ষা–দীক্ষাহীন গ্রামীণ চিকিৎসক, গ্রামের যাজক এবং ঈশ্বর! রোগ হলে ঈশ্বরের কাছে চোখের জল ফেলা আর প্রিয়জনের শেষযাত্রায় যোগ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না৷ কলেরা, স্মলপক্স, টাইফাস, যক্ষ্মা ও সূতিকা জ্বরে লক্ষ লক্ষ মানুষ জারশাসিত রাশিয়ায় অসহায়ভাবে প্রাণ হারাত৷ শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ২৬০ জন৷ মানুষের মৃত্যুর হার ছিল হাজার প্রতি ২৯.৪ জন৷
১৯১৩ সালে ৪,৩৬৭টি গ্রামীণ মেডিকেল স্টেশনে ৪,৫৩৯টি স্বাস্থ্য সহকারী (ফেল্ডসার) জাতীয় পদ ছিল এবং ৮ কোটি গ্রামীণ জনসাধারণের জন্য ছিল ৪৯০৮৭টি হাসপাতাল শয্যা৷ সারা দেশের শয্যা সংখ্যা ছিল ২,০৭,৩০০টি৷ প্রতি হাজারে ১.৩টি শয্যা৷ ওই সালের হিসাবে সমগ্র রাশিয়ার ১৫ কোটি ৯২ লক্ষ লোকের জন্য ২৩,১৪৩ জন মাত্র চিকিৎসক ছিলেন, অর্থাৎ গড়ে ৬৯০০ লোক প্রতি ১ জন ডাক্তার৷ গ্রামে ১৮৫০০ জনে ১ জন ডাক্তার৷ ফেল্ডসার সংখ্যা ছিল ২৯,০০০, ছিল ১০,০০০ নার্স এবং ১৫,০০০ মিডওয়াইফ৷ হাসপাতালগুলির অবস্থান ছিল পরিকল্পনাবিহীন, এলোমেলো৷ ৩৫ শতাংশ শহরে কোনও হাসপাতাল ছিল না৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় এই নগণ্য স্বাস্থ্য কাঠামোরও বড় অংশ ধ্বংস ও অকেজো হয়ে যায়৷
বিপ্লবের পর স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন
১৯১৭ সালে নভেম্বর বিপ্লবের পর সোভিয়েত ব্যবস্থায় চিকিৎসা মানুষের অধিকারে পরিণত হয়৷ সোভিয়েত সমাজে মায়েদের জন্যে দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে প্রতি এলাকায় মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল৷ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের চিকিৎসার সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, ভয় দূর করা, হাসপাতালে প্রসব করানো প্রভৃতি এই কেন্দ্রগুলি করত৷
বিনামূল্যে সর্বদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার পরিষেবা ছিল৷ এ সময় ছিল মায়েদের চাকরি থেকে ৭৭ দিন সবেতন ছুটি৷ ডাক্তার পরামর্শ দিলে তবেই কাজে যোগদান৷ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার চতুর্থ মাস থেকে ওভারটাইম কাজ বন্ধ৷ প্রসবের পর প্রত্যেক মাকে কাজের সাড়ে তিন ঘন্টা অন্তর আধঘন্টা ছুটি দেওয়া হত শিশুকে স্তন্যপান করানোর জন্য৷ মাকে রাতের শিফটে কাজ দেওয়া বন্ধ থাকত৷ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার ছয় মাস থেকে প্রসবের পর চার মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মায়ের রেশন দ্বিগুণ করে দেওয়া হত৷ শিশুর জামাকাপড় কেনার জন্য এবং এক বছর বয়স পর্যন্ত খাওয়ার জন্য মাকে নগদ টাকা সাহায্য করা হত৷ ২ মাস থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্রেশে রাখার ব্যবস্থা ছিল৷
শিশুদের এই ক্রেশগুলি ছিল অতুলনীয়৷ শুধু রোগ প্রতিরোধ আর চিকিৎসাই নয় প্রতিটি শিশুর সার্বিক বিকাশের অভূতপূর্ব বন্দোবস্ত করেছিল সোভিয়েত দেশ৷ সারা দেশে শিশুদের দেখার জন্য শিশু বিশেষজ্ঞ এবং ডিসপেনসারি ও পলিক্লিনিক ছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেই শিশুমৃত্যুর হার, পুষ্টি, টিকাকরণ সহ সব মাপকাঠিতে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলিকে ধরে ফেলেছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ ক্রস ইনফেকশন রোখার জন্য ছিল সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা৷
সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রথমেই জোর দেওয়া হয়েছিল অধিক সংখ্যায় উপযুক্ত মানের ডাক্তার তৈরিতে৷ তার পাশাপাশি নার্স এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফেল্ডসার (সহকারী চিকিৎসক) তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হত৷ ১৯৮০ সালে দেশে ৮৩টি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ হিসাবে আরও ৯টি মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়ে যায়৷ ১৯৮৬ সালে দেশে চিকিৎসক সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লক্ষ৷ ১ লক্ষ জনসাধারণ পিছু ৪৩০ জন ডাক্তার, যা বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ায় ছিল ১ লক্ষ মানুষ পিছু ১৪.৫ জন মাত্র৷ সমাজতন্ত্রে পড়াশোনার কোনও খরচ ছিল না৷ নিত্য নতুন মেডিকেল চিকিৎসা, প্রযুক্তি, ওষুধপত্রের জ্ঞানার্জনের জন্য প্রত্যেক সোভিয়েত চিকিৎসকের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল৷
মেডিকেল স্টেশন, ডিসপেনসারি, পলিক্লিনিক, হাসপাতাল ব্যবস্থা
সোভিয়েত স্বাস্থ্য পরিষেবায় হাসপাতালের ভূমিকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজতন্ত্রে গড়ে ওঠা বহু স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছে৷ ১৯৮৩ সালে সারা দেশে ২৩,৫০০ স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র এবং ৩৬,৬০,০০০ শয্যা সংখ্যা ছিল৷ সোভিয়েতের সর্বত্র সাধারণের হাসপাতাল পরিষেবা ছিল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে৷ অঞ্চলভিত্তিক হাসপাতালে গড়ে ১০০০০ লোকের জন্য ৩৫ থেকে ৫০টি বেড ছিল৷ এখানে সার্জেন সহ কয়েক ধরনের বিশেষজ্ঞও থাকত৷ জেলা স্তরে ৮০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ মানুষ প্রতি হাসপাতালে ১৪ থেকে ১৬ জন বিশেষজ্ঞ এবং ১০০ থেকে ৩০০ বেড থাকত৷ প্রাদেশিক হাসপাতালে ৬০০ থেকে ১২০০ বেড থাকত এবং সেগুলি প্রযুক্তিগতভাবে ছিল অনেক উন্নত৷ এগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও কাজ করত৷ এ ছাড়া শিশুরোগ, প্রসূতি, ক্যানসার, মানসিক রোগ, টিবি, সংক্রমণ, ট্রমা, হার্ট, চক্ষুরোগ ইত্যাদির জন্য বিশেষ বড় হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র ছিল৷ এর বাইরে সোভিয়েত দেশে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ১৩০০ বিশ্রাম আবাস এবং তাতে ২১ লক্ষ বেড ছিল৷ পৃথিবীর আর কোনও দেশে এত বিস্তৃত স্বাস্থ্যনিবাস ছিল না৷
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শুধুমাত্র ফেল্ডসার–নার্স পরিচালিত মেডিকেল স্টেশন ছিল৷ তার উপরে ছিল ৪,০০০ লোক প্রতি পলিক্লিনিক ব্যবস্থা– সেখানে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন প্রসূতি ও স্ত্রী–রোগ বিশেষজ্ঞ, একজন দন্ত চিকিৎসক এবং সাথে নার্স, ক্লার্ক প্রভৃতির ব্যবস্থা ছিল৷ সাধারণ পলিক্লিনিক ছাড়াও শুধু শিশুদের জন্য ১৩,০০০ পলিক্লিনিক ছিল৷ প্রসূতি, শ্রমিক, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ–তরুণীদের জন্য বিশেষ পলিক্লিনিক সারা দেশে ছড়ানো ছিল৷ ১৯৮৬ সাল নাগাদ সারা দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০,১০০ পলিক্লিনিক ছিল, গড়ে ৭০০০ লোকের জন্য একটি৷
১৯৩৬ সালের গৃহীত সংবিধানে (স্ট্যালিন সংবিধান) নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কিত ১২০ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছিল– সোভিয়েত নাগরিকদের বার্ধক্যে, অসুস্থতায় এবং অক্ষম অবস্থায় সম্পূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা আছে৷ সরকারি অর্থেই বিস্তৃত ভাবে শ্রমিক এবং অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য ইনসিওরেন্স ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল৷ শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সমস্ত প্রকার চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে সুনিশ্চিত করা হয়েছিল এবং তাদের জন্য দেশজুড়ে স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে তোলা হয়েছিল৷
ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সমাজের একটি অভিনব ব্যবস্থা ছিল এই ইএমএস৷ ফোন কল করলেই সেন্ট্রাল সুইচ বোর্ডের মাধ্যমে নিকটবর্তী কেন্দ্র থেকে অ্যাম্বুলেন্সসহ ডাক্তার এবং ফেল্ডসার বা নার্স হাজির হয়ে যেত৷ তারা প্রাথমিক চিকিৎসা করে প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠাত৷ আর ইমার্জেন্সি মনে না করলে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হত৷ সারা দেশের গ্রাম–শহর মিলিয়ে এরকম ৫,১০০টি ইর্মাজেন্সি মেডিকেল সার্ভিস অ্যাম্বুলেন্স স্টেশন ছিল৷
রিসার্চ–জ্ঞানচর্চা–টেকনোলজি
নতুন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জ্ঞান, স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে গবেষণা এবং প্রযুক্তি কৌশল বাড়ানোর জন্য সোভিয়েত দেশে নিরলস প্রচেষ্টা ছিল৷ মেডিকেল রিসার্চের কাজ বিশেষভাবে পরিচালনার জন্য ৭০০টি গবেষণাকেন্দ্র ছিল৷ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পাভলভের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সোভিয়েত সরকার সমস্ত সহযোগিতা প্রদান করে এবং তাকে অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে উত্তীর্ণ করে৷ রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিচালনায় এবং অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স ও ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের তত্ত্বাবধানে অর্থদান করা হত৷ গুরুত্বপূর্ণ পত্র–পত্রিকা (জার্নাল) এবং বইপত্র স্বল্পমূল্যে হাজার হাজার কপি ছাপানো হত৷ তার দামও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম ছিল৷
টাইফাস–টিবি–যৌনরোগ্ বিরুদ্ধে সংগ্রাম
লেনিনের শিক্ষা অনুযায়ী সোভিয়েত সমাজতন্ত্র ঘোষণা করেছিল– ‘আমরা শুধু অর্থনৈতিক ভিত্তিতে মানবসমাজ পুনর্গঠিত করছি না, আমরা বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম অনুযায়ী মানবসমাজকে ভেঙে গড়ছি’৷ সোভিয়েত সমাজ সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে শিরোধার্য করে বিজ্ঞানের আধারে এই সমস্ত অসুখকে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল করে৷
১৯২৫ সালে সোভিয়েত সরকার ‘পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের কর্মসূচি’ গ্রহণ করে৷ পতিতাদের বিরুদ্ধে জার সরকারের সমস্ত দমনমূলক আইন বাতিল, এই বৃত্তি থেকে মুনাফাভোগীদের বিরুদ্ধে ক্ষমাহীন যুদ্ধ এবং যৌনরোগাক্রান্ত মানুষের কাছে বিনাপয়সায় চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি গৃহীত হয়৷
১৯৫১ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ঘোষণা করে ‘সোভিয়েত ইউনিয়নে আর পতিতাবৃত্তির অস্তিত্ব নেই’৷ যৌনরোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ৬,০০০ ক্লিনিক ও ১০,০০০ ছোট ডিসপেনসারি ছিল৷ ১৯৪০ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ সিফিলিস নির্মূল হয়৷
বিশ্বখ্যাত থোরাসিক সার্জেন ডাঃ নর্মান বেথুন ১৯৩০–এর দশকে ডাক্তারদের এক সভায় উল্লেখ করেন, আমেরিকার কম রোজগারের ৩৮.২ শতাংশ মানুষের কোনও চিকিৎসার সুযোগ নেই৷ আজকের আমেরিকাতেও ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন মানুষের কোনও মেডিকেল ইনসিওরেন্স নেই, অর্থাৎ চিকিৎসার সুযোগ নেই৷ দেশের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ বেকার৷ এর থেকে বোঝা যায় সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশগুলির স্বাস্থ্যব্যবস্থার পার্থক্য কতখানি৷
পুঁজিবাদে ফিরে আসা রাশিয়ায় স্বাস্থ্যের দৈন্যদশা
স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীন অযোগ্য নেতৃত্ব সমাজতন্ত্র থেকে সরে এসে পুঁজিবাদ কায়েম করায় বর্তমান রাশিয়ার স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে গর্ব করার মতো বিশেষ কিছু নেই৷ জন্মের পরে আয়ুর যে মাত্রা নির্ধারিত হয় তাতে গর্বাচভ–ইয়েলতসিন রাশিয়া নেপাল–বাংলাদেশের সাথে আজ তুলনীয়৷ স্বাস্থ্যে অর্থবরাদ্দ ভীষণভাবে হ্রাস করা হয়েছে৷ চালু করা হয়েছে ম্যান্ডেটরি হেলথ ইনসিওরেন্স যার প্রিমিয়াম ব্যক্তিকেই দিতে হবে৷ আজ পুঁজিবাদী রাশিয়ায় মানুষের অধিকার নেই বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার৷ যদিও সংবিধানে স্বাস্থ্য নাগরিকের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত– কিন্তু তার ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন রকমের ইনসিওরেন্সের মাধ্যমে৷ সরকার সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছে৷ টাকা বা সাজ–সরঞ্জামের অভাবের কথা বলে এই ইনসিওরেন্স কোম্পানিগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে নাগরিকদের প্রায়শই বঞ্চিত করে৷
পুঁজিবাদী রাশিয়াতে গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত ডিসপেনসারি ও পলিক্লিনিকগুলি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অর্থ ও সরবরাহের অভাবে পরিষেবা ধুঁকছে৷ গ্রামের সাথে শহরের বহু হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে৷ কমানো হয়েছে শয্যাসংখ্যা৷ আউটডোর প্রেসক্রিপশনের ওষুধ কোথাও সরবরাহ করা হয় না৷ সামান্য কিছু প্রান্তিক মানুষদের ছাড়া৷ পকেটের টাকা খরচ করে কিনে নিতে হয়৷
২০১২ সালের ‘মে ডিক্রি’–তে প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বাস্থ্য কর্মচারীদের বেতনবৃদ্ধি এবং সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ধীরে ধীরে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন৷ যে দেশ পৃথিবীতে যৌনরোগকে নির্মূল করেছিল এবং পতিতাবৃত্তিকে সমাজজীবন থেকে বিনাশ করেছিল– সে দেশে এখন বর্তমান সময়ের মারণ যৌনরোগ– এইচ আই ভি–এইডস রোগের রমরমা৷ পুঁজিবাদী রাশিয়ার বুকে শুধু নয়, পৃথিবীর প্রায় সব শহরেই রুশ যুবতীদের দেহ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে৷ সমাজতন্ত্র থেকে সরে আসায় যক্ষ্মা সংক্রমণ এবং তা থেকে মৃত্যু দুটোই অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে৷ বেড়েছে শিশুমৃত্যু, প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু৷
জারের আমলের জরাগ্রস্ত চিন্তাভাবনা ও জঘন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে লেনিন–স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সর্বাধুনিক এবং সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক দর্শন মার্কসবাদ–লেনিনবাদ প্রয়োগ করে নভেম্বর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বলশেভিক পার্টি রাশিয়ার সমাজে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, তার প্রভাবে সারা দুনিয়ার বুকে সোভিয়েত স্বাস্থ্যব্যবস্থা হয়ে উঠেছিল শীর্ষস্থানীয় এবং দৃষ্টান্তস্বরূপ৷ বিশ্বের মানুষের, বিশেষত ধনতান্ত্রিক পশ্চিমী দেশগুলির কাছে যা ছিল বিস্ময় সৃষ্টিকারী এবং ঈর্ষার বস্তু৷ পুঁজিবাদে ফিরে আসা রাশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থার দৈন্যদশা আবার প্রমাণ করল সমাজতন্ত্রই সবার জন্য সুনিশ্চিত স্বাস্থ্যের শেষ কথা৷