সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা শুনলেই ভয় বিজেপির!

৬ ডিসেম্বর কলকাতার এসপ্ল্যানেডে লেনিন মূর্তি থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিল। সেখানে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সভা হয়।

বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এবং আরও দুই আইনজীবীর করা মামলায় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ এই দুটি শব্দের অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার পক্ষেই শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে।

বিজেপি নেতারা বলেছেন, শব্দ দুটি ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় জরুরি অবস্থার সময়ে স্বৈরাচারী কায়দায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য এই সংশোধনীর দুটি শব্দ নিয়ে যাদের এত আপত্তি সেই বিজেপি নেতারা কিন্তু ওই একই ৪২তম সংবিধান সংশোধনীতে বিচারবিভাগের ক্ষমতা হ্রাস, রাজ্যের ক্ষমতা কমিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের দায়িত্বে জনগণের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিপরীতে নির্দেশমূলক নীতির নামে জনগণের ঘাড়ে ‘সুশাসনের’ দায় চাপানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি স্বৈরাচারী পদক্ষেপের কোনও বিরোধিতা করেননি। কেন? এগুলি তাঁদের দলের স্বৈরাচারী শাসনের কায়দার সাথে মেলে বলেই কি তাঁরা এ নিয়ে চুপ?

যদিও সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ১৯৫২-তে গৃহীত সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি না থাকলেও ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামোর মধ্যে এর ধারণাটা মিশে আছে। ফলে পরে তা সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করা ভুল নয়। আদালত অবশ্য ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ নিয়ে তার ‘ভারতীয়’ ব্যাখ্যা দিয়েছে। যা অনেক দিন ধরেই শাসকদলগুলোর নেতা-নেত্রীদের মুখে শোনা যাচ্ছিল। এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার মানে দাঁড় করানো হচ্ছে– রাষ্ট্র কর্তৃক সব ধর্মকে সমান উৎসাহদান। যদিও বিজেপি রাজত্বে সেটুকুও থাকছে না। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম শব্দটি উদ্ভবের সুনির্দিষ্ট ইতিহাস রয়েছে ও তার একটি সুনির্দিষ্ট অর্থও আছে। সেকুলারিজমের ধারণা বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সৃষ্টি। সেটি এক এক দেশে এক-এক রকম হতে পারে না। তার সুনির্দিষ্ট অর্থ হল, সমস্ত অতিপ্রাকৃত শক্তির ধারণাকেঅস্বীকার করা। এর ভিত্তির উপরই দাঁড়িয়ে আছে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার কাঠামো। কারও মনগড়া অর্থ এর ওপর চাপানো চলে না। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ, রাষ্ট্র ধর্মীয় বিশ্বাস বা আচরণ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক থাকবে। রাষ্ট্র কোনও ধর্মাচরণে যেমন বাধা দেবে না, তাতে উৎসাহও দেবে না। ধর্ম ব্যক্তির বিশ্বাসের বিষয় হিসাবে থাকবে। অথচ এ দেশে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই সরকারি অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মীয় অনুষঙ্গ যেন খুব সাধারণ ঘটনা। বিজেপি শাসনে তা যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির আস্ফালনে দেশে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ বিপন্নতার মুখে পড়ছেন প্রায়ই। অথচ সে সব ঘটনার নিন্দা করা ও তা প্রতিরোধ করার কোনও উদ্যোগ না কেন্দ্রের, না বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি সরকারের কর্তাদের মধ্যে চোখে পড়ে না। এমনকি গণতন্ত্রের পীঠস্থান বলে পরিচিত সংসদের নতুন ভবন উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিন্দু মন্দিরের একদল পূজারীকে সাথে নিয়ে যে আচরণ করেছেন, তা ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে। সুপ্রিম কোর্টের সদ্যপ্রাক্তন বিচারপতিকেও দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে গণেশ আরতিতে মাততে এবং তা প্রচার করতে। দেখা যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের মতো প্রতিষ্ঠানও ‘ভারতীয়করণের’ নাম করে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে লঘু করে দিচ্ছে। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ থাকা গণতান্ত্রিক রাষ্টে্রর অন্যতম শর্ত। শাসক দলগুলোর নেতা-মন্ত্রীদের লাইনেই সুপ্রিম কোর্ট ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ যা দাঁড় করাতে চেয়েছে তাকে অনৈতিহাসিক ও অবৈজ্ঞানিক না বলে উপায় নেই।

 সমাজতন্ত্র শব্দটিরও নতুন অর্থ করতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, ভারতের সংবিধানে সমাজতন্তে্রর উল্লেখ কোনও বিশেষ আর্থিক দর্শন বোঝাচ্ছে না। ভারতের সংবিধানে এই শব্দটি প্রযুক্ত হয়েছে আর্থিক সাম্যের ইচ্ছা থেকে। বেসরকারি পুঁজির যথেচ্ছ কারবারের কোনও বাধা এর মধ্যে নেই। এই ব্যাখ্যাটিও পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক, অনৈতিহাসিক। সমাজতন্ত্রের ধারণা সমাজের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট স্তরে উদ্ভূত হয়েছে। পুঁজিবাদের অনিবার্য পরিণতি হিসাবে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারণা এসেছে। যার ভিত্তি হল সমস্ত সম্পদের ওপর ব্যক্তিমালিকানাকে উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা। এটাই হল মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ থেকে সমাজের মুক্তির একমাত্র রাস্তা। সমাজতন্ত্রের নাম করে অন্য কোনও কিছুই নিছক ভণ্ডামি।

অবশ্য ভাবা দরকার, ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন স্বৈরাচারী শাসক জরুরি অবস্থার মধ্যে কেন এই দুটি শব্দ সংবিধানের প্রস্তাবনায় ঢোকাতে গেলেন? কংগ্রেস দল ইন্দিরা গান্ধীকে ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য’ বলে যতই শোরগোল তুলুক না কেন, সেই সময় তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের জনসাধারণের ক্ষোভ ফেটে পড়ছিল। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে গোটা উত্তরভারতে ঢেউ উঠেছিল। লোকসভায় ইন্দিরাজির নির্বাচনও এলাহাবাদ হাইকোর্ট কারচুপির দায়ে খারিজ করে দেয়। এই পরিস্থিতি সামলাতে ইন্দিরাজি ১৯৭৫-এর ২৫ জুন জরুরি অবস্থা জারি করেন। ১৯৭৬-এ জরুরি অবস্থার মধ্যে তিনি ৪২তম সংবিধান সংশোধনী পাশ করিয়ে নেন। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় একচেটিয়া পুঁজি মালিকদের স্বার্থে রাষ্ট্রকে আরও বেশি স্বৈরাচারী করে তোলার ব্যবস্থা হয়। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ক্ষয়ে যাওয়া ভাবমূর্তিকে একটু মেরামতের আশায় প্রগতিশীলতার মুখোশ পরে তিনি এই শব্দ দুটি প্রস্তাবনায় যোগ করেন। মনে রাখা ভাল, ইন্দিরা গান্ধী যখন ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি যোগ করছেন, ঠিক সেই সময় তিনি হিন্দু-মৌলবাদী সংগঠন আরএসএস-এর সাহায্যে দেশে হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে সচেষ্ট। জরুরি অবস্থার মধ্যে তিনি বলেছিলেন, আগে কংগ্রেস সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ দেখেছে, এখন থেকে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের স্বার্থ দেখবে। বিজেপি নেতারা কি জানেন না যে, ইন্দিরাজির জরুরি অবস্থার অন্যতম সমর্থক ছিল আরএসএস?

এ বার আসা যাক সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে। শোষণ অত্যাচারে জর্জরিত পুঁজিবাদী দেশগুলির জনগণের কাছে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আকর্ষণ যে অমোঘ, তা কোনও পুঁজিবাদী শাসকই অস্বীকার করতে পারেন না। ভারতের স্বাধীনতার সময় থেকেই এমনকি সংবিধান তৈরির জন্য আহূত সভাতেও কয়েক বার ‘সমাজতান্ত্রিক’, শব্দটি রাখার প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু কংগ্রেস সহ অন্যান্য দক্ষিণপন্থী দলের নেতাদের বাধায় তা গৃহীত হয়নি। তখন বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিরাট বিস্তার সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী শাসকদের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আকর্ষণ দেখে এ দেশের শাসক পুঁজিপতি শ্রেণি বাধ্য হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির মতো কিছু কিছু কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ভারি শিল্প গড়ে তোলার চেষ্টা পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থেই জহরলাল নেহেরু শুরু করেছিলেন। তিনি কিছু কিছু ‘সমাজতান্ত্রিক’ কথাবার্তাও বলতেন, কিন্তু তাতে প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক ভাবনার রেশমাত্র ছিল না।

পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধী পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থেই ব্যাঙ্ক, খনি, রেলপথ ইত্যাদি জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া পুঁজি গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেন। এখানে জনস্বার্থের থেকেও বড় ছিল পুঁজিবাদকে সংহত করার পরিকল্পনা। কিন্তু এ দেশের সিপিআই-সিপিএমের মতো বামপন্থীরা এটাকেই বিশাল ‘প্রগতিশীলতা’ বলে তুলে ধরতে থাকে। ইন্দিরা গান্ধীকে প্রায় সমাজতান্ত্রিক নেতা বানিয়ে দেন তাঁরা। বাস্তবে এই সমস্ত পদক্ষেপ ছিল জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে বৃহৎ শিল্পের পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার উদ্যোগ। আজ যে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের পরিকাঠামোকে বৃহৎ পুঁজি মালিকদের হাতে রাষ্ট্রের কর্ণধাররা তুলে দিচ্ছেন, এটা ছিল তারই প্রস্তুতি। ইন্দিরাজি তথাকথিত বৃহৎ বামপন্থী দলগুলির বিভ্রান্তির সুযোগ নিতে ছাড়েননি। তিনিও খেটে খাওয়া মানুষকে ধোঁকা দিতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ সাজার চেষ্টা করেন। আজ সমাজতান্ত্রিক শিবির অনুপস্থিত। কিন্তু তার মধ্যে যে উন্নত জীবনের স্বাদ দুনিয়ার মানুষ পেয়েছিল, সে স্মৃতি জনমানসে আজও অমলিন। তাই দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাদী রাষ্টে্রর অন্যতম স্তম্ভ সুপ্রিম কোর্টও সমাজতান্ত্রিক শব্দটিকে ঝেড়ে ফেলার ঝুঁকি নেয়নি। সংবিধানের প্রস্তাবনার অলঙ্কার মাত্র হয়ে শব্দটি থাকলে শাসক শ্রেণির কোনও অসুবিধা নেই। কারণ, সংবিধানে যত সমানাধিকারের কথাই লেখা থাক, তাতে এ দেশের মানুষের ওপর শোষণের স্টিমরোলার চালাতে মালিক শ্রেণির কোনও অসুবিধা হয় না। দেশে আর্থিক বৈষম্য বাড়ার গতিও এতটুকু কমে না। শাসক শ্রেণি জানে, শোষিত মানুষের সমাজতন্ত্রের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ সত্ত্বেও মেকি বামপন্থী দলগুলির কল্যাণে শ্রমজীবী মানুষের বিরাট অংশের মধ্যে মার্ক্সবাদ সংক্রান্ত ধারণা স্বচ্ছ হতে পারেনি। তারা এর সুযোগে সমাজতন্ত্র শব্দটিকে খেটে খাওয়া মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজে লাগাতে পারে। তাই সুপ্রিম কোর্টও বিশেষ বাচনভঙ্গিতে বুর্জোয়া শ্রেণিকে অভয় দিয়েছে– সমাজতন্ত্র শব্দটা লেখা থাক, তাতে তোমাদের লুঠে কোনও বাধা আসবে না।

এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে প্রভাবশালী আপসমুখী ধারাটির গান্ধীবাদী কংগ্রেস নেতৃত্ব নিজেরাই তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুত্বের মনোভাবে আচ্ছন্ন ছিলেন। তাঁরা সামন্ততন্ত্র ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ উভয়ের সঙ্গেই আপস করে এ দেশের পুুঁজিপতি শ্রেণির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর চেয়েছিলেন। বিশিষ্ট মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ দেখিয়েছেন, এই নেতৃত্বের আপসের কারণেই স্বাধীনতা আন্দোলনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাজটা অপূর্ণ থেকে গেছে। তাঁদের জাতীয়তাবাদ ছিল ধর্মীয় প্রভাবে আচ্ছন্ন অর্থাৎ রিলিজিয়ন ওরিয়েন্টেড ন্যাশনালিজম। যা হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ হিসাবে একদিকে যেমন আরএসএসের মতো গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে জমি পেতে সাহায্য করেছে, তেমনই মুসলমান সহ অহিন্দু জনগোষ্ঠী এমনকি তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষকেও স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে কিছুটা দূরে ঠেলেছে। ফলে মুসলিম সাম্প্রদায়িক শক্তিও মাথা তোলার রাস্তা পেয়েছে। যদিও দেশের সাধারণ মানুষের উদার অসাম্প্রদায়িক মনোভাব ও হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, আপসহীন ধারার প্রতিনিধি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও ভগৎ সিংয়ের মতো ব্যক্তিত্বের প্রভাব এবং সর্বোপরি দুনিয়া জুড়ে সেই সময় সমাজতন্ত্রের মহান আদর্শের প্রভাবে স্বাধীন ভারতের শাসকরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারেননি। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতৃত্বের দুর্বল অবস্থানের কারণে স্বাধীন ভারতের সংবিধানে সুস্পষ্ট করে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি যুক্ত হয়নি। কিন্তু দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ চেতনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করতে না পেরে এবং সদ্য স্বাধীন দেশে পুুঁজিবাদের সামগ্রিক প্রয়োজনে সংবিধানে তারা ‘বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতার’ কথা লিখেছিল।

তা হলে এই শব্দদুটি যোগ হওয়ার ৪৪ বছর পর বিজেপি নেতারা তা মুছে ফেলার কথা বলছেন কেন? ভোটের স্বার্থে কখনও নরেন্দ্র মোদি সাহেবকে ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ বলতে হয়। কখনও এর সাথে যোগ করতে হয় ‘সব কা বিশ্বাস’। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতা ও তথাকথিত নিম্নবর্ণের প্রতি বিদ্বেষই তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির মূল হাতিয়ার। সেই হাতিয়ারে শান দিতে এবং প্রচারে আসার তাগিদেই ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির প্রতি তাঁদের এই বিষোদগার। আর সমাজতন্ত্র! বিজেপি সরকার আজ মুষ্টিমেয় এচেটিয়া মালিকগোষ্ঠীর তাঁবেদার হিসাবে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত। তাদের রাজত্বে আর্থিক বৈষম্য চরম আকার নিয়েছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা দু-পায়ে মাড়িয়ে চলেছে।

এই সময় নামেমাত্র ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দটিও তাদের গায়ে জ্বালা ধরায়। এককেন্দ্রিক ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন কায়েমে সমাজতন্ত্র শব্দটি যে বড়ই পীড়াদায়ক! তাই তা ছেঁটে ফেলতে সুপ্রিম কোর্টে ছুটেছিলেন তাঁরা!

বিজেপির এই নেতাদের ধন্যবাদ। তাঁরা দলের সাম্প্রদায়িক এবং একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থরক্ষাকারী চরিত্রটিকেই এর দ্বারা আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।