আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে ভারত সরকার করবে কী – প্রশ্নটির সামনে আজও বহু মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন৷ ভারতকে তার জ্বালানির ৮০ শতাংশই এখন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়৷ ফলে বিদেশে তেলের দাম বাড়লে ভারতে দাম বাড়বেই– এমন সহজ সমীকরণ দীর্ঘকাল মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করেছে৷এই চিন্তায় প্রথম আঘাত এল ২০১৪ সাল নাগাদ – যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হু হু করে কমছিল৷ দেখা গেল আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমে প্রায় তলানিতে ঠেকলেও ভারতে দাম কমল না৷ নরেন্দ্র মোদি সরকার তার সুফল তাঁর প্রিয় (!) দেশের প্রিয় (!) মানুষকে পেতে দিল না ক্রমাগত অন্তঃশুল্ক্ বাড়িয়ে দাম কমার ফায়দাটুকু লুটে নিল৷ তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬–র জানুয়ারি পর্যন্ত মোদি সরকার ১৫ মাসে ৯ বার পেট্রল–ডিজেলে শুল্ক বাড়িয়েছে৷ এস ইউ সি আই (সি) বহু পূর্বে হিসাব করে দেখিয়েছে, কেন্দ্রের শুল্ক এবং রাজ্যের ট্যাক্সই ভারতে পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির একটা অন্যতম প্রধান কারণ৷ জ্বালানির দামবৃদ্ধির কারণে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহণের খরচ বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে সেচের খরচ বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে৷
২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার সময় আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১০৫ ডলার, ২০১৬–তে তা কমে দাঁড়িয়েছিল ২৯ ডলার৷ অথচ ভারতে তেলের দাম ২০১৪–র থেকে বেশি নিচে নামেনি৷ ২০১৮–র জানুয়ারির শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ৬৬ ডলারে পৌঁছতেই বর্তমান দাম ২০১৪–র দামকে ছাপিয়ে গেছে৷ এই পথেই মোদি সরকার আম্বানি, আদানিদের মতো তেল ব্যবসার ধনকুবেরদের বিপুল লাভের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের অশীর্বাদ পেয়েছে৷
দেশের প্রতি দরদ থেকে অনেকে সরকারের এই প্রচারে বিশ্বাসও করে বসেন, যে শুল্ক না বসালে, ট্যাক্স না বাড়ালে সরকারি কোষাগারে টাকা আসবে কোত্থেকে? যারা এভাবে ভাবছেন তারা ভেবে দেখুন, কোষাগারের টাকার কী অপচয় হয়৷ ২৫ জানুয়ারি সংবাদে প্রকাশ, মোদি সরকার ব্যাঙ্কগুলিকে ২.১ লক্ষ কোটি টাকা দিতে চলেছে৷ কারণ ভারতের ধনকুবেররা ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শোধ করছে না৷ যার নাম এন পি এ (নন পারফর্মিং অ্যাসেট) বা অনুৎপাদক সম্পদ৷ পুঁজিপতিদের শোধ না করা এই ঋণের দায় ঘাড়ে নিতে এগিয়ে এসেছে ‘দরদি’ সরকার৷ সাহায্যের নামে সে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে ব্যাঙ্ককে টাকা দিচ্ছে৷ অর্থাৎ ঋণ নেবে পুঁজিপতিরা, শোধ করবে জনগণ এখন আবার সরাসরি জনগণের টাকায় ধনকুবেরদের লুঠের ফলে ফেল পড়া ব্যাঙ্কের আর্থিক ধাক্কা সামাল দিতে মোদি সরকার তৈরি করেছে এফ আর ডি আই বিল৷ জনগণ কি সরকারি কোষাগারের টাকায় ধনকুবেরদের দায় সামলানোর জন্য ট্যাক্স দেয়!
মন্ত্রী, এমপি, বিধায়ক সহ আমলাদের মাত্রাছাড়া বেতন বৃদ্ধি, ভাতাবৃদ্ধি সহ অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করে রাজকোষের অপচয় করা হচ্ছে৷ এ ছাড়া রয়েছে প্রশাসনিক স্তরে বিপুল পরিমাণ চুরি, দুর্নীতি৷ রয়েছে সেজ গড়ার নামে পুঁজিপতিদের বিপুল ট্যাক্স ছাড়৷ এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে রাজকোষ সংকট৷ এর দায় সাধারণ মানুষ বইবে কেন? ধনকুবেরদের সেবার দায় সাধারণ মানুষের উপর চাপানো কেন? প্রতিবার ভোট মিটলেই সরকার পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায়৷ সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট বিধানসভার ভোটের পরই দাম বাড়ানো হল৷ জনস্বার্থের কথা ন্যূনতম ভাবলে এভাবে দাম বৃদ্ধিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি৷ কিন্তু মোদি সরকারের কাছে তা আশা করা বৃথা৷