Breaking News

সবই পাবে ছাত্ররা, পাবে না কেবল শিক্ষা

সরকারি স্কুলে ছাত্রসংখ্যা ক্রমশ কমছে, কেন্দ্র ব্যস্ত মন্দির নিয়ে, রাজ্য মেতে উৎসবে

 

প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্তরকে বলা হয় ‘এলিমেন্টারি এডুকেশন’৷ কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘এডুকেশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স অ্যাট এ গ্ল্যান্স ২০১৮’ রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশের সর্বত্রই প্রাথমিক স্তরে ছাত্রসংখ্যা কমছে৷

কেন কমছে?  মন্ত্রকের এক প্রাক্তন কর্তার কথায়, ‘গোটা দেশেই সরকারি স্কুলের থেকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তির প্রবণতা বেশি৷ ফলে সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্রসংখ্যা কমছে’৷ প্রতীচী ট্রাস্টের এক গবেষকের পর্যবেক্ষণও অনুরূপ৷ তাঁর কথায়, ‘গোটা দেশেই প্রাথমিক স্তরে এত বেশি বেসরকারি স্কুল তৈরি হচ্ছে যে সেখানে সরকারি স্কুলগুলি পিছিয়ে পড়ছে৷ বেসরকারি স্কুলে পড়ানোকে এখন অনেকেই কৌলিন্য বলে মনে করছেন’৷ কেন এই মানসিক পরিবর্তন?

সরকারি স্কুলে পড়ার জন্য কোনও বেতন দিতে হয় না৷ ছাত্রদের বই, খাতা, পোশাক সরকার থেকে দেওয়া হয় বিনামূল্যে৷ কখনও কখনও সাইকেল, জুতো, ব্যাগ ইত্যাদিও দেওয়া হয়৷ দেওয়া হয় মিড–ডে মিল৷ এখানে নেই মারের ভয়, ফেলের ভয়৷ তবুও সরকারি স্কুলে অভিভাবকদের আকর্ষণ নেই কেন? কারণ এখানে সবই পাবে ছাত্ররা, পাবে না কেবল শিক্ষা৷ বাবা–মায়েরা সন্তানের শিক্ষার জন্য সবই দিতে পারেন, কিন্তু কোনও কিছুর বিনিময়ে শিক্ষাকে বিসর্জন দিতে পারেন না৷ ফলে, কষ্ট করে বেশি টাকা দিয়েও তারা বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান৷ এটা কোনও কৌলিন্য নয়৷ বরং সরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে না দেওয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা৷

সরকারি স্কুলের প্রতি আস্থাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে সরকারি শিক্ষানীতির ফলেই৷ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল তুলে দেওয়ার ফলেই যে সরকারি স্কুল ছাড়ার প্রবণতার জন্ম ও বৃদ্ধি, অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলছে৷

 

প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান

বর্ষ         ছাত্র     ছাত্রী      মোট

২০১১–১২     ৭২৬   ৬৭২   ১৩৯৮

২০১২–১৩    ৬৯৬  ৬৫২  ১৩৪৮

২০১৩–১৪    ৬৮৬  ৬৩৮  ১৩২৪

২০১৪–১৫    ৬৭৬  ৬২৯  ১৩০৫

২০১৫–১৬    ৬৬৯  ৬২২   ১২৯১

সূত্র : কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘এডুকেশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স অ্যাট এ গ্ল্যান্স’, ২০১৮ রিপোর্ট (হিসাব লক্ষে)

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কেন্দ্র তো শুধু ধর্ম নিয়ে রয়েছে, শিক্ষায় মন নেই’৷ প্রশ্ন হল, শিক্ষায় মন কি রাজ্য সরকারেরও আছে? কেন্দ্র ব্যস্ত রামমন্দির নিয়ে, রাজ্য ব্যস্ত উৎসবে৷ শিক্ষার বারোটা বাজে বাজুক, তাতে এদের কী? শিক্ষা–বাণিজ্য চলতে দেওয়া যে উভয়েরই লক্ষ্য উন্নয়নের প্রাথমিক সোপান শিক্ষা৷ সেই সোপান ভেঙে দিয়ে দুই সরকারই পুজো আর উৎসবের ডামাডোলে মানুষকে ভোলাচ্ছে৷

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে ক’দিন বাদেই৷ সরকার শিক্ষার ভাল চাইলে অতি দ্রুত পাশ–ফেল চালু করুক৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ১৯ সংখ্যা)