জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবা এলাকার গ্রামীণ হাট বটতলা। ২২ মার্চ শিলিগুড়িতে কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মিছিল সফল করতে হাটে প্রচার চলছিল। লাল সালু পেতে যখন হ্যান্ডবিল বিলি এবং অর্থসংগ্রহ চলছিল কণিকা বর্মন নামে এক গৃহবধূ হ্যান্ডবিল হাতে নিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। জানতে চান ‘দুয়ারে মদ প্রকল্প’ কী? তার সাথে শিক্ষার বেসরকারিকরণ সহ অন্য দাবিগুলিও তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তিনি বলতে থাকেন ‘সংসারে অশান্তি করার জন্য কি আমি এই সরকারকে ভোট দিয়েছিলাম? মদের জন্য আমার সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। এর জন্যই হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারছি না। ভেবে নিয়েছিলাম এই বুঝি কপালে আছে।’ কণিকা কথা দিয়েছেন হাজার অসুবিধার মধ্যেও তিনি শিলিগুড়িতে যাবেন। তিনি তাঁর এলাকায় ঘরে ঘরে মহিলাদের এই কথাগুলি বলতে চান, তার জন্য কর্মীদের কাউকে যেতে বলেন তাঁর এলাকায়। কিছু হ্যান্ডবিল তিনি সাথে নিয়ে যান।
জানতাম না যাদের ভোট দিচ্ছি তারাই সর্বনাশ করছে
ধুপগুড়ির গ্রামীণ এলাকায় কালিরহাট। দলের কর্মীরা হ্যান্ডবিল নিয়ে প্রচার করেছিলেন। সত্তরোর্ধ এক ব্যক্তি হ্যান্ডবিলটি অনেকক্ষণ ধরে পড়তে থাকেন এবং আরও বিস্তারিত জানতে চান। কর্মীরা প্রস্তাব দেন ‘আপনার এলাকায় মানুষকে নিয়ে আমরা বসতে চাই’। প্রবীণ মানুষটি পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে গিয়ে বৈঠক সংগঠিত করেন। ওই বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির কিছু সমর্থক ছিলেন। আলোচনা শোনার পর তাদের কয়েকজন বললেন, ‘আমরা জানতাম না আমরা যাদের ভোট দিচ্ছি তারাই আমাদের এই সর্বনাশ করছে’।
আমরা চাই বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ হোন, নেতারা চান না
যে ২১ দফা দাবি নিয়ে ২২ মার্চের বিক্ষোভ-মিছিল বেশির ভাগ মানুষই বলছেন, তাঁরা এই দাবির সঙ্গে একমত। কিছু বামপন্থী মানুষ তারাও এস ইউ সি আই (সি)র প্রতি সম্মান রেখেই বামপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলছেন।
হুগলির চুঁচুড়ায় প্রচার চলার সময়ে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে বলেন, আমি সিপিএম করি, কিন্তু এস ইউ সি আই (সি)কে ভালবাসি। দলের এক কর্মী তাঁকে বলেন, এই পরিস্থিতিতে বামমনস্ক মানুষদের জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার দরকার। অত্যন্ত আগ্র্রহ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা তো চাই ঐক্য হোক, কিন্তু আমাদের নেতারা তো চান না। তাঁরা ঠিক করছেন না।
অনেকেই বললেন, আপনারাই তো আন্দোলন করছেন। আমরা হয়তো যেতে পারব না মিছিলে, কিন্তু জানবেন আপনাদের আন্দোলনে আমাদের সমর্থন সব সময় আছে।
একজন হতদরিদ্র ভিখারি তাঁর ছেঁড়া জামার পকেটে থাকা ৮টি টাকাই কর্মীটির হাতে তুলে দেন।
দলের এক ছাত্রকর্মী এক ব্যক্তিকে চাঁদা চাওয়ায় তিনি বললেন, এস ইউ সি আই (সি)র পক্ষ থেকে চাইছো বলেই দিচ্ছি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন, মন থেকে এস ইউ সি আই করো? কর্মীটি হ্যাঁ বলায় টাকা দিয়ে চলে গেলেন।