এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ভারত বনধকে সর্বাত্মক সফল করার আবেদন জানিয়ে বলেন,
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমস্ত দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে, প্রবল শীত, ঝড়ঝঞ্ঝা ও প্রখর তাপ মোকাবিলা করে দিল্লির বুকে অদম্য তেজে বীরত্বপূর্ণ কৃষক আন্দোলন চলছে। এই মহতী সংগ্রামে ৬০০-র বেশি কৃষক আত্মোৎসর্গ করেছেন এবং আরও প্রাণ দিতে তাঁরা প্রস্তুত। তাঁদের দাবি, একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থবাহী তিনটি কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল-২০২১ (সংশোধনী) বাতিল করতে হবে এবং কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাঁদের স্লোগানঃ ‘আমরা লড়ব, আমরা জিতব’। তাঁদের প্রত্যয়ঃ ‘লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে’। কৃষকরা ইতিহাস সৃষ্টি করছেন, যা একচেটিয়া পুঁজিপতি, বহুজাতিক হাঙরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব জুড়ে সংগ্রামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করবে।
কৃষকরা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছেন, তিনটি কালা কৃষি-আইন দেশি-বিদেশি একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থে রচিত এবং এই সব আইন যদি চালু হয় তা হলে তাঁদের জমিজমা এবং ফসল পুরোপুরি পুঁজিপতিদের কুক্ষিগত হবে। কৃষকরা নিঃস্ব-রিক্ত-সর্বহারায় পরিণত হবেন। সাথে সাথে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যার ফলে অবাধে চলবে মজুতদারি, কালোবাজারি এবং সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। এর ফলে ১৩০ কোটি মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে।
কৃষিকে একচেটিয়া পুঁজির হাতে তুলে দেওয়া ও বেসরকারিকরণের অর্থ কৃষকরা ভাল করেই জানেন। বীজ, সার, কীটনাশক, সেচের জল ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির ঘৃণ্য ভূমিকা তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন।
এর ফলে কৃষকের ঘাড়ে বিপুল ঋণের বোঝা চেপেছে এবং তাদের আত্মহত্যার পথ ঠেলেদেওয়া হয়েছে। কৃষকরা এটাও অনুভব করেছেন, পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের পথ অনুসরণ করে চলছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষাকারী নীতি শ্রমিক, মহিলা, ছাত্র, যুবক সহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
এই কারণেই আজ কৃষকরা বিজেপি সরকারের এই ঘৃণ্য নীতি প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর। কৃষকরা সমস্ত অন্তর দিয়ে অনুভব করছেন, এই মহতী সংগ্রামে তারা একা নন। শ্রমিক, মহিলা, ছাত্র-যুবক, কর্মচারী, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী সহ নির্যাতিত সমস্ত জনগণ তাদের পাশে আছেন এবং নানাভাবে তাদের সাহায্য করছেন। এই অকুণ্ঠ সমর্থন তাদের লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রামে সাহায্য করছে। কয়েকশো কৃষক সংগঠনের যুক্ত মঞ্চ ‘সংযুক্ত কিসান মোর্চা’ এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কৃষক সংগঠন এআইকেকেএমএস এই মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমরা বিশ্বাস করি, বিজয়ের লক্ষে্য এই সংগ্রামকে তারা পরিচালিত করতে পারবেন।
আন্দোলনের শুরুর দিন থেকেই আমাদের পার্টি সমস্ত শক্তি, আবেগ, সামর্থ্য ও ক্ষমতা নিয়ে এই সংগ্রামে রয়েছে। সাথে সাথে আমরা সরকারের সমস্ত জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি এবং শ্রমিক, কর্মচারী, ছাত্র, যুবক, মহিলাদের উপর সমস্ত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি। আমরা জানি, দেশের শ্রমজীবী জনগণ পুঁজিবাদী শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে চলেছে, যা সারা দেশে মানুষের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে তারা জনগণের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে ও আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করছে। এইরকম একটি অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে শুধু কৃষকরা নয়, শ্রমিক, কর্মচারী, ছাত্র, যুবক, মহিলা, বুদ্ধিজীবী, গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং তৃণমূল স্তরে ‘গণকমিটি’ গঠন এবং স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে আমরা জানি যে ‘জনগণই ইতিহাস সৃষ্টি করে’। শ্রমিকশ্রেণির দলের কর্তব্য হল ‘জনগণের কাছ থেকে শেখা, বিপ্লবী রাজনীতি ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে তাঁদের সংগঠিত করা’। এই কাজটিই আমরা আমাদের সাধ্য ও শক্তি অনুযায়ী করে চলেছি।
এই সংগ্রামকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘সংযুক্ত কিসান মোর্চা’ ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধ-এর আহ্বান জানিয়েছে। আমরা মনে করি, এ অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপ। বিজেপি সরকার ও তার হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীরা এই আন্দোলনকে ধ্বংস করতে প্রাণপণ চেষ্টা করবে। একচেটিয়া পুঁজিপতি ও বহুজাতিকদের আজ্ঞাবহ বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের জনবিরোধী নীতিগুলিকেই বহাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। তাই, এই অগণতান্ত্রিক মনোভাবকে পরাস্ত করতে এবং দাবিগুলি আদায় করতে দেশজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী সুসংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলা আজ একান্ত জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, সমস্ত ক্ষেত্রের জনগণ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসে এই বনধকে সর্বাত্মক সফল করবেন এবং এই আন্দোলনের পূর্ণ বিজয়ের পথকে প্রশস্ত করবেন। ‘আমরা লড়ব, আমরা জিতব’।