সংগ্রামী বামপন্থাই রাস্তা, প্রত্যয় জাগাল দৃপ্ত মিছিল

২২ মার্চ। রাজপথের দু’কূল ছাপানো জনতার প্লাবন যেন ভাসিয়ে দিয়ে গেল শহর কলকাতাকে। বড় পুঁজির মালিকদের সেবায় নিবেদিতপ্রাণ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এস ইউ সি আই (সি)-র ডাকে এ দিন হাজার হাজার মানুষের ফুঁসে ওঠা বিক্ষোভ মিছিল সোচ্চারে বলে গেল– নিষ্ঠুর সরকারগুলির জনস্বার্থবিরোধী নীতি আর নীরবে মেনে নেওয়া নয়। পথে নেমে এবার অধিকার বুঝে নেবার পালা। দুপুরের খর রোদে রাজপথ কাঁপানো মিছিলে স্লোগান-গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে উঁচু হয়ে ওঠা হাজার হাজার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের বুকে জাগিয়ে দিয়ে গেল দৃঢ় প্রত্যয়। আহ্বান জানিয়ে গেল পড়ে পড়ে মার না খেয়ে সঠিক নেতৃত্বে জোট বেঁধে শোষণ-অত্যাচারের মোকাবিলা করার।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের চরম জনবিরোধী কৃষি-শিল্প ও শিক্ষানীতি, বেকারি, তেল-গ্যাস সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, বেসরকারিকরণ, সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মদের প্রসার, হাসপাতালে ওষুধ ছাঁটাই, দলবাজি ও স্বজনপোষণ সহ সমস্ত জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে এবং উত্তরবঙ্গের সমস্ত চা-বাগান খোলা, চা শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি নিশ্চিতকরণ ও স্থায়ী কাজের দাবিতে এ দিন কলকাতা ও শিলিগুড়িতে ডাক দেওয়া হয়েছিল দুটি বিশাল মিছিলের।

একটু বেলা বাড়তেই এ দিন কলকাতার হেদুয়া পার্ক ভরে উঠতে থাকে প্রতিবাদী মানুষের সমাগমে। গোটা দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলার প্রান্ত প্রত্যন্ত থেকে মিছিলে যোগ দিতে এসেছিলেন কাতারে কাতারে শ্রমজীবী মানুষ। এসেছিলেন অসংখ্য নারী-শ্রমিক ও গৃহবধূ, অনেকে এসেছিলেন সন্তানদের কোলে-কাঁখে নিয়েই। ছাত্রছাত্রীরা এসেছিল দলে দলে। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা এসেছিলেন বহু সংখ্যায়। আইনজীবীরা ছিলেন আদালতের পোশাকেই। মিছিলে সামিল হয়েছিলেন স্কিম ওয়ার্কার, বাইক-ট্যাক্সি চালকরাও। সরকারের জনস্বার্থবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ়তা তাদের সকলের চোখে-মুখে। আজকের তরুণরা রাজনীতিবিমুখ বলে কাউকে কাউকে যখন দুঃখ করতে শোনা যায়, তখন এই মিছিলে হাজার হাজার তরুণ ছাত্র-যুবকের উজ্জ্বল উপস্থিতি মানুষ মুগ্ধ হয়ে লক্ষ করেছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে এসেছিলেন আসমা লস্কর, রীনা সরদাররা। গ্রামে কাজ নেই। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। মিছিলে এসেছেন কেন? প্রশ্ন করতে উত্তর মিলল– একজোট হয়ে লড়লে সরকার বাধ্য হবে আমাদের কথা শুনতে। সুন্দরবন অঞ্চল থেকে এসেছেন ইয়াকুব লস্কর, অসীম মণ্ডলরা। বললেন, একশো দিনের কাজে দুর্নীতি। বেছে বেছে কাজ দেওয়া হয়। হাজার প্রলোভন, তবুও শাসক দলে ভিড়ে যাইনি। এস ইউ সি আই (সি) আছে আমাদের বুকের মধ্যে। এই দলটাই সঠিক পথে লড়াই করে। লড়াই করেই দাবি আদায় করব। আগের দিন ঘর থেকে বেরিয়ে অনেক পথ পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছেছেন বাঁকুড়ার মেনকা বাউরি, বেলা দুলে, পুরুলিয়ার যশোদা মাহাতরা। ভালো করে খাওয়া হয়নি, স্নান-বিশ্রাম দূরের কথা। এত কষ্ট করে মিছিলে এলেন? প্রশ্ন শুনে চোখে ঝকঝক করে উঠল সংগ্রামী প্রত্যয়। বললেন, কষ্ট তো আছেই। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে কি দুঃখ ঘুচবে? একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। আন্দোলন করেই আদায় করতে হবে সমস্ত দাবি। তাই আমরা মিছিলে এসেছি।

একই প্রত্যয় ফুটে উঠছিল মঞ্চে ভাষণরত বক্তাদের কথাতেও। সুসজ্জিত মঞ্চে ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির ফলে জনজীবনের অসহনীয় দুর্দশার কথা ফুটে উঠছিল তাঁদের কথায়। সবশেষে বক্তব্য রাখেন দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে, প্রবল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও না-ছোড় সংগঠিত লড়াই-ই আদায় করতে পারে দাবি। বললেন, শাসক-শোষকদের যতই কামান-বন্দুক-মিসাইল থাক, শোষিত মেহনতি মানুষের আছে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী হাতিয়ার। সেই হাতিয়ার হল মার্ক্সবাদ। এই মার্ক্সবাদী বিজ্ঞানকে ভিত্তি করে এ যুগের অন্যতম দার্শনিক সর্বহারার মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষাকে বুকে নিয়ে শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য লড়ছে এস ইউ সি আই (সি)। আজ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সমস্ত আক্রমণগুলির বিরুদ্ধে এই দলের নেতৃত্বে লাগাতার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এই পথেই রাজ্যের খেটে-খাওয়া মানুষের আন্দোলনগুলিও জয়লাভ করবে। তার জন্য তিনি গ্রাম-শহর সর্বত্র আন্দোলনের গণকমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

হেদুয়া পার্ক থেকে মিছিল শুরু হয় দুপুর তিনটেয়। তেল-জ্বালানি গ্যাসের আবার মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল শুরুর আগে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রতীকী গ্যাস-সিলিন্ডার। অগ্নিসংযোগ করেন কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য।

শুরু হল মিছিল। মিছিলের সামনে সাজানো বিশাল লাল পতাকা। সারিবদ্ধ ভাবে হাঁটছেন রাজ্য সম্পাদক সহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তাঁদের পিছনে ছাত্র-যুবদের বিশাল জমায়েত। শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে মিছিলে পা মিলিয়েছেন তাঁরা। এর পর এক একটি সুসজ্জিত ট্যাবলো ও সেগুলির পিছনে এক একটি জেলা থেকে আসা আন্দোলনকারীদের স্রোত। হাতে তাঁদের সুসজ্জিত ব্যানার ও পতাকা। মুখে উচ্চকিত স্লোগান।

দৃপ্ত মিছিল চলেছে রাজপথ ধরে। পাশের বেথুন কলেজ থেকে ছাত্রীরা বেরিয়ে এসে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিচ্ছেন মিছিলের জনসমাগমের। মোড়ে মোড়ে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছেন মানুষ। অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছেন মিছিলের দৈর্ঘ্যের দিকে। বলছেন, এত মানুষ এসেছেন মিছিলে! চোখে-মুখে তাঁদের বিস্মিত-আনন্দের আভা– দলটা এত বড় হয়েছে! কান পাতলে ভেসে আসছে তাঁদের নিজেদের মধ্যেকার কথাবার্তা– হ্যাঁ, একমাত্র এই দলটাই তো আছে ভরসা করার মতো! এই দলটাই তো শুধু মানুষের দাবি নিয়ে লড়ে, কেবল ভোটের পেছনে ছোটে না! মন দিয়ে তাঁরা শুনছেন স্লোগানের উচ্চারণ। পড়ার চেষ্টা করছেন ব্যানারে, পোস্টারে লেখা দলের বক্তব্য। শেষ দেখা যাচ্ছে না মিছিলের। রাস্তায় আটকে থাকা পথচারীদের মধ্যে কেউ কেউ সামান্য অসহিষ্ণু হলে পাশের জন তাঁকে বোঝাচ্ছেন–এই প্রতিবাদটাই আমাদের দরকার। হোক দেরি, পাশে দাঁড়ান। মিছিল পৌঁছে যেতেই দুজন বাইক আরোহীকে ভলান্টিয়াররা দ্রুত পার হয়ে যাওয়ার জন্য বলতেই তাঁরা বলে উঠলেন, না, যত দেরিই হোক, পুরো মিছিলটাই দেখবো। এস ইউ সি আই (সি)-র ডাকে এ মিছিল যে তাঁদেরই মিছিল!

বিধান সরণি ধরে মিছিল ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি ছাড়িয়ে লোহাপট্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক জন ব্যাঙ্ক-কর্মচারী অফিস থেকে বেরিয়ে এসে মুগ্ধ চোখে মিছিলের উত্তাপ অনুভব করছেন, ছবি তুলে রাখছেন। তখন স্লোগান উঠছে–ব্যাঙ্ক-রেল বেসরকারিকরণ মানছি না।

কলেজ স্ট্রিটে পৌঁছতে মিছিলকে অভিনন্দন জানিয়ে হাত নাড়তে দেখা গেল অনেককে। জলের বোতল এগিয়ে দিলেন কেউ কেউ। এলাকার মানুষ সংবর্ধনা দিলেন মিছিলকারীদের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘ক্যালকাটা এমপ্লয়িজ ইউনিটি ইউনিয়ন’, ‘বইপাড়া হকার্স-ব্যবসায়ী সমিতি’, ‘কলেজ স্ট্রিট ব্যবসায়ী সমিতি’, ‘ভুবনেশ্বরী রোড-লাইনস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’ এবং ‘জয় মাতাদি লরি ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন’-এর পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদকের হাতে তুলে দেওয়া হল ফুলের তোড়া। উপস্থিত এলাকার মানুষ ও পথচারীরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেন মিছিলকে।

মিছিলের মুখ যখন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমাপ্তি সভামঞ্চের কাছে, শেষাংশ তখন সবে হেদুয়া পার্ক ছেড়ে এগোচ্ছে। ধর্মতলার মোড়ে একজন বললেন– এত বড় মিছিল! এবার সরকার বুঝবে। ব্যাপকতায়, শৃঙ্খলায় এই মিছিল তাঁদের মুগ্ধ করেছে। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে হাজার হাজার মানুষ আর নানা দাবি সংবলিত সুদৃশ্য ট্যাবলোর মিছিল দেখতে দেখতে অনেকে ভুলেই গেছেন তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা! সংবাদমাধ্যমে এই মিছিলের ছবি-খবর না-ও থাকতে পারে। ঠাঁই পেতে পারে যানজটের খবরের তলায়। প্রশাসন বলতে পারে জমায়েত কয়েক হাজারের। কিন্তু বাস্তবে এ-দিন মানুষের সংখ্যা ছিল পুলিশ-প্রশাসনের হিসাবের বাইরে। প্রচারের আলো না পেলেও, শত বিভ্রান্তির চেষ্টা সত্তে্বও গণআন্দোলনের সৈনিকদের এই মিছিল নাগরিকদের মনে দীর্ঘদিন অম্লান হয়ে থাকবে।

রানি রাসমণি অ্যাভেনিউতে মিছিল পৌঁছালে ডাঃ অশোক সামন্তের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের কাছে দাবিপত্র দিতে যান। নবান্ন থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী দাবিপত্র নেবেন না। মিছিলের নেতৃবৃন্দ জানিয়ে দেন, সরকারের এই ঔদ্ধত্যের জবাব মানুষ আন্দোলনের ময়দানেই দেবেন।

 

 

বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্র হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আড়াল করার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আবরণ এবং এটা একবার প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে তখন নির্বাচনের মাধ্যমে কোনও ব্যবস্থাকে পাল্টানো সম্ভব নয়। … কয়েক বছর অন্তর শোষকশ্রেণির হয়ে কারা সরকারে বসবে এবং জনগণের উপর শোষণ-অত্যাচার চালাবে নির্বাচনের দ্বারা এটাই নির্ধারিত হয়।

                                                                                                                                                                           – ভি আই লেনিন

ভোটের মারফত হাজার বার সরকার পাল্টেবা আক্ষরিক অর্থে আইনকানুন সংশোধন করার চেষ্টার মধ্যে দিয়ে জনসাধারণের পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদী শোষণ ব্যবস্থার থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। এই মুক্তি অর্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে, জনসাধারণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সঠিক বিপ্লবী কায়দায় পরিচালনার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে জনসাধারণের অমোঘ সংঘশক্তি গড়ে তোলা এবং বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণির দলের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা।

                                                                                                                                                                              –শিবদাস ঘোষ

 

১৯ দফা দাবি

১।       অত্যাবশ্যক পণ্যের কালোবাজারি, মজুতদারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি রদ করতে হবে।

২।       সব শূন্য পদ পূরণ, সমস্ত কর্মক্ষম বেকারের চাকরি দিতে হবে, সরকারি চাকরি নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।

৩।      ‘দুয়ারে মদ’ প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। মদ গাঁজা চরস ড্রাগস সহ সমস্ত মাদকদ্রব্যের ব্যবসা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মদের প্রসার ঘটিয়ে ছাত্র ও যুবকদের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে।

৪।       হাসপাতালে ওষুধ ছাঁটাই করা চলবে না। হাসপাতাল থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগী ফেরানো চলবে না। স্বাস্থ্যসাথীর নামে চিকিৎসাকে বিমানির্ভর করা চলবে না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সকলের সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৫।      কোনও অছিলায় রাজ্যে ‘কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ চালু করা চলবে না। স্কুল শিক্ষাকে ‘পিপিপি মডেল’-এর আওতায় এনে বেসরকারিকরণ করা চলবে না। শিক্ষার মানোন্নয়নে পাশ-ফেল প্রথা পূর্ণ রূপে চালু করতে হবে। শিক্ষার ধর্মীয়করণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ ও ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো চলবে না। শিক্ষায় ফি বৃদ্ধি করা চলবে না।

৬।      চটকল ও চা বাগান সহ সমস্ত বন্ধ কারখানা খুলতে হবে। শ্রমিকদের সুস্থভাবে বাঁচার মতো মজুরি দিতে হবে। ট্যাক্স ছাড় নয়, ধনকুবেরদের উপর অতিরিক্ত ট্যাক্স বসিয়ে বন্ধশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।

৭।       ভিক্ষাতুল্য সামান্য অর্থ নয়, স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক পদে নিয়োগ সহ সব নিয়োগে দুর্নীতি ও দলবাজি বন্ধ করতে হবে।

৮।      সরকারি অর্থের ব্যাপক আত্মসাৎ ও অপচয় বন্ধ করে গরিব মানুষের প্রকৃত সাহায্য হয় এমন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। মেলা-খেলা-ক্লাবে টাকা না ঢেলে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যেই কাজ দিতে বছরভর কর্মসংস্থান করতে হবে।

৯।       নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে হবে। সুন্দরবন সহ সমুদ্রতীরবর্তী জনবসতিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য স্থায়ী নদীবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

১০। নারী, নাবালিকা ও শিশু পাচার রোধে এবং নারী নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ বন্ধে সরকারকে তৎপর হতে হবে।

১১। দলবাজি বন্ধ করে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে। বিরোধীদের উপর সন্ত্রাস, আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনকে গুণ্ডাতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে হবে। নানা অজুহাতে মিছিল-মিটিং নিয়ন্ত্রণ করা চলবে না।

১২। বিদ্যুৎ-এর দাম কমাতে হবে। ‘বিদ্যুৎ বিল ২০২১’ বাতিল করতে হবে। সারের কালোবাজারি বন্ধ ও সার-বীজ-কীটনাশকের দাম কমাতে হবে। ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও কম সুদে ঋণ দিতে হবে।

১৩। আশা-আইসিডিএস, পৌর স্বাস্থ্যকর্মী-মিড ডে মিল-নির্মাণ কর্মী-বিড়ি শ্রমিক-মোটরভ্যান চালক সহ সর্বস্তরের অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবি অবিলম্বে মানতে হবে।

১৪। দেউচা-পাঁচামিতে আদিবাসীদের জোর করে উচ্ছেদ চলবে না।

১৫। পরিবহণের ভাড়া বাড়ানো চলবে না।

১৬। আনিস হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দ্রুত শেষ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।

১৭। শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী শ্রমকোড বাতিল করতে হবে। ধনকুবেরদের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি জলের দরে বেচে দেওয়া চলবে না। ধনকুবেরদের কাছে ব্যাঙ্কের সমস্ত ঋণ উদ্ধার করতে হবে।

১৮। পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দামবৃদ্ধি রোধ করতে হবে।

১৯। প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুদের হার কমানো চলবে না।