দক্ষিণ এশিয়ার বাম ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলি ১৯ ডিসেম্বর এক যৌথ বিবৃতিতে ভারত ও বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের ধর্মীয় এবং অন্যান্য সমস্ত ধরনের সংখ্যালঘু মানুষের উপর নিপীড়ন বন্ধ করে বিদ্বেষ ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। বিবৃতিটি প্রকাশ করা হল।
‘সাম্প্রতিক সময়ে ভারত, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সহ সমস্ত রকমের সংখ্যালঘু জনজীবনের উপর যে ব্যাপক আক্রমণ নামিয়ে আনছে, আমরা তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা লক্ষ করছি, এই দেশগুলির শাসক শ্রেণি নয়া উদারনৈতিক পুঁজি তথা একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে নিজের নিজের দেশে বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতি প্রখরতর করছে, যা এই দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। ভারতবর্ষে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং দলিত আদিবাসীদের উপর ধারাবাহিক হামলা, বাংলাদেশে একটি স্বৈরাচারী ক্ষমতার পরিবর্তনের পরে সাম্প্রতিক সময়ে সেই দেশের বিভাজনকামী শক্তিগুলির ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নানা প্রান্তিক জনগণের উপর আক্রমণ শ্রমজীবী জনগণের জীবন ও জীবিকার সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলছে। অন্যান্য দেশগুলিতেও এই বিভাজনকামী মৌলবাদী শক্তিগুলি শাসক শ্রেণির মদতে শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং যথেষ্ট সক্রিয় আছে। যে কোনও দেশের সংখ্যালঘু মানুষ সহ সমস্ত ধরনের বৈষম্যের শিকার জনগণের সমানাধিকার তথা জীবন-জীবিকা ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুশীলনের অধিকার রক্ষার লড়াই গণতন্ত্রের অন্যতম বুনিয়াদি প্রশ্ন। সেই অধিকার আজ চ্যালেঞ্জের মুখে।
দেশগুলিতে পুঁজিমালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী শক্তিগুলিই দেশ পরিচালনা করছে এবং স্বভাবতই নিপীড়িত মানুষের ঐক্য বিনষ্টকারী বিভাজনের শক্তিগুলিকে তারা মদত দিচ্ছে। তাই শাসক শ্রেণির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ও পুঁজির শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আজ একাকার হয়ে গেছে। সমাজে সমস্ত প্রকার সংখ্যালঘু মানুষের অধিকারের লড়াই তথা বৈষম্যবিরোধী সমতার লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে্য এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। দেশগুলিতে গণতন্ত্র ও সমানাধিকারের দাবিতে আমরা যে বামপন্থী ও প্রগতিশীল শক্তিগুলি লড়াই করছি, আমাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থাকা প্রয়োজন। সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা এবং সমানাধিকারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব আমাদের উপরেই রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীসমাজ সহ গণতন্ত্রপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল ও শ্রমজীবী সমস্ত মানুষকে এই বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’