শ্রম আইন সংস্কার ও শিক্ষায় ব্যাপক বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ আর্জেন্টিনা জুড়ে

রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল।

৯ মে সর্বাত্মক ধর্মঘটে অচল হল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। চরম দক্ষিণপন্থী জাভেইর মিলেই সরকারের শ্রম আইন সংস্কার সহ নানা পদক্ষেপ এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ৭১ শতাংশ বরাদ্দ ছাঁটাইয়ে মানুষের ক্ষোভের আগুন মাত্রাছাড়া হয়। সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে নেমে পড়েন রাজপথে। লাগাতার বিক্ষোভের পর ধর্মঘটে সামিল হয় দেশের বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র-অভিভাবক এবং সাধারণ মানুষ। ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে পরিবহণ ব্যবস্থা, বিমান চলাচল, বন্দর। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা ছিল বন্ধ। বাজার-ব্যাঙ্কগুলি ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ।

প্রেসিডেন্ট মিলেই গত ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন– অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার করে দেশকে তিন অঙ্কের জিডিপিতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই তিনি পুঁজিপতিদের স্বার্থে একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন, যাতে ক্ষুণ্ন হতে থাকে জনগণের স্বার্থ। বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ঘটে দেশে– প্রায় ৩০০ শতাংশ। জনসেবা ক্ষেত্রগুলিতে বরাদ্দ ছাঁটাই, ভর্তুকি বন্ধ করার পথ ধরে সরকার। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে, সাধারণ মানুষের আয় কমতে থাকে ভয়ঙ্কর হারে, বাড়তে থাকে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যাও। শ্রম আইন সংস্কারের ফলে শ্রমিকদের অধিকার ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে থাকে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলির বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় সরকার। সরকারি ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়।

এক সময় লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে আর্জেন্টিনাতে শিক্ষা ছিল সবচেয়ে উন্নত মানের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পুরোপুরি বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ পেত ছাত্ররা। সরকারি এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২২ লক্ষ ছাত্র বিনা বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ পেত। সরকারের নীতিতে সে সব এখন অতীত।

‘কোনও টাকা নেই’ এই অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ ছাঁটাই করতে শুরু করে মিলেই সরকার। বুয়েনস আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, সরকার শিক্ষায় বরাদ্দ এতটাই কমিয়েছে যে, এতে বড়জোর দু-তিন মাস চলতে পারে। তারপর পড়াশোনা, শিক্ষকদের বেতন, অন্যান্য কাজকর্ম সবই বন্ধ করে দিতে হবে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, অসংখ্য ছাত্রের ডিগ্রি পাওয়ার আগেই অর্থসংকটের জন্য বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে।

শিক্ষাবাজেটে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিক্ষোভ শুরু হয় ধর্মঘটের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। সরকারের শ্রমিক-মারা নীতির প্রতিবাদে শ্রমিক সংগঠনগুলি লাগাতার আন্দোলনে নামে। শিক্ষা-পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি নিয়ে সামিল হন ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও। বিমান থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের মিছিলে শুধুই মানুষের ঢেউ। রাজধানীতেই শুধু ৫ লক্ষের বেশি মানুষ মিছিল করে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ ছাড়াও করডোবা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ শহরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান লক্ষ লক্ষ মানুষ।

মিলেই সরকার শিক্ষাকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা’ হিসাবে ঘোষণা করে আন্দোলনে লাগাম পরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করছে আন্দোলন দমন করতে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দৃঢ়পণ– লাগাতার আন্দোলন জারি রেখেই জনবিরোধী নীতি প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করবেন এবং এ পথেই শিক্ষার দাবি আদায় করবেন তাঁরা।

আন্দোলনরত ট্রেড ইউনিয়নগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক হুগো ইয়াস্কি বলেছেন, ‘সরকার ধনীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থ বলি দিচ্ছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ পুঁজিপতিদের কাছে বেচে দিচ্ছে। শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে’। এই সংবাদ পড়ে ভারতের সাধারণ মানুষও মোদি সরকারের সাথে মিলেই সরকারের মিল খুঁজে পাচ্ছেন।

দেশে দেশে অন্যান্য পুঁজিবাদী সরকারের মতোই আর্জেন্টিনার পুঁজিবাদী সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রাস্তাকেই হাতিয়ার করেছেন সেখানকার মানুষ। ভারতেও আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি করতে হবে মানুষকে। এ ছাড়া বাঁচার রাস্তা নেই।

সূত্রঃ রয়টার্স-৯ মে,

আল জাজিরা-২৪ এপ্রিল,

ইউরো নিউজ.বিজনেস-১০ মে ২০২৪