Breaking News

শ্রমজীবী জনগণের প্রিয় নেতা কমরেড সি কে লুকোস

১৭ ফেব্রুয়ারি তিরুবনন্তপুরমের স্মরণসভায় রক্তব্য রাখছেন কমরেড কে রাধাকৃষ্ণ।

 

এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর পলিটবুরো সদস্য এবং পূর্বতন কেরালা রাজ্য সম্পাদক কমরেড সি কে লুকোস আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি তিরুবনন্তপুরমের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ তিনি পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ বয়স হয়েছিল ৭১ বছর৷

১৯৬০–এর দশকের শেষভাগে কোল্লামে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থাকাকালীন তিনি দলের সঙ্গে যুক্ত হন৷ সেই সময় থেকেই তিনি কেরালায় দলকে সংগঠিত করার সংগ্রামের পুরোভাগে থেকেছেন৷ এ জন্য কষ্টসাধ্য সংগ্রামকে তিনি হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন৷ কেরালায় দল গঠনের সূচনা পর্বে অগ্রণী সংগঠক কমরেড ভি নটরাজনের আকস্মিক মৃত্যুতে যে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা অতিক্রম করার সংগ্রামে কমরেড সি কে লুকোস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন৷ কমরেড লুকোস দীর্ঘদিন কোল্লাম জেলা সংগঠনী কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন৷

শেষ যাত্রার আগে কমরেড লুকোসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পলিটবুরো সদস্য কমরেডস সৌমেন বসু, কে রাধাকৃষ্ণ সহ কেরালা রাজ্য নেতৃবৃন্দ।

 

১৯৮৮ সালে কেরালার প্রথম রাজ্য সম্মেলনে তিনি রাজ্য কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন৷ দলের অভ্যন্তরে যৌথতা গড়ে তোলা এবং দলকে সুসংবদ্ধ সংগঠনে পরিণত করার কাজে তাঁর নেতৃত্ব অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে৷ কমরেডদের আদর্শগত চেতনার মান উন্নত করা এবং তাকে দৃঢ় আদর্শগত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য তিনি মার্কসবাদ–লেনিনবাদ শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে নিরন্তর আলাপ–আলোচনা করতেন৷ অত্যন্ত যত্নের সাথে তিনি অসংখ্য পার্টি কমরেডকে মার্কসবাদ–লেনিনবাদ শিবদাস ঘোষের চিন্তার আলোকে ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা করার পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন৷ এর মাধ্যমে তাদের অনেককে যোগ্য সংগঠকে পরিণত হতে সাহায্য করেছেন৷ দল, শ্রেণিসংগঠন ও গণসংগঠন গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরলসভাবে কেরালা রাজ্যের সর্বত্র ঘুরেছেন৷ তাঁর এই গতিশীল এবং উদ্যমী নেতৃত্ব কেরালার সর্বত্র সংগঠন বিস্তারে সাহায্য করেছে৷

বিপ্লবী শ্রমিক ইউনিয়ন এ আই ইউ টি ইউ সি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমরেড লুকোসের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য৷ তিনি এই সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির সহ সভাপতি এবং কেরালা রাজ্য কমিটির সভাপতি ছিলেন৷ বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কেরালায় ‘জনকিয়া প্রতিরোধ সমিতি’ নামে গণকমিটি গড়ে তোলার আহ্বান তিনি তুলে ধরেন৷ বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ারের মতো বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই কমিটির নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন৷ কেরালার গণআন্দোলনে এই গণকমিটি এক নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে৷ এর মধ্য দিয়ে বহু আন্দোলনে জয় অর্জিত হয়৷ পার্টির শক্তিবৃদ্ধিতে এই আন্দোলন ব্যাপক অবদান রেখেছে৷

কমরেড লুকোস উন্নত মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি আয়ত্ত করার সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার জন্য শিশুদের উদ্বুদ্ধ করতেন৷ এই উদ্দেশ্যে রাজ্যভিত্তিক শিশুশিবির করা এবং তার যথাযথ পরিচর্যার জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন৷ শিশু শিবিরগুলিতে এক সময়ের অংশগ্রহণকারী বহুজন আজ দলের সর্বক্ষণের সংগঠক৷ ২৫ বছর আগে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের সাফল্যের সাক্ষ্য এর মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে৷

তিনি তামিলনাড়ুতে দলের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন৷ সেখানেও তাঁর উপদেশ ও সাহায্য ওই রাজ্যে পার্টির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সহায়ক হয়েছে৷ দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে তাঁর চলাফেরা যখন প্রায় রুদ্ধ সেই সময়েও সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিষয় এবং কাজকর্ম পরিচালনায় তিনি নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেছেন৷ অসুস্থতার মধ্যেও মার্কসবাদ–লেনিনবাদের ভিত্তিতে চিন্তার যে স্বচ্ছতার স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন, তা দলের নেতা–কর্মীদের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে৷ তাঁর প্রয়াণে ভারতের সর্বহারা শ্রেণি এক বিশিষ্ট নেতাকে হারাল৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ২৮ সংখ্যা)