এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর পলিটবুরো সদস্য এবং পূর্বতন কেরালা রাজ্য সম্পাদক কমরেড সি কে লুকোস আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি তিরুবনন্তপুরমের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ তিনি পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ বয়স হয়েছিল ৭১ বছর৷
১৯৬০–এর দশকের শেষভাগে কোল্লামে ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র থাকাকালীন তিনি দলের সঙ্গে যুক্ত হন৷ সেই সময় থেকেই তিনি কেরালায় দলকে সংগঠিত করার সংগ্রামের পুরোভাগে থেকেছেন৷ এ জন্য কষ্টসাধ্য সংগ্রামকে তিনি হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন৷ কেরালায় দল গঠনের সূচনা পর্বে অগ্রণী সংগঠক কমরেড ভি নটরাজনের আকস্মিক মৃত্যুতে যে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা অতিক্রম করার সংগ্রামে কমরেড সি কে লুকোস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন৷ কমরেড লুকোস দীর্ঘদিন কোল্লাম জেলা সংগঠনী কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন৷
১৯৮৮ সালে কেরালার প্রথম রাজ্য সম্মেলনে তিনি রাজ্য কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন৷ দলের অভ্যন্তরে যৌথতা গড়ে তোলা এবং দলকে সুসংবদ্ধ সংগঠনে পরিণত করার কাজে তাঁর নেতৃত্ব অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে৷ কমরেডদের আদর্শগত চেতনার মান উন্নত করা এবং তাকে দৃঢ় আদর্শগত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য তিনি মার্কসবাদ–লেনিনবাদ শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার মৌলিক বিষয়গুলি নিয়ে নিরন্তর আলাপ–আলোচনা করতেন৷ অত্যন্ত যত্নের সাথে তিনি অসংখ্য পার্টি কমরেডকে মার্কসবাদ–লেনিনবাদ শিবদাস ঘোষের চিন্তার আলোকে ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনা করার পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন৷ এর মাধ্যমে তাদের অনেককে যোগ্য সংগঠকে পরিণত হতে সাহায্য করেছেন৷ দল, শ্রেণিসংগঠন ও গণসংগঠন গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরলসভাবে কেরালা রাজ্যের সর্বত্র ঘুরেছেন৷ তাঁর এই গতিশীল এবং উদ্যমী নেতৃত্ব কেরালার সর্বত্র সংগঠন বিস্তারে সাহায্য করেছে৷
বিপ্লবী শ্রমিক ইউনিয়ন এ আই ইউ টি ইউ সি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমরেড লুকোসের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য৷ তিনি এই সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির সহ সভাপতি এবং কেরালা রাজ্য কমিটির সভাপতি ছিলেন৷ বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কেরালায় ‘জনকিয়া প্রতিরোধ সমিতি’ নামে গণকমিটি গড়ে তোলার আহ্বান তিনি তুলে ধরেন৷ বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ারের মতো বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই কমিটির নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন৷ কেরালার গণআন্দোলনে এই গণকমিটি এক নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে৷ এর মধ্য দিয়ে বহু আন্দোলনে জয় অর্জিত হয়৷ পার্টির শক্তিবৃদ্ধিতে এই আন্দোলন ব্যাপক অবদান রেখেছে৷
কমরেড লুকোস উন্নত মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি আয়ত্ত করার সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার জন্য শিশুদের উদ্বুদ্ধ করতেন৷ এই উদ্দেশ্যে রাজ্যভিত্তিক শিশুশিবির করা এবং তার যথাযথ পরিচর্যার জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন৷ শিশু শিবিরগুলিতে এক সময়ের অংশগ্রহণকারী বহুজন আজ দলের সর্বক্ষণের সংগঠক৷ ২৫ বছর আগে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের সাফল্যের সাক্ষ্য এর মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে৷
তিনি তামিলনাড়ুতে দলের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন৷ সেখানেও তাঁর উপদেশ ও সাহায্য ওই রাজ্যে পার্টির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সহায়ক হয়েছে৷ দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে তাঁর চলাফেরা যখন প্রায় রুদ্ধ সেই সময়েও সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বিষয় এবং কাজকর্ম পরিচালনায় তিনি নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করেছেন৷ অসুস্থতার মধ্যেও মার্কসবাদ–লেনিনবাদের ভিত্তিতে চিন্তার যে স্বচ্ছতার স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন, তা দলের নেতা–কর্মীদের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে৷ তাঁর প্রয়াণে ভারতের সর্বহারা শ্রেণি এক বিশিষ্ট নেতাকে হারাল৷