কাশ্মীরে সিআরপিএফ জওয়ানদের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর দেশের নানা প্রান্তে যেভাবে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ নিগৃহীত হচ্ছেন তাতে শুভবুদ্ধির নাগরিক মাত্রেই উদ্বিগ্ন৷ এ রাজ্যেও নয় নয় করে নিগ্রহের বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে৷ কাশ্মীরিদের উপর হামলা ছাড়াও যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারি অপদার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কিংবা সরকারি নেতা–মন্ত্রীদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধং দেহি বক্তৃতাবাজি সম্পর্কে নিজের মত প্রকাশ করেছেন, তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন৷ মেদিনীপুরে এক ইঞ্জিনিয়ারকে সংগঠিত বাইক–বাহিনী মারধর করেছে, মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে৷ কারণ তিনি ফেসবুকে নিজের মত পোস্ট করেছিলেন৷ তাঁর মতে, পাকিস্তানি মাত্রেই খারাপ মানুষ– এ কথা তিনি মনে করেন না৷ হিংস্রতার বিরুদ্ধে হিংস্রতা, এই সমাধানে তিনি বিশ্বাস করেন না৷ তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে৷
কলকাতায় দু–দশক ধরে বসবাস করা কাশ্মীরি চিকিৎসককে যেভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে কিংবা নদীয়ায় গত দশ বছর ধরে শাল বিক্রির সূত্রে যাতায়াত ও বসবাস করা শাল বিক্রেতাকে যেভাবে দলবদ্ধভাবে মেরে মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখে অনেকেই বলছেন, এ কোন বাংলা, কোন কলকাতা এই বাংলা, এই কলকাতা আমাদের চেনা নয়৷ এ রাজ্য এর থেকেও বড় অনেক বিপন্নতার সময়ে গভীর সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে৷ অন্যত্র নিগৃহীত, আক্রান্তদের আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করেছে৷ ধর্ম–প্রদেশ নির্বিশেষে বিপন্ন মানুষের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ সহিষ্ণুতা, সৌভ্রাতৃত্বের দীর্ঘ ঐতিহ্য দেশ জুড়ে এ রাজ্য সম্পর্কে যে গভীর আস্থা তৈরি করেছে তা থেকেই কলকাতার এক শাল বিক্রেতা নিগ্রহের পরও অনায়াসে বলতে পারেন, শ্রীনগর নয়, কলকাতায় রয়েছি শুনলেই মা বেশি শান্তি পান৷ এই নিরাপত্তার বোধ তো একদিনে তৈরি হয়নি৷ আপনাআপনিও তৈরি হয়নি৷ দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষের সচেতন সংগ্রামের ফসল এটি৷ যা আজ ভাঙতে বসেছে৷ বাংলায় এই ঐতিহ্যটি কীভাবে গড়ে উঠেছিল? আর আজ তা ভাঙতেই বা বসেছে কেন?
প্রথমত, কাশ্মীরিদের উপর, কিংবা স্বাধীন মতপ্রকাশকারীদের উপর বা সরকারি অপদার্থতার সমালোচকদের উপর হামলার যে ঘটনাগুলি ঘটছে তা স্বতঃস্ফূর্ত নয়, কিংবা গভীর দেশপ্রেমে বা জওয়ানদের নিহত হওয়ায় গভীর শোকে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলার ফল নয়৷ দেশপ্রেম মানে তো দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা গরিব শাল বিক্রেতা, ফলওয়ালাকে মারাটা কি দেশপ্রেম যদি আক্রমণকারীরা দেশপ্রেমের ভেকধারী না হয়ে যথার্থ দেশপ্রেমী হতেন তবে জওয়ানদের নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁদের মনে এ প্রশ্নই প্রথম উঠত যে, ঘটনা ঘটতে পারল কী করে? বাস্তবে রাষ্ট্রপতি শাসন ও সামরিক শাসনের আওতায় থাকা কাশ্মীরে বিশেষত চরম নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা পুলওয়ামায় এমন ঘটনা ঘটতে পারল কী করে? এত বিপুল পরিমাণ আরডিএক্স, যা একমাত্র সেনা বাহিনীই ব্যবহার করে, তা এল কোথা থেকে? গোয়েন্দা সতর্কতা সত্ত্বেও কেন কোনও অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল না? যাতে ভবিষ্যতেও এভাবে আবার জওয়ানদের প্রাণ দিতে না হয়, তার জন্য দ্রুত তদন্ত করে এ সবের জন্য দায়ী এবং দোষীদের চিহ্ণিত করার দাবিই তো সবার আগে ওঠার কথা৷ তা না তুলে প্রশ্নকারীদের উপরই হামলা চালানো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া ঘটতে পারে না৷ যার উদ্দেশ্য দেশপ্রেমের নামে জিগির তোলা এবং দেশপ্রেমের ঠিকাদারিটা শাসক দলের নেতাদের হাতে রাখা, সরকারের যে কোনও সমালোচককেই দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়া এবং এইভাবে যে কোনও বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া৷ স্বাভাবিকভাবেই যত দিন যাচ্ছে তত জিগিরের পিছনের পরিকল্পনার কথা সামনে এসে যাচ্ছে৷ যে প্রধানমন্ত্রী এতবড় ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পরেও শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, নৌকাবিহার করছিলেন, তিনিই তারপর সভায় সভায় দেশপ্রেমের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন৷ তাঁর দলের ছোট–বড় সব নেতারাই নেমে পড়েছেন এই জিগির তোলার কাজে৷ এক মন্ত্রী তো এমনকী পাকিস্তানের নদীগুলিতে জল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন৷
এই জিগির তোলাটা সরকারের সমস্ত ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে বিজেপি সরকারের বিশেষ দরকার৷ কারণ গত পাঁচ বছরে এই সরকার জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে– কৃষি শিল্প কর্মসংস্থান, কিংবা প্রতিরক্ষা বা বৈদেশিক সম্পর্ক– সমস্ত কিছুতে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে৷ রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে যে জিগির তারা তুলতে চেয়েছিল সেটা ব্যর্থ হয়েছে৷ সিবিআই জুজুও কাজ দেয়নি৷ এই অবস্থায় জওয়ানদের মৃত্যুকে সামনে রেখে দেশপ্রেমের জিগির তোলার রাস্তাটিই একমাত্র এই ব্যর্থ সরকারের সামনে খোলা ছিল৷ গুজরাটের এক বিজেপি নেতা প্রকাশ পাণ্ড্য দলের গোপন পরিকল্পনাকে প্রকাশ করে ফেলেছেন৷ বলেছেন, জাতীয়তাবাদকে ভোটে পরিণত করতে হবে৷ সঙঘ পরিবারও তাদের কর্মসূচিতে বদল ঘটিয়ে রামমন্দিরের পরিবর্তে জাতীয়তাবাদের নামে মেরুকরণকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ এই সামগ্রিক পরিকল্পনারই অঙ্গ কাশ্মীরি বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে মুসলিম বিরোধিতার জিগির তোলা৷
কিন্তু শাসক বিজেপি এবং তার দোসর সংঘ পরিবার জিগির তোলার যত চেষ্টাই করুন, দেশ জুড়ে সাধারণ মানুষের একটা অংশ সাহসের সাথে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন৷ এ রাজ্যেও সর্বত্র তাঁরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন৷ আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন৷ কাশ্মীরিদের উপর দেশজুড়ে বিজেপি–সংঘ পরিবারের আক্রমণ সত্ত্বেও সে রাজ্যে নানা কাজে অন্য রাজ্য থেকে যাওয়া মানুষদের প্রতি কাশ্মীরের মানুষ সহমর্মিতার হাতই বাড়িয়ে দিয়েছেন, বুক দিয়ে আগলেছেন৷ বলেছেন, ভাই বেঁচে থাকতে ভাইয়ের কোনও ক্ষতি হতে দেবে না৷ বিভেদকামী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সমাজের এই শক্তিই সবেচেয়ে বড় ভরসা৷ এই অংশটিকেই আজ সমস্ত দিক থেকে আরও শক্তিশালী করতে হবে৷ সে ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটিকে কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না যে, এ রাজ্যে একদা শক্তিশালী এই সামাজিক শক্তিটি কিছুটা হলেও দুর্বল হল কী করে? এই দুর্বলতার সুযোগেই তো সাম্প্রদায়িক তথা প্রগতিবিরোধী অংশটি কিছুটা হলেও শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে৷ তা ঘটতে পারল কী করে?
এ রাজ্যে প্রগতিশীল সামাজিক শক্তিটির গড়ে ওঠার ইতিহাসটি দীর্ঘ৷ রামমোহন–বিদ্যাসাগ নবজাগরণ আন্দোলন দিয়ে এর শুরু৷ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের আপসমুখী নেতৃত্ব সমাজ থেকে জাতপাত–ধর্ম–সম্প্রদায়ের বিভেদ দূর করতে যে সামাজিক–সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার দরকার ছিল তা পুরোপুরি অবহেলা করলেও একদিকে আপসহীন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, অন্য দিকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের কর্মপ্রক্রিয়ায় এই ধারাটি অনেকখানি শক্তিশালী হয়েছে এবং জাতপাত ধর্ম–বর্ণের পরিচয়কে পিছনে ঠেলে জনগণের মধ্যে ভারতীয় পরিচয়টিকে সামনে আনার চেষ্টা করেছে৷
স্বাধীনতা পরবর্তী কালে দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেস রাজ্যে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলেও সাম্প্রদায়িকতা, জাতপাতের বিভেদকে সমাজ থেকে নির্মূল করার পরিবর্তে এগুলিকে প্রয়োজন মতো ভোটে জিততে কাজে লাগিয়েছে৷ বিপরীতে পাঁচের দশক ছয়ের দশকে কংগ্রেসি অপশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার বামপন্থী গণআন্দোলন জাত–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে শোষিত সাধারণ মানুষকে সমস্বার্থবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে৷ এর দ্বারা জনগণের মধ্যে একটা সংগ্রামী মানসিকতাও গড়ে উঠেছিল, যা সারা দেশে এ রাজ্যকে একটা বিশিষ্টতা দিয়েছিল৷ এর ব্যতিক্রম শুরু হয় যুক্তফ্রন্ট সরকারে সিপিএমের সংকীর্ণ রাজনীতির মধ্য দিয়ে৷ জ্যোতি বসু পুলিশমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে সরকারি ক্ষমতা ও পুলিশকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও ভাবে, কোনও রকম নীতি–আদর্শের তোয়াক্কা না করে দলের শক্তি বাড়ানোর রাজনীতিই এই সামাজিক শক্তির ক্ষয় শুরু করে৷ পরবর্তী কালে চৌত্রিশ বছরের শাসনের ইতিহাস তো লাল পতাকা হাতে নিয়ে বামপন্থাকে কলঙ্কিত করারই ইতিহাস৷ লাল পতাকা দেখে, মুখে ইনকিলাবির স্লোগান শুনে যে মানুষগুলি একদিন জড়ো হয়েছিল দলের নেতারা তাদের না দিয়েছেন বামপন্থার পাঠ, না শিখিয়েছেন লড়াই করতে৷ উন্নত সর্বহারা রুচি–সংস্কৃতির আধারে শ্রেণিসংগ্রাম ও গণসংগ্রামগুলিকে গড়ে তোলার পরিবর্তে শিখিয়েছেন– লড়াই নয়, আন্দোলন নয়, কেবল আমাদের সাথে থাকো, তা হলেই কিছু পাবে৷ এই পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি, সংগ্রামবিমুখতার রাজনীতি মানুষকে সুবিধাবাদী করে, আদর্শগত ভাবে দেউলিয়া করে দেয়৷ তাই সরকার বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে শুধুমাত্র সুবিধা পাওয়ার আশাতেই দলে দলে সিপিএম সমর্থক মানুষ তৃণমূলে যোগ দেয়, বিজেপিতে যোগ দেয়৷ আজ যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এ রাজ্যে কিছুটা হলেও জায়গা করতে পারছে তার পিছনে রয়েছে এই দেউলিয়া রাজনীতির ভূমিকা, যা বামপন্থার, কমিউনিজমের সুনামকে নষ্ট করেছে৷ এস ইউ সি আই (সি)–র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, এ যুগের অন্যতম মার্কসবাদী চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষ সেই ১৯৬৭ সালেই সিপিএমের এই নীতিহীন রাজনীতির পরিণতি কী মারাত্মক হতে পারে সে সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জনসংঘের মতো ধর্মীয় রাষ্ট্রীয়তাবাদীরা ওৎ পেতে বসে আছে৷ তারা সুযোগের অপেক্ষা করছে৷ বামপন্থী আন্দোলনের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ আজও রয়েছে তা নষ্ট হয়ে গেলেই তারা আত্মপ্রকাশ করবে৷ এ কথাটা ক্ষমতাসীন সিপিআই(এম) নেতারা বুঝছেন না৷ তাঁরা কমিউনিজমের আদর্শ, মূল তত্ত্ব বাদ দিয়ে প্রায় কংগ্রেসেরই মতন বড় বড় বুকনি আর মিষ্টি কথার চালাকিতে জনতাকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন৷ এইভাবে কমিউনিজমের সুনামকে নষ্ট করে দিয়ে তাকে কালিমালিপ্ত করছেন৷’’ (যুক্তফ্রন্ট রাজনীতি ও পার্টির সাংগঠনিক কাজকর্মের কয়েকটি দিক)৷
আবার যে তৃণমূল নেত্রী আজ উগ্র দেশপ্রেমীদের কার্যকলাপ দেখে বলছেন, এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়, সংস্কৃতির এই অধঃপতনে তাঁদের ভূমিকাও কম নয়৷ তাঁদের রাজনীতিটাও তো আসলে সিপিএম ধারাবাহিকতারই রাজনীতি৷ তাঁরাও তো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতে জনগণের মধ্যে আদর্শগত মান উন্নয়নের কোনও চেষ্টা না করে বরং ধর্মীয় কর্মসূচিতে বিজেপির সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ তাঁদের নেতা–কর্মীদের কতজনকে সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন? দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন? তাঁরাও তো বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার সিপিএমের ধারাবাহিকতায় রক্ষা করে চলেছেন৷ যে ভাবে হোক ভোটে জেতাই তো তাঁদের রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য৷ এই রাজনীতি দিয়ে কি সামাজিক চেতনার মান উন্নয়ন করা যায়? নাকি একদিনের অর্জিত মানকে রক্ষা করা যায়?
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেস সিপিএম তৃণমূলের নীতিহীন রাজনীতিই বাংলার সমৃদ্ধ চেতনাকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে৷ রাজনৈতিক নেতারা সমাজের অভিভাবক৷ তাঁরা জনসাধারণকে যে পথ দেখান সাধারণ মানুষ মূলত সে পথেই হাঁটেন৷ একদিন নেতাজি, ভগৎ সিং, মাস্টারদা সূর্য সেনের মতো নেতারা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন, সুকঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্র–যুব সমাজের আদর্শ হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন, প্রাতঃস্মরণীয়ে পরিণত হয়েছেন৷ আর এই দলগুলির নীতিহীন রাজনীতি জনসাধারণের মনে রাজনীতিই সম্পর্কেই ঘৃণার মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে৷ এই রাজনীতি বিমুখতা জনগণের মধ্যে সমাজবিমুখতা গড়ে তুলছে, যা প্রতিক্রিয়ার রাজনীতিকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করছে৷ আজ যদি প্রতিক্রিয়ার শক্তিকে প্রতিহত করতে হয়, বাংলার পুরনো ঐতিহ্যকে আবার তুলে ধরতে হয়, তবে রাজনীতিতে নীতির উপর জোর দিতে হবে, রুচি–সংস্কৃতির চর্চার উপর জোর দিতে হবে এবং জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলিকে সামনে রেখে ধর্ম–বর্ণ–সম্প্রদায় নির্বিশেষে শোষিত মানুষকে একত্রিত করে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ আন্দোলনের মধ্যেই মানুষগুলি বুঝবে, জাতপাত–ধর্ম–বর্ণে বিভাজনের দ্বারা তার কোনও লাভ হয় না, বরং তার বেঁচে থাকার আন্দোলনগুলিই দুর্বল হয়৷ লাভবান হয় শোষকরা, শাসক শ্রেণি৷