সেই ১৯৪৭ থেকে ৭৪টা ১৫ আগস্ট পার করেছে এই ভারত। স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্যরাতে ভারত শুনেছিল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর সেই বিখ্যাত ভাষণ, ‘ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি’– নিয়তির সাথে মিলনের পথে এগিয়ে চলেছে দেশ।
৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে আর এক প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনবার সময় প্রশ্ন জাগে, কোটি কোটি রিক্ত-নিঃস্ব-অভুক্ত মানুষের হাহাকারের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস পালনের সমারোহই কি নিয়তি ছিল এই ভারতের! স্বাধীন দেশের এই রূপ যে হতে পারে তা নিয়ে বহু আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, শহিদ ভগৎ সিং, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো আপসহীন বিপ্লবীরা। ব্রিটিশের দাসত্বশৃঙ্খল যদি বা মোচন হয়, দেশের আপামর জনসাধারণের পায়ে বেড়ি পরাতে চায় দেশীয় পুঁজিপতি শ্রেণি। তাঁদের এ হুঁশিয়ারি আজ অতিপ্রকট সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। এসেছে স্বাধীনতা, আসেনি শত শত বীর শহিদের স্বপ্নে দেখা গণমুক্তি। ৭৪ বছরের স্বাধীন ভারতে প্রায় ৯৬ কোটি ভারতবাসী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা অর্জন করেন, সেই মোট সম্পদের চারগুণের বেশি প্রতি বছর জমা হয় মাত্র ১ শতাংশ ভারতবাসীর সিন্দুকে। ১৩০ কোটি জনগণ যা উৎপাদন করে তার ৭৩ শতাংশ ভোগ করে মাত্র ১ শতাংশ ধনকুবের। করোনা মহামারি এই জানা সত্যটাকেই আবার নতুন করে দেখিয়ে দিয়ে গেছে যে, দেশের কোটি কোটি মানুষের থাকার মতো কোনও ঘর নেই। প্রতিদিন শ্রমের বাজারে নিজেকে নিঙড়ে নিঃশেষে বিক্রি করতে না পারলে একটা অতিরিক্ত খাবারের দানাও তাদের কাছে মজুত থাকে না। দেখিয়ে দিয়েছে কাজের খোঁজে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে স্টেশনের শেডে, বাসস্ট্যান্ডের গুমটিতে, বস্তির ঘুপচি ঘরে গাদাগাদি করে যারা রাত কাটায়, যাদের শ্রমে আকাশ ফুঁড়ে ওঠে ইমারত, আধুনিক ব্রিজ, মসৃণ হাইওয়ে– বিপর্যয়ের দিনে স্বাধীন দেশের সরকার তাদের কথাটা একবার মনেও আনতে চায় না। হাজার হাজার মাইল পথ হেঁটেই তাদের ঘরে ফেরার চেষ্টা করতে হয়। রাস্তায় তারা মরে ট্রেনের ধাক্কায়, ট্রাক চাপা পড়ে, না হলে তীব্র গরমে পিপাসার জলটুকু না পেয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে।
এই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৭৪ বছরের স্বাধীন ভারতকে আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দিয়েছেন। কোন ভারতকে? যে ভারতের কর্মক্ষম (১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সের) ৯৭ কোটি মানুষের মাত্র ৪৯ শতাংশ কিছু কাজ করে পেট চালানোর অন্তত একটা চেষ্টা করতে পারে। বাকি ৫১ শতাংশের সেটুকু সুযোগও নেই। উঞ্ছবৃত্তি, ভিক্ষাই তাঁদের অনেকের সম্বল। তাও এ হিসাব ছিল করোনা মহামারি পর্বের আগে। তার পরের চিত্রটা আরও সঙ্গীন। সরকারি মতেই কমপক্ষে ১৪ কোটি কর্মরত মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আত্মনির্ভর! বড় নির্মম শোনায় কথাটা, যখন কলকারখানা, খনি, নির্মাণ প্রজেক্টের কাজ হারানো লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তাদের পরিবার নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে, একটা বিপিএল কার্ডের কিছু সামান্য চাল-গমের আশায় শাসক দলের নেতাদের পায়ে ধরে। এঁরা তো আত্মনির্ভরই ছিলেন– প্রধানমন্ত্রী! আপনিই বলুন, কেন এমন ভিক্ষাবৃত্তির জীবনে এঁদের যেতে হল? কে, কোন নীতিতে এঁদের এই সর্বনাশের দিকে ঠেলল? লালকেল্লার ভাষণে তার উত্তর কোথায়?
তা হলে কেমন আত্মনির্ভর হবে ভারত? প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন ‘ভোকাল ফর লোকাল’ হতে হবে। অর্থাৎ দেশীয় জিনিস কেনার জন্য গলা ফাটাতে হবে সবাইকে। তা হলেই আত্মনির্ভর হয়ে যাবে ভারত। কিন্তু প্রশ্ন হল কে কিনবে? সেই প্রশ্নের সাথেই তো জড়িয়ে আছে, কী তৈরি হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর! তবেই তো খুলবে কলকারখানা, উৎপাদন হবে, কাজ মিলবে। দেশের ৮০ কোটি লোকের তো একটু চাল-গম কেনারই পয়সা নেই। সে জন্যই তো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় জোর দিয়ে বলতে হয় ৮০ কোটি মানুষকে বিন্যমূল্যে খাদ্য দিয়ে কৃতার্থ করেছেন তাঁরা। এই বিশাল জনগোষ্ঠী যে পেট ভরানোর মতো একটু খাদ্য ছাড়া বিশেষ কিছু কেনার মতো অবস্থাতেই নেই, প্রধানমন্ত্রী কি সেই খোঁজ রাখেন? তা হলে কী তৈরি হবে, আর তা কিনবেই বা কে? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিকাঠামোয় ১০০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ আসবে এবং তা ৭ হাজার প্রকল্পে ঢালা হবে। কী হবে তাতে? কিছু ঝাঁ-চকচকে রাস্তা, ব্রিজ, আকাশচুম্বী ফ্ল্যাটবাড়ি হতে পারে। কিন্তু সে রাস্তা কিংবা ব্রিজে চলতে গেলে বেসরকারি পরিকাঠামো নির্মাতা কোম্পানির লাভের ভাঁড়ার ভরাতে যে পরিমাণ টোল ট্যাক্স গুনতে হবে, তা দেবার ক্ষমতা থাকতে হবে তো! কজনের তা আছে? ফ্ল্যাটের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। এর সাথে হবে ‘মাল্টি মোডাল কানেক্টিভিটি’। নাম শুনেই মূর্ছা যাবার জোগাড় সাধারণ মানুষের। কী সেটা? গ্রামে গ্রামে পাতা হবে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল, ইন্টারনেট সংযোগ। তাই দিয়ে চাষি নাকি সারা দেশের বাজারের সাথে যোগাযোগ করে ইচ্ছামতো পণ্য বেচতে পারবেন, গ্রামের ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠবে। ইন্টারনেট আধুনিক জীবনের একটি অংশ, তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু যে গ্রামে পানীয় জল পাওয়াটাই সংকটের, রোজগারের যা হাল তাতে যাতায়াত কিংবা কৃষিপণ্য নিয়ে যেতে কোনও পরিবহণ ব্যবহার করাই গ্রামের মানুষের কাছে দিন দিন কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেখানে এই সংযোগ লাভ দেবে কাকে? এতে রিলায়েন্স জিও মালিকের সেবাদাস হিসাবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কর্তব্য সম্পাদনার গৌরব দাবি করতে পারেন। দেশি-বিদেশি বড় পুঁজি যারা কৃষিপণ্যের পাইকারি এবং খুচরো ব্যবসাকে পুরোপুরি কব্জা করতে চাইছে, তাদের পৌষমাস আসতে পারে, ফাটকার বাজারকে গ্রামের চাষের খেত পর্যন্ত বিস্তারের সুবিধা হতে পারে। কিন্তু অন্য দিকে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র-মাঝারি চাষির জীবনে নেমে আসবে সর্বনাশ। তাঁরা স্বাধীন চাষির বদলে পরিণত হবেন বড় বড় কোম্পানির দাদন নেওয়া খাতকে। ওই সব কোম্পানিকর্তাদের ইচ্ছাতেই চাষির জীবন নিয়ন্ত্রিত হবে। আত্মনির্ভরই বটে!
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নিদান, ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ড। তাতে কে কবে কোন ডাক্তারকে দেখিয়েছে থেকে শুরু করে কী ওষুধ খেয়েছে, সব নথিভুক্ত থাকবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্যমিশনই হোক আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যসাথীই হোক, সেগুলি আদতে স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসারই তো নামান্তর। সরকারি উদ্যোগে সকলের সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকারকে এড়িয়ে গিয়ে মানুষকে বেসরকারি নার্সিং হোম, কর্পোরেট হাসপাতালের থাবার মুখে এগিয়ে দেওয়ার জন্যই যে কল্যাণের আড়ালে এই প্রকল্পগুলি আনা হয়েছে তা আজ বুঝতে অসুবিধা নেই। বেসরকারি নানা বিমা কোম্পানি এই সব প্রকল্পে খুব উৎসাহী। স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ সেজে কর্পোরেট হাসপাতালের মাইনে করা প্রতিনিধিরাও এই নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বাণী দিতে কার্পণ্য করছেন না। এর ফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্যবিমা, ওষুধ কোম্পানি, মার্কেটিং কোম্পানি, হাসপাতাল নামক স্বাস্থ্য ব্যবসার রাঘব-বোয়ালদের খুব সুবিধা হবে। মার্কেটিং এজেন্সিকে পয়সা দিয়ে তাদের যে তথ্য কিনতে হত, তা সরকারের ঘর থেকেই স্বল্পমূল্যে তারা পাবে। দেশের মানুষের চিকিৎসার কোনও সুরাহা এতে হওয়ার নয়।
তবে কোন আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী? এর আগে তিনি বলেছিলেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’। মানে ভারতে এসে বানাও। কী বানাবে, কে বানাবে? এর উত্তর তিনি দেননি। দেখা যাচ্ছে বানানোর মানে অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, এইসবের বিদেশ থেকে আসা যন্ত্রাংশ জোড়ার কারখানা। ইতিমধ্যে রাফাল বিমানের এই রকম যন্ত্রাংশ জোড়ার কাজ রাষ্ট্রায়ত্ত এবং অভিজ্ঞ সংস্থা হ্যালের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে দেওয়া হয়েছে অনিল আম্বানির ভুইফোঁড় সংস্থাকে। ইতিমধ্যেই টাটা, আম্বানি, মিত্তাল, আদানি ইত্যাদি গোষ্ঠী নানা যুদ্ধাস্ত্র তৈরির বরাত নিয়ে মাঠে নেমেছে। প্রশ্নটা হল তাতে দেশের সাধরণ মানুষের কী লাভ? প্রথমত এই আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি মানেই তার বাজার চাই। আর সেই বাজার তৈরি হতে পারে একমাত্র বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধ-উত্তেজনা তৈরির মধ্য দিয়ে। যে কাজটি আমেরিকা, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, ইজরায়েল, ইত্যাদি বনেদি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি করে চলেছে। সংকটগ্রস্ত বাজারের নতুন করে ভাগবাঁটোয়ারার জন্য তারা মরিয়া। সমাজতন্ত্র ত্যাগ করে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরে নাম লেখানো চীন রাশিয়াও তাতে পিছিয়ে নেই। ভারতের একচেটিয়া মালিকদের জন্য বাজার দখলের স্বার্থে ভারত সরকারও দেশের মানুষের কল্যাণের নামে এই সাম্রাজ্যবাদীদের অন্যতম দোসর হিসাবে অস্ত্র ব্যবসার প্রসার চায়। এর ফলে কর্মসংস্থানের খোয়াব সরকার দেখাতে পারে। কিন্তু এই সমস্ত অত্যাধুনিক শিল্পে এমনিতেই কর্মসংস্থান কম। তার ওপর এই উৎপাদন দেশের মানুষের প্রকৃত কোনও কাজে না এসে যে যুদ্ধ উন্মাদনা ডেকে আনে, তাতে মানুষের ক্ষতি হয় অনেক বেশি। মহান স্ট্যালিন এবং পরবর্তীকালে মহান নেতা শিবদাস ঘোষ আরও সুনির্দিষ্টভাবে দেখিয়ে গেছেন, সংকটগ্রস্ত পুঁজিবাদী বাজারের সামান্য একটুখানি আপাত স্থায়িত্বের জন্য আজকের বুর্জোয়া শাসকদের অর্থনীতির সামরিকীকরণ ছাড়া উপায় নেই। বাজারের সংকট মেটাতে গিয়ে পুঁজিবাদ কীভাবে উৎপাদনের সামগ্রিক ব্যবস্থাটাকে বারবার ধ্বংস করে ফেলে তা বিজ্ঞানের আলোকে দেখিয়েছে ১৮৪৮ সালে লেখা মার্কস-এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো। আজ সে সংকট এতটাই তীব্র যে এই বাজার নিয়ে কাড়াকাড়ি, অপরের বাজার ধ্বংস করতে গিয়ে গোটা উৎপাদনে নতুন বিশৃঙ্খলা আনা, এর থেকে এক মুহূর্তের জন্য বেরোতে পারছে না পুঁজিবাদী বাজারের কর্ণধাররা। জনসাধারণের প্রকৃত প্রয়োজন মেটানোর মতো উৎপাদন নিয়ে তাদের কোনও উৎসাহ আজ নেই। কারণ জনগণের কেনার ক্ষমতাই নেই। তাই জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গড়া কোষাগার থেকে খরচ করে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েই আজ কলকারখানা চালু রাখার পথ নিতে হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি এই কাজের এজেন্সি নিয়ে ‘আত্মনির্ভরতা’র ঢাক বাজিয়েছেন। ওই তথাকথিত আত্মনির্ভরতায় নির্ভর করলে সাধারণ মানুষের চরম বিপদ হবে। ভুলে গেলে চলবে না, এই করোনা মহামারির মধ্যে চীন-ভারতের যে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে গলাবাজি চলছে তার সুযোগ নিয়েই ভারত সরকার মহামারি প্রতিরোধের কাজে অর্থাভাব না মিটিয়ে যুদ্ধাস্তে্রর পিছনে টাকা ঢালতে পারছে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কি লড়াই-খ্যাপা অথচ যুদ্ধে পঙ্গু একটা দেশ হবে?
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে রেকর্ড করে ফেলেছেন সবচেয়ে লম্বা ভাষণ দিয়ে। গলায় আবেগ ঢেলে তিনি যখন বলছেন, ‘কোনও দেশের বৈভব, উন্নতি প্রগতি নির্ভর করে তার কর্মশক্তির উপরে’– মনে হতে পারে এই বোধহয় তিনি দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করা ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কিছু বলে উঠবেন। কী করে এদের সৃষ্ট বৈভব গিয়ে আম্বানি-আদানিদের সিন্দুকে ঢুকে পড়ে, তার পর্দা ফাঁস করে দেবেন। কিন্তু কোথায় কী! অনেক কথার ফুলঝুরির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেল শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ মানুষের জীবনের আসল কথাগুলি।
প্রধানমন্ত্রী বলতে চাননি, কিন্তু আসল কথাগুলি বুঝে নিতে হবে দেশের খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষকেই। অগণিত শহিদের আত্মবলিদানের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা আটকে পড়ল মুষ্টিমেয় ধনকুবেরের সিন্দুকে। এ তো নিয়তির বিধান নয়। দেশের মানুষের রক্তঝরানো এই অর্জনকে কুক্ষিগত করেছে দেশের পুঁজিপতি শ্রেণি। তাদের স্বার্থে পরিচালিত ভারত আজ তাই অপুষ্ট শিশুর সংখ্যায় দুর্ভিক্ষপীড়িত আফ্রিকার দেশগুলিকে ছুঁয়ে ফেলে প্রায়। নারীপাচারে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যায় ভারত। বেকারত্ব, অনাহার-অর্ধাহার আজ তার নিত্যসঙ্গী। খেটে খাওয়া মানুষের বদলে পুঁজিপতি শ্রেণির হাতে ক্ষমতা গেলে এমনটাই যে হবে তা ইতিহাস, বিজ্ঞান নির্ধারিত পথের সন্ধান করতে গিয়ে বুঝেছিলেন ভগৎ সিং, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মহান বিপ্লবীরা। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে স্বাধীনতার সৈনিকদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কী করা দরকার তার পথনির্দেশ রেখে গেছেন বিশিষ্ট মার্কসবাদী দার্শনিক শিবদাস ঘোষ। এই পথে সমাজ বদলের সুনির্দিষ্ট ধারায় অগ্রসর হওয়াটাই আজ পথ। না হলে ভোটের বাক্সের খেলায় একটার পর একটা দল গদিতে আসবে, প্রধানমন্ত্রীর নাম, ঝাণ্ডার রঙ বদলাবে মানুষের দিন বদলাবে না। এমন করেই অসার কথার ফুলঝুরিতে ঢেকে যাবে মানুষের আর্তনাদ আর নতুন সমাজের জন্য শহিদদের আকুতি।