২১ জানুয়ারি এস ইউ সি আই (সি)-র ডাকা মহামিছিলে গিয়েছিলাম, শুধুমাত্র একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেই নয়, ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবেও। আজ প্রাণভরে চাক্ষুষ করেছি যৌবনের জোয়ার, তার সঙ্গে সব বয়সের, সব স্তরের মানুষের হকের লড়াই লড়ে নেওয়ার জেদ। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শোষণ-পীড়নে জর্জরিত আম জনতার পিঠ যখন দেওয়ালে ঠেকে গেছে, এ মিছিল দেখিয়ে দিল সমাজের শিরদাঁড়াটা এখনও পুরোপুরি বিকিয়ে যায়নি। সম্মিলিত স্বরে স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে যখন হাজার হাজার মুষ্টিবদ্ধ হাত ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে আকাশের দিকে গর্জে উঠছিল, তখন একটা অদ্ভুত উদ্দীপনা অনুভব করছিলাম। যে বয়সে আমি মিছিল-মিটিংয়ের কিছুই বুঝতাম না, দেখলাম সেই বয়সের স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট ভাই-বোনেরা অনাবিল উৎসাহে দাবি তুলছে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’। কচি গলার স্বরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের দাবি স্বপ্ন দেখায় বই কি!
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে কিছু দৃশ্য মনে দাগ কেটে গেল। একজন অত্যন্ত বয়স্ক মানুষ– ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারেন না, একটা ময়লা ফতুয়া, হাঁটু অবধি ধুতি– কিন্তু চোখ দুটোর অসম্ভব উজ্জ্বলতা চোখে পড়ার মতো। ভলান্টিয়ার হিসাবে মিছিলে দলের ব্যানার এবং দাবি-ব্যানার দেওয়া কাজ ছিল আমার। উনি নিজেই এগিয়ে এসে বললেন, ‘আমায় একটা লাল ফ্ল্যাগ দাও তোক!’ ওঁর শারীরিক অবস্থা দেখে আমি ইতস্তত করায় জোর দিয়ে বললেন ‘অত ভেবো না। এই ঝান্ডাটাই আমি নেব। নিতে পারবই’। অদ্ভুত বিস্ময় বুকে নিয়ে ফ্ল্যাগটা দিলাম ওঁর হাতে। মনে হল এই মানুষটাকে না দেখলে অনেক কিছু শেখা, বোঝা বাকি থেকে যেত। একটা আদর্শের প্রতি, সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ একটা দলের প্রতি কতটা ভালোবাসা, কতটা আশা, কতটা স্বপ্নে বুক বেঁধে মানুষ এতদূর আসতে পারে, হাঁটতে পারে মিছিলের সাথে সাথে–শুধুমাত্র একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে!
যতদূর চোখ যায় শুধু রক্তপতাকা আর হাজার হাজার মানুষ– একই সঙ্গে সমস্বরে দাবি তুলছেন ন্যায্য মজুরি, সমস্ত বেকারের চাকরি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে। মিছিলে হাঁটছিলেন যাঁরা তাঁদের দেখে, বয়স্কদের দেখেও এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি এতটা পথ হেঁটে তাঁরা ক্লান্ত। বরং চোখেমুখে তাঁদের একটা অদ্ভুত প্রশান্তি। এই প্রশান্তি, এই উজ্জ্বলতা সংগ্রামী দলটিকে বড় হতে দেখার, নিজের সংগ্রামকে সফল হতে দেখার আনন্দে।