Breaking News

শুধু পঞ্চম ও অষ্টম নয়, প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল চালু করতে হবে

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছে।২০০৯ সালে ‘শিক্ষার অধিকার আইন’ দ্বারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কাউকে ফেল না করানোর প্রথা চালু করা হয়। তাতে পাশ করার অধিকার পেয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা, কিন্তু হারিয়ে গিয়েছিল তাদের শেখার অধিকার। সেই থেকে কার্যত কিছু না শিখিয়েই লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ঠেলে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর বিষময় ফল ভোগ করছে দেশের লক্ষ লক্ষ গরিব, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। নবম শ্রেণির থেকে ড্রপআউট বাড়ছে ভয়াবহ হারে। এই সর্বনাশা প্রথার বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠন হিসেবে একমাত্র এআইডিএসও, রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র এস ইউ সি আই(কমিউনিস্ট), তেমনই শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাপ্রেমীদের একমাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে এসেছে। সেই অর্থে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরানোর আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ জয় অর্জিত হল।

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরানোর ক্ষেত্রেও টালবাহানা কম হয়নি। শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ চালু হওয়ার পর পরই দেখা যায় পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষকের অভাব সহ পরিকাঠামোহীন স্কুল ব্যবস্থায় সরকারের সাধের ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা আগে যতটুকু শিখতে পারছিল, তা হারিয়ে গিয়ে, নামে ‘অষ্টম শ্রেণি পাশ’ হয়েও তারা প্রায় কিছুই শিখছে না। স্বাভাবিক কারণেই পাশ-ফেল না থাকায় অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের ও কেন্দ্রীয় সরকারের নানা সমীক্ষা রিপোর্টে পাশ-ফেল লোপের ভয়াবহ পরিণতি জনসমক্ষে চলে আসছে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতায় বিজেপি আসে। জনমত এবং আন্দোলনের চাপে তারা রাজ্যগুলির মতামত জানতে চায়। সঙ্গে সঙ্গে ২৬টি রাজ্য পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। আশ্চর্যের হলেও সত্য, এই ২৬টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছিল না। তারা মতামত জানায় আরও অনেক পরে।

অবশেষে ২০১৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এর সংশোধনী এনে কেন্দ্রীয় সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, শুধুমাত্র পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল প্রথা চালু হবে। বলা হয়, ফেল করা পড়ুয়ারা দু’মাস পর আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং তারপরও যদি তারা ফেল করে তবে তাদের পাশ করানো হবে, নাকি সেই ক্লাসেই রেখে দেওয়া হবে– সে বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলি সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ ঘুরপথে ফেলকে পাশ করানোর নীতিই বহাল রাখা হল। এই সংশোধনী আনার পাঁচ বছর পর গত ২৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার আবার গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানাল যে, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফিরছে। এতে প্রমাণ হল যে, পাঁচ বছর আগের বিজ্ঞপ্তি শুধু বিজ্ঞপ্তিই থেকে গিয়েছে– কার্যকরী হয়নি। সেদিনই রাতে শিক্ষামন্ত্রক পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়, বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের দু’মাস পর আবার পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার পরও আবার ফেল করলে তাদের সেই ক্লাসেই রেখে দেওয়া হবে। তবে এই ঘোষণা শুধুমাত্র নবোদয় বিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। রাজ্যগুলি কী করবে সেটা তাদের ব্যাপার।

এই রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আচরণ আরও অদ্ভুত। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানালেন– মুখ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালেই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে মূল্যায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ঘটনা হল– ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে প্রতিটি স্কুলকে ছাত্রভর্তির পর নাম তুলতে হয় এবং প্রতি বছর সেই নামগুলি পরের ক্লাসে চলে যায়। ফলে মুখ্যমন্ত্রী যা-ই অন্তর্ভুক্ত করুন না কেন, ব্রাত্যবাবুর শিক্ষাদপ্তরের অধীন ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল তা জানতেই পারেনি এবং এখন বোঝা যাচ্ছে, তা যে পারেনি সেটাও ব্রাত্যবাবু জানতেন না! তাই সংশোধনী আইন থাকা সত্ত্বেও এ রাজ্যে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু হয়নি।

যাই হোক, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরাটা যেমন আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়, এই জয়কে সম্পূর্ণ করতে প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল চালুর দাবি আদায় করে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হবে। তাই প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল চালুর দাবি এবং তার পরিপূরক উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও স্কুলশিক্ষার উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবিতে অভিভাবক-ছাত্র-শিক্ষক সহ সকলকে নিয়ে দাবি আদায়ের আন্দোলনে সামিল হতে হবে। ২১ জানুয়ারি জনজীবনের বিভিন্ন দাবিতে এস ইউ সি আই (সি)-র ডাকা মহামিছিলেও দাবি উঠবে– প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ-ফেল চালু করতে হবে।