Breaking News

শিশু-উন্নয়ন নিয়ে সরকার আদৌ ভাবে কি

কেন্দ্র ও রাজ্য দুটি বাজেটেই শিশু খাতে বরাদ্দের পরিমাণ দেখেই সরকারগুলির দায়িত্ববোধ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হয়। প্রধানমন্ত্রী পোষণ প্রকল্প অর্থাৎ শিশুপুষ্টি প্রকল্পে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে গত বারের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র ০.২৬ শতাংশ। আর রাজ্যে শিশু ও নারী কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কার্যত পুরোটাই গিয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে।

সর্বাধিক অপুষ্ট শিশুর সংখ্যায় ভারত বিশ্বে অন্যতম। তার উপর হয়ে চলেছে চড়া হারে মূল্যবৃদ্ধি। সেখানে এই নামমাত্র বরাদ্দ মূল্যবৃদ্ধির সাপেক্ষে বাস্তবে বরাদ্দ হ্রাস। এই দিয়ে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি বা সুরক্ষার ব্যবস্থা করা কি সম্ভব? এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে শিশুদের জন্য মোট বরাদ্দ বেড়েছে আগের বারের তুলনায় মাত্র ৫.৬৫ শতাংশ।

শিশু-পুষ্টির জন্য মায়েদের পুষ্টিও জরুরি। কিন্তু শিশু-মায়েদের পুষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প পোষণ-২ এবং সক্ষম অঙ্গনওয়াড়িতে বরাদ্দ বেড়েছে যৎসামান্য– গত অর্থবর্ষে যা ছিল ২১ হাজার ২০০ কোটি, এই অর্থবর্ষে তা হয়েছে ২১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিলের বরাদ্দ মাথাপিছু ৬ টাকা ১৯ পয়সা ধার্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে কেন্দ্রের ভাগ সাড়ে পাঁচ টাকার মতো। বাকিটা রাজ্যের। এই নামমাত্র টাকায় শিশু-কিশোরদের কী পুষ্টি হবে? এটা শিশুদের প্রতি কোন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন? বিকশিত ভারতে শিশুরা কি তবে অপুষ্ট হয়েই থাকবে? শিক্ষা-স্বাস্থ্যহীন ও অনুন্নয়নের পরিবেশেই কি তবে বড় হবে দেশের আগামী প্রজন্ম?

দেখা যাচ্ছে, দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক শিশুদের জন্য সরকারি কর্তারা নামমাত্র বরাদ্দ করেই দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা খাতে বিপুল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর রাজ্য বাজেটে তো ভোটের দিকে তাকিয়ে জনমোহিনী প্রকল্পের জন্য বরাদ্দে উদারহস্ত সরকার।

যেখানে সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, দেশে সদ্যোজাত থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের ৩৭ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটির মতো শিশু খর্বকায় এবং ১৭ শতাংশ বা ২ কোটি ৭৯ লক্ষের ওজন কম, কম বয়সী মহিলাদের প্রায় ৬০ শতাংশ রক্তাল্পতায় ভুগছেন, সেখানে তাদের জন্য বাজেট বরাদ্দের এত দুর্দশা কেন?

পুঁজিবাদী ভারত রাষ্ট্রে দেশের নীতি-নির্ধারণ থেকে বাজেটে বরাদ্দ– সব কিছুই নির্ধারিত হয় সুনির্দিষ্ট শ্রেণি অর্থাৎ মালিক শ্রেণির স্বার্থে। সেজন্য মহিলা-শিশু সহ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। দায়িত্ববোধ রয়েছে শুধু বন্ধু শিল্পপতিদের মুনাফা-ভাণ্ডার আরও বাড়িয়ে তোলায়! সরকারে আসীন দলগুলি আসলে কাদের প্রতিনিধি, তারা কোন শ্রেণির স্বার্থরক্ষা করছে, তা এতেই পরিষ্কার।