Breaking News

শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সর্বভারতীয় শিবির জয়নগরে

এ দেশে বিপ্লবী সংগ্রাম ও গণআন্দোলনের পরিপূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তৈরি হয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া বা পিসিএআই। ইতিমধ্যেই দেশের নানা প্রান্তে এই সংগঠনের উদ্যোগে নাটক, গান, চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকারদের বিভিন্ন গোষ্ঠী গড়ে উঠছে। দেশের নানা প্রান্তে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট এই শিল্পীদের মধ্যে আদানপ্রদান, মতবিনিময়, এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগ্রহণের প্রয়োজনে পিসিএআই-এর উদ্যোগে ১৫-১৭ মার্চ দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগর-মজিলপুর শহরে অনুষ্ঠিত হল এক সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক শিবির। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় দুশো জন শিল্পী এই শিবিরে অংশগ্রহণ করেন। শিবিরের শুরুতে বক্তব্য রাখেন পিসিএআই-এর আহ্বায়ক প্রতাপ সামল ও এসইউসিআই(সি)-র পলিটবুরো সদস্য সৌমেন বসু। সঙ্গীত, নাটক, চিত্রশিল্প ও চলচ্চিত্র নির্মাণ– শিল্পকলার এই চারটি ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে চারটি আলাদা আলাদা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রত্যেক দিন ভোরে উঠে এক ঘণ্টা ধরে গায়করা সুরসাধনা করেছেন, নাট্যশিল্পীরা নাটকের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক ব্যায়াম করেছেন, শিল্পীরা এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে ছবির বিষয়বস্তু সংগ্রহ করেছেন, ফিল্ম নির্মাতারা ছবি তুলেছেন। এ ছাড়া মানুষের জীবনসংগ্রামকে উপজীব্য করে উচ্চমানের শিল্প কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, মানুষের মনের সংবেদনশীলতা কীভাবে উদ্দীপিত করা যায়, উন্নত রুচিবোধের কীভাবে জন্ম দেওয়া যায়– এ সব বিষয়েও আলাপ আলোচনা মতবিনিময় হয়েছে। কর্মশালার শেষ অধিবেশনে সর্বহারার মহান নেতা পথপ্রদর্শক কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষার আলোকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিভিন্ন দিক ও বিপ্লবী সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিজেদের জীবনবোধ গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের পলিটবুরো সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য।

১৭ মার্চ প্রকাশ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় জয়নগর শিবনাথ শাস্ত্রী সদন বা টাউন হলে। সকালে হলের প্রাঙ্গণে এক শিল্পপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কেরালা থেকে আগত সুধীর কুমার। তারপর প্রতাপ সামল ভারতীয় নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, জয়নগরের কৃতী সন্তান শিবনাথ শাস্ত্রীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন। শিবিরে যোগদানকারী শিল্পীদের উদ্দেশে এস ইউ সি আই (সি)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের লিখিত বার্তা পড়ে শোনান তিনি।

এরপর প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী গণেশ হালুইয়ের অত্যন্ত মূল্যবান একটি ভিডিও বার্তা উপস্থিত দর্শকবৃন্দের কাছে পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে ওড়িশা, তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, আসাম, কেরালার শিল্পীরা নাটক, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রঞ্জন প্রসাদ গান সহযোগে লোকসঙ্গীত বিষয়ে আলোচনা রাখেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ টিমের সদস্যরা এই কর্মশালার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করেন।

শিবির শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিপ্লবী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত শিল্পীরা গভীর আবেগ ও উদ্দীপনার সাথে এ দেশের বুকে উন্নত রুচি-সংস্কৃতির ভিত্তিতে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠছে তাকে আরও উন্নততর, শক্তিশালী এবং ব্যাপকতর রূপ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান।