শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা ছাত্রজীবনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল — এ আই ডি এস ও

গড়িয়া

উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা বিষয়ে

শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা ছাত্রজীবনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল

এআইডিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড মণিশঙ্কর পট্টনায়ক ২৯ জুন এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে সর্বশেষ যে ঘোষণা করছেন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের যে নির্দেশিকা এসেছে তাতে সমস্যার সমাধান তো দূরে থাক, নতুন করে কিছু সমস্যার সম্ভাবনা তৈরি হল৷ অতিমারির প্রকোপে ক্লাসরুম পরীক্ষা নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ৷ এ অবস্থায় সরকার উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষাগুলির মধ্যে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরের উপর ভিত্তি করে সামগ্র্রিক মূল্যায়ন চাইছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অসন্তুষ্ট ছাত্রছাত্রীদের লিখিত পরীক্ষার পথ খোলা রেখে বিষয়টিতে ইতি টানতে চেয়েছে৷ যদিও বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা বিভাগের অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি থাকায় প্রস্তাবিত পদ্ধতির  মুল্যায়নে একটি বিশেষ বিষয়ে একজনের বিশেষ পারদর্শিতার মূল্যায়ন যেমন সম্ভব হবে না, নির্ধারিত ফলাফলের ভিত্তিতে স্নাতক স্তরে উক্ত বিশেষ বিষয়ে ভর্তিতে তাদের যোগ্যতা বিচারের মাপকাঠিও বিজ্ঞানসম্মত হবে না৷ এ বিষয়ে ঠিক কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, তার কোনও সঠিক পরিকল্পনা নেই৷ স্বভাবতই এই নির্দেশিকা ছাত্রদের ভবিষ্যত শিক্ষাজীবন নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করল৷

এই পদ্ধতির মূল্যায়নে ফল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছাত্রছাত্রীদের যেহেতু পরবর্তীতে একটি লিখিত পরীক্ষার সুযোগ রাখা হয়েছে, একটা বড় অংশের ছাত্রছাত্রীই স্বাভাবিকভাবেই পরে পরীক্ষা দিতে চাইবে৷ অথচ অস্থায়ী হলেও ফলাফলের একবার নিষ্পত্তির পরে পরবর্তীতে এই ঐচ্ছিক পরীক্ষা নিয়ে সরকার কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে, তৎপর হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে৷

আরও উদ্বেগের, অতিমারিতে সরকার পরীক্ষা বন্ধ করলেও এরই মাঝে পরবর্তী সেশন শুরুর মনোভাব নিয়ে চলছে৷ এটা বাস্তবায়িত হলে নিশ্চিতভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া ও ক্লাস হবে পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর৷ তাতে ছাত্রদের প্রধানতম অংশ সরাসরি বঞ্চিত হবে৷ তাছাড়া অসন্তুষ্ট ছাত্রছাত্রীদের লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের আগে সেশন শুরুর জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে তা নিয়ে নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক গোলমাল ও দুর্নীতি হবে৷ বিপুল অংশের ছাত্রছাত্রী যোগ্যতার ভিত্তিতে পছন্দের বিষয় ও প্রতিষ্ঠানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন৷ সামগ্রিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা আরও বাড়বে৷

কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়েও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের যে নতুন অ্যাডভাইসরি, তা শিক্ষাস্বার্থকে ব্যাপকভাবে খর্ব করছে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্তর্বর্তী সেমেস্টারে ছাত্রদের সিলেবাস ঘাটতি পূরণ করে পরীক্ষার সুযোগ আছে৷ চূড়ান্ত সেমেস্টারের মতো দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার অন্য কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই৷ তা সত্ত্বেও পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী সেমেস্টার তুলে দেওয়ার সরকারি প্রস্তাব অযৌক্তিক৷ পাশাপাশি চূড়ান্ত সেমেস্টারের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষা বা অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে সম্পন্ন করার বদলে ডিস্টেন্ট মোড হোম অ্যাসাইনমেন্ট, প্যানেল ভাইভার মতো একাধিক বিকল্প তুলে ধরলেও সরকার তা গ্র্র্রাহ্য করছে না৷ এতে বোঝা যায় সরকারের এই অ্যাডভাইসরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ছাত্র সমাজের ডপর জাতীয় শিক্ষানীতি’১৯ চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল৷ যা আসলে প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি শিক্ষার পরিবর্তে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও বেসরকারি শিক্ষাকে সরাসরি উৎসাহিত করা৷

আশ্চর্যের বিষয়, বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও, অন্যান্য অনেক বিষয়েই সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করলেও, লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর জীবনের সাথে যুক্ত এই বিষয় নিয়ে তারা ছাত্র সংগঠন–শিক্ষক সংগঠন এবং এই পরিস্থিতির বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণে উপযুক্ত অতিমারি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কোনও কমিটি গঠন করে গণতান্ত্রিক উপায়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না৷ তাদের একতরফা ঘোষণায় ছাত্রসমাজ দিশাহারা হয়ে পড়ছে৷

এই অবস্থায় আমরা সুনির্দিষ্টভাবে দাবি করছি, সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার পরই কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্ত ফি মকুব করে নতুন সেশনের ভর্তি শুরু করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে সামঞ্জস্য রেখে সেশন পিছিয়ে দিতে হবে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছাত্রদের পঠন পাঠনে ঘাটতি পূরণ করে অন্তর্বর্তী সেমেস্টারের পরীক্ষা নিতে হবে৷