শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রকে রাজনীতি মুক্ত করবই৷ সবটা একসঙ্গে হয়তো করা যাবে না৷ ধাপে ধাপে করা হবে’৷ বক্তব্য থেকে বুঝতে পারলাম না, আসলে কী চাইছেন মাননীয় মন্ত্রী মহাশয়৷ শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করতে চাইছেন সেই ব্যক্তি যিনি একজন বহুল পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তি তিনি আবার রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও৷ সরকারও আবার একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত৷ রাজনীতি মুক্ত করার মানে কি এই, তিনি যেহেতু রাজনৈতিক ব্যক্তি তাই শিক্ষা নিয়ে আর মাথা ঘামাবেন না? সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রকও কি তুলে দেওয়া হবে? শিক্ষার ব্যাপারে যাবতীয় বিষয় দেখভাল অথবা কার্যকর করবে রাজনীতিমুক্ত ব্যক্তিবর্গ? তাঁরাও যে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তাই বা বিচার করবে কে?
এখানে আসলে পার্থ বাবু বলতে চাইছেন, এ রাজ্যে শিক্ষার ব্যাপারে যা কিছু করবে তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রক ৷ এখানে অন্য কোনও রাজনৈতিক শক্তি যেন হস্তক্ষেপ না করে, বিরোধিতা না করে৷ তাঁরা যা ঠিক মনে করবেন তাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসাবে কেউ যেন না দেখেন৷ তার বিরোধিতা না করেন৷ তার বিরোধিতার অর্থ হবে শিক্ষায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ৷ পার্থবাবুরা কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তাদের চিন্তার অনুকূলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল তুলে দিয়ে বুনিয়াদি শিক্ষাকে ধ্বংস করবেন৷ সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা যে কোনও সরকারের শক্তির উৎস এই কথাটি হৃদয়ঙ্গম করতে এঁরা কেউ ভুল করেননি৷ তার বিরুদ্ধে এসইউসিআই(সি) আন্দোলনে নামে৷ যেখানে দাবি তোলা হল প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালু করে গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েদেরও যথার্থ শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে গেল শিক্ষায় রাজনীতির অনুপ্রবেশ৷ এমন অনুপ্রবেশ তো বাঞ্ছনীয়৷ লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার বিষয় যুক্ত হয়ে রয়েছে এই অনুপ্রবেশে৷ সে কারণে দাবি হোক, শিক্ষায় আসুক যথার্থ রাজনীতি, রাজনীতির নামে দুর্নীতি বা পুঁজিপতি তোষণনীতি যেন শিক্ষাক্ষেত্রে না আসে তা দেখতে হবে৷
পার্থবাবু যদি রাজনীতিকে ক্ষতিকর নোংরা জিনিস ভাবেন, তা হলে কি তাঁর এটাই বক্তব্য যে, আমি রাজনীতি করব, এই নোংরা আবহে থাকব, নিজের সুযোগ–সুবিধা বুঝে নেব, কিন্তু শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার মধ্য দিয়ে কলুষতামুক্ত করব? এ তো দেখি এক নির্ভেজাল দ্বিচারিতা৷
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়গপুর
(৭০ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা ২৭ জুলাই, ২০১৮)