শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৬ জুন বিধানসভায় রাজ্যের কয়েকটি ছাত্র সংগঠনকে আলোচনার জন্য বৈঠকে ডাকেন৷ এআইডিএসও’র পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৌরভ ঘোষ ও রাজ্য সভাপতি কমরেড মৃদুল সরকার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷ সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষিত এজেন্ডা অনুযায়ী সিবিসিএস–সেমেস্টার, ছাত্র কাউন্সিল, অন লাইন অ্যাডমিশন নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ডিএসও’র পক্ষ থেকে আরও দুটি বিষয়– প্রথম শ্রেণি থেকে পাশফেল চালু ও মেডিকেলে ভর্তিতে সরকারের অন্যায় নিয়ম নিয়ে বক্তব্য রাখা হয়৷ এ প্রসঙ্গে রাজ্য সম্পাদক কমরেড সৌরভ ঘোষ জানান,
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় একটি স্মারকলিপি তাঁকে দেওয়া হয়েছে৷ সিবিসিএস–সেমেস্টার চালুর বিরোধিতা করে আমরা বলেছি, এই পদ্ধতি ছাত্রদের বিষয়ভিত্তিক সুসংবদ্ধ জ্ঞানলাভের পথে বাধা, যে কোনও উপায়ে কেবল ক্রেডিট পাওয়ার দৌড়ে ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত করে নম্বর দিয়ে শিক্ষার মর্মবস্তু ধবংস করার পরিকল্পনা এটি৷ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছেমতো বিষয়ে ভর্তি হয়ে ক্রেডিট সংগ্রহের তথাকথিত স্বাধীনতার আড়ালে বাড়বে ফি–এর বোঝা৷ প্রতি সেমেস্টারে ভর্তি ফি, পরীক্ষা ফি লাগবে বিপুল হারে৷ কমবে শিক্ষা দিবস৷ গরিব সাধারণ বাড়ির ছাত্রছাত্রীরা আরও বঞ্চিত হবে৷ ধবংস হবে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক৷ এই নিয়মে পড়াশুনার পরিবেশ ও পরিকাঠামো রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের কোনও দায় থাকবে না, যা চূড়ান্ত ছাত্রস্বার্থ বিরোধী৷
কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন হয়ে যাওয়ায় বহু ছাত্রছাত্রীকে দূর দূরান্তের সাইবার কাফের উপর নির্ভর করতে হয়৷ এই সুযোগে কাফেগুলো এক একটি ফর্ম ফিলাপে অন্যায়ভাবে চড়া টাকা আদায় করে৷ শিক্ষামন্ত্রীকে আমরা অনলাইনের পাশাপাশি সমস্ত কলেজে অফলাইন ভর্তি পদ্ধতি চালু রাখার দাবি জানিয়েছি৷
উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভর্তিতে জেলায় জেলায় স্কুলগুলো পরিকাঠামো উন্নতি, শিক্ষক নিয়োগের নামে হাজার হাজার টাকা ফি নিচ্ছে৷ অথচ নিয়োগ ও পরিকাঠামোর বিষয়টি দেখবার সম্পুর্ণ দায়িত্ব সরকারের৷ উপরন্তু মাধ্যমিক স্তরে ২৪০ টাকা ভর্তি ফি নেওয়ার নির্দিষ্ট সার্কুলার থাকলেও এক্ষেত্রে নেই, যার সুযোগ নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ আমরা অবিলম্বে স্কুলের নিয়োগ ও উন্নয়ন সহ সার্কুলার দিয়ে সরকারি নিয়মে ভর্তি সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি৷
কলেজ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের বহু অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় সরকারের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ আমাদের উদ্বিগ্ন করছে৷ ক্যাম্পাসগুলোয় শাসক দলের ছাত্র সংগঠন দুর্নীতি, নোংরামি, তোলাবাজিতে ডুবে গিয়ে বিরোধিতা বন্ধ করতে সন্ত্রাস কায়েম করছে, গোষ্ঠী কোন্দলে খুন জখম করছে৷ সরকার এদের নিয়ন্ত্রণ না করে সন্ত্রাস বন্ধের নামে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বকারী মনোনীত ছাত্র কাউন্সিল চাপিয়ে দিচ্ছে৷ এর তীব্র বিরোধিতা করে আগের মতো নির্বাচিত ছাত্র সংসদের দাবি করেছি৷ এই সংসদ হবে একান্তভাবে ছাত্রদের যা প্রতিবছর নির্বাচিত হবে৷
বহু আন্দোলনের চাপে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পাশ–ফেল চালুর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও তা কার্যকর করেননি৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সারা দেশে এই আইন সংশোধন করে পাশ–ফেল ফিরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছেন৷ কোন শ্রেণি থেকে তা কার্যকর হবে সেটা নির্ধারণের ক্ষমতা রাজ্যের হাতেই থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতিশ্রুতিমতো চলতি শিক্ষাবর্ষেই প্রথম শ্রেণি থেকে যাতে পাশ–ফেল চালু হয় সে বিষয়ে রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে সক্রিয় হতে আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি৷
নিট (NEET) উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের রাজ্য মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তির জন্য আবেদনে ভেরিফিকেশন ফি এর নামে প্রত্যেককে ২০০০ টাকা করে জমা দেওয়ার নিয়ম করেছে সরকার৷ অথচ এখনও রাজ্যের কোনও র্যাঙ্ক লিস্ট প্রকাশ হয়নি৷ সুতরাং লিস্টের আগেই টাকা নেওয়ার অন্যায় ও হীন কাজের বিরোধিতা করে এই নিয়ম প্রত্যাহারের দাবি করেছে ডিএসও৷ উপরোক্ত বিষয়গুলি সসচিব শিক্ষামন্ত্রী শুনেছেন ও যৌক্তিকতা স্বীকার করে দ্রুত কার্যকর করার আশ্বাস দিয়েছেন৷ যদিও আমরা জানি, জনআন্দোলনের চাপে যুক্তি অনেক সরকার মেনে নিলেও আন্দোলন থিতিয়ে গেলে তা কার্যকর করতে টালবাহানা করে৷ এক্ষেত্রেও তা হতে পারে৷ তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে৷ ছাত্র–শিক্ষক–শিক্ষাপ্রেমী আপামর জনসাধারণকে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছে ডি এস ও৷
(৭০ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা ১৫জুন, ২০১৮)