১৯ ডিসেম্বর কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন। এই নর্বিাচনে এসইউসিআই(সি) ২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। পুরসভা নির্বাচনের ঘোষণা হতেই আবারও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভাসছে কলকাতা। অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই শহর ভাসছিল বৃষ্টির জমা জলে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মেট্রোপলিটন শহরের বুকে খোলা ম্যানহোলে পড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়। কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে কর্মীদের মৃত্যু হচ্ছে বারবার। বেশ কয়েকটি বরোয় আজও খোলা নর্দমার পাঁক, পুতিগন্ধময় খালের দুর্গন্ধ সহ্য করেই জীবন অতিবাহিত হয় নাগরিকদের। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রতিটি ওয়ার্ডেই পানীয় জলের সমস্যা লেগেই আছে। বেশ কিছু ওয়ার্ডে পানীয় জল কিনে খাওয়াটাই নাগরিকদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কারণ, পুরসভার সরবরাহ করা জল থেকে আন্ত্রিক, জন্ডিস ইত্যাদি জলবাহিত রোগ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। স্বাধীনতার আগে পলতা এবং টালা জলপ্রকল্প তৈরি করে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার যে পরিমাণ পানীয় জল উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছিল তারপর কংগ্রেস, সিপিএম এবং বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা তার সাথে যোগ করেছে খুবই সামান্য পরিমাণ। দূষিত বাতাস, গাড়ির ধোঁয়া, ধুলোয় বাড়ছে নানা রোগের আক্রমণ।
জঞ্জালের ভ্যাট উপচে দুর্গন্ধ ছাড়ানো, আগের মতোই জঞ্জালের গাড়ি থেকে আবর্জনা উড়ে পথচারির গায়ে পড়া যেন এ শহরের ভবিতব্য! প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ। রোগ প্রতিরোধের নামে পুর বাজেটের যত অংশ খরচ হয় প্রচারে, তার থেকে অনেক কম হয় বাস্তব প্রতিরোধ ব্যবস্থায়। যক্ষ্মা রোগ কলকাতার বুকে নতুন করে জাঁকিয়ে বসছে, অথচ মেয়রস টিবি ক্লিনিক থেকে শুরু করে পুর স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলিতে ক্রমাগত কমছে পরিষেবা। কলকাতাকে লন্ডন করার কথা বলে বসেছিল ত্রিফলা আলো। তার পোস্টে এখন কোনও আলো নেই। বরং খোলা বিদ্যুৎবাহী তার ঝুলে থাকায় ত্রিফলা হয়ে উঠেছে এখন নাগরিকদের মৃত্যুদূত।
কলকাতা পুরসভায় জন্ম-মৃত্যুর সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি যে কাজই হোক না কেন, নাগরিকরা জানেন দালাল না ধরলে কাজ হবে না। পুরসভার হেড অফিসেই ভোর পাঁচটা থেকে জন্ম-মৃত্যুর সার্টিফিকেটের জন্য লাইন দিতে হয় মানুষকে। বাড়ির সামান্য সারাই, ড্রেন পরিষ্কার কিংবা জলের সামান্য সমস্যা মেটাতেও দিতে হবে ‘তোলা’। পুরসভার বিশাল ভবনের বহু ঘরই শূন্য, বরো কিংবা ওয়ার্ড অফিসগুলিতেও কাজের লোক নেই। ২৮ হাজারেরও বেশি কর্মীর পদ ফাঁকা। কোনও নিয়োগ হচ্ছে না। পরিষেবা দেবে কার? অথচ এই কলকাতা শহরই ভুগছে ভয়াবহ বেকারত্বের চাপে। সম্প্রতি নীতি আয়োগের সমীক্ষা জানাচ্ছে দেশের ৫৬টা মেট্রেপলিটন শহরের মধ্যে কর্মসংস্থানে কলকাতার স্থান হয়েছে সবচেয়ে পিছনে। এই কলকাতা পুরসভায় স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় থেকেছে কংগ্রেস, তারপর দীর্ঘ সময় সিপিএম ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ কংগ্রেসের মতোই চালিয়ে গেছে। এসেছে তৃণমূল। শাসনের তরিকা দেখলে এদের কোনও পক্ষকেই আলাদা করা মুশকিল। নাগরিকদের উপর জলকরের বোঝা চাপানো, সম্পত্তি কর বাড়িয়ে সাধারণ নাগরিকদের পকেট কাটার কাজটা চালিয়েছে সিপিএম এবং তৃণমূল উভয়েই। সিপিএমই প্রমোটার রাজ কায়েম করে গরিব এবং মধ্যবিত্ত মানুষকে কলকাতা থেকে উচ্ছেদ করা এবং শহরকে ধনীদের কবলে তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। তৃণমূল এই কাজকে আরও বহুগুণ বর্ধিত করেছে। বস্তি উন্নয়নের কথা অনেকদিন শোনা গেলেও আজও এই কলকাতা শহরে অসংখ্য মানুষ ঝুপড়ি ঘরেই কোনও রকমে মাথা গুঁজে আছেন। বছর বছর আগুন লেগে জীবন ও যথাসর্বস্ব খোয়ানো যেন তাদের ললাটলিখন! এই ‘এ-ওয়ান’ শহর কলকাতায় দমকলের প্রয়োজনীয় উন্নত পরিকাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি। তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-র মতো দলগুলি আবারও জনগণের ত্রাতা সাজতে চাইছে। অথচ এরা সকলেই কোনও না কোনও সময়, হয় একা না হলে অন্যদের সাথে মিলে কলকাতা পুরসভার ক্ষমতা ভোগ করেছে। আর সমস্যা ক্রমাগত বাড়িয়ে গেছে।
সকলেই জানেন, বিজেপিবিরোধী চ্যাম্পিয়ন সাজতে চাওয়া সিপিএম বিজেপিকে নিয়ে বোর্ড চালিয়েছে। পৌর সমস্যার সমাধান, ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু রোধ, পানীয় জল সরবরাহ ইত্যাদি দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এসইউসিআই (সি)। এই দাবিগুলি আদায় করতে, আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আসন্ন কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে এস ইউ সি আই (সি) প্রর্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক কমরেড সুব্রত গৌড়ী।