Breaking News

শহিদ বিরসা মুন্ডার সংগ্রামী স্মৃতি আজও অমলিন

১৫ নভেম্বর ছিল পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকার ও তাদের সহযোগী জমিদার, মহাজনদের বিরুদ্ধে আদিবাসী সহ ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের বিদ্রোহ উলগুলানের নেতা শহিদ বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মদিন। অল ইন্ডিয়া জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে ত্রিপুরা, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট প্রভৃতি রাজ্য সহ সারা দেশে এই দিনটি বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।

বিরসা মুন্ডার জীবন সংগ্রাম ও তার অভ্যুত্থানের পটভূমি আলোচনা করতে গিয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিসম্বর মুন্ডা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম যুগ থেকে জঙ্গলমহল, ছোটনাগপুর, সিংভূম, রাজমহল, ভাগলপুর প্রভৃতি এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা আদিবাসী ও শোষিত মানুষের বিদ্রোহের কথা তুলে ধরেন। বিদ্রোহগুলির মধ্যে জঙ্গলমহলের ১৭৬৭ থেকে ১৮০৯ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে গড়ে ওঠা চুয়াড় বিদ্রোহ, ১৮৩২-৩৩ সালে ভূমি বিদ্রোহ, কোলহানের ১৮৩৬-৩৭ সালের হো বিদ্রোহ, ১৮৩১-৩২ সালের ছোটনাগপুর জুড়ে কোল বিদ্রোহ অন্যতম। অপর দিকে রাজমহল এলাকার ১৭৭১ সালের পাহাড়িয়া বিদ্রোহ, ভাগলপুর এলাকার ১৭৮৪-৮৫ সালের তিলকা মাঝির নেতৃত্বে সান্তাল জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহ, ১৮৫৫- ৫৬ সালের দামিন-ই-কোহ (বর্তমানে সাঁওতাল পরগণা) এলাকার সাঁওতাল বিদ্রোহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সিদো-কানহুর নেতৃত্বে হাজার হাজার সাঁওতাল, অন্যান্য আদিবাসী ও গরিব শোষিত মানুষের মহাবিদ্রোহ ‘হুল’ সংঘটিত হয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে সর্দারি আন্দোলন বা মুলকুই লড়াই এবং খারোয়ার বিদ্রোহ যথাক্রমে ছোটনাগপুর এবং সান্তাল পরগণা এলাকাতে দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। সর্দারি লড়াইয়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিরসা মুন্ডার জীবনে পড়েছিল, বিরসা মুন্ডার জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। এই লড়াইয়ে প্রভাবিত হয়ে বিরসা মুন্ডা জমিদার, মহাজন, ঠিকাদার ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তাঁরই নেতৃত্বে ১৯০০ সালে ছোটনাগপুর এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ ‘উলগুলান’ সংঘটিত হয়েছিল। লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতিতে আদিবাসী ও গরিব মানুষের জমির অধিকার নিশ্চিত করতে ইংরেজ সরকার ছোটনাগপুর টেনেন্সি অ্যাক্ট ১৯০৮ সালে চালু করে। তিনি বিরসা মুন্ডার জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, শোষিত মানুষের জীবনের সাথে বিরসা মুন্ডা এমনভাবে জড়িয়েছিলেন, এই সমস্ত এলাকায় কুসংস্কারের প্রভাব থেকে শোষিত মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর প্রতি গভীর আস্থা তৈরি হয়েছিল। এই গভীর আস্থা থেকেই বিরসাকে এলাকার মানুষ তাদের ত্রাতা হিসাবে স্থান দিয়েছিল। তাই তারা বলত ‘ধারতি আবা’ বা ‘বিশ্ব পিতা’।

 তিনি বলেন, বর্তমানে জঙ্গলমহলের মানুষের উপর নানা আক্রমণ নামিয়ে আনছে কেন্দ্রীয় সরকার। বন সংরক্ষণ আইন ২০২২ এবং বন (সংরক্ষণ) সংশোধনী আইন ২০২৩ কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বর্তমানে অরণ্যের অধিকার আইন ২০০৬-কে অকার্যকর করার যে পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি করে চলেছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। নির্বিচারে জঙ্গল ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার প্রতিবাদে সচেতনতা গড়ে তোলা, গরিব শোষিত মানুষের দৈনন্দিন অভাব অনটনের বিরুদ্ধে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যেই রয়েছে বিরসা মুন্ডার জন্মদিন পালনের সার্থকতা।